Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

নজর ঘুরিয়ে দিতে আদালতে শিশুকেই দুষলেন গৃহশিক্ষিকা

লেকটাউনের শিশু নিগ্রহে অভিযুক্ত গৃহশিক্ষিকা পূজা সিংহের পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। শনিবার বিধাননগর এসিজেএম আদালতে এই নির্দেশ দেন বিচারক অপূর্বকুমার ঘোষ। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাসবিহারী এলাকা থেকে পূজাকে গ্রেফতার করে লেকটাউন থানার পুলিশ।

পূজা সিংহ।  —ফাইল চিত্র

পূজা সিংহ। —ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৪ ০২:১৮
Share: Save:

লেকটাউনের শিশু নিগ্রহে অভিযুক্ত গৃহশিক্ষিকা পূজা সিংহের পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। শনিবার বিধাননগর এসিজেএম আদালতে এই নির্দেশ দেন বিচারক অপূর্বকুমার ঘোষ।

শুক্রবার সন্ধ্যায় রাসবিহারী এলাকা থেকে পূজাকে গ্রেফতার করে লেকটাউন থানার পুলিশ। শনিবার বিধাননগর এসিজেএম আদালতে অপূর্বকুমার ঘোষের এজলাসে যখন পূজাকে তোলা হয়, তখন কোনও আইনজীবী তাঁর পক্ষে দাঁড়াতে রাজি হননি। বিধাননগর আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের আইনজীবীদের তরফ থেকে জানানো হয়, সাড়ে তিন বছরের এক শিশুকে নির্মম ভাবে মারার প্রতিবাদে তাঁরা নীতিগত ভাবে কেউ পূজার পক্ষে দাঁড়াবেন না। তখন পূজার হয়ে দাঁড়াতে বিচারকের কাছে অনুমতি চান আলিপুরের এক আইনজীবী। শেষ পর্যন্ত ডিস্ট্রিক্ট লিগাল এড সার্ভিস থেকে অভিনব মজুমদার নামে এক আইনজীবী পূজার হয়ে দাঁড়ান। এ দিন এজলাসে উপস্থিত ছিলেন পূজার শাশুড়ি রানি সিংহ ও তাঁর এক ননদ।

শনিবার সকালে পূজাকে লেকটাউন থানা থেকে বিধাননগর এসিজেএম আদালতে আনা হয়। আদালত চত্বরে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল। অপূর্বকুমার ঘোষের এজলাসে তাঁকে তোলা হয় দুপুর বারোটা নাগাদ। এজলাসে ঢোকার সময়ে পূজার মুখ ছিল ওড়না দিয়ে ঢাকা। পরে এক পুলিশকর্মী তাঁকে মুখ থেকে ওড়না সরাতে বলায় তিনি তা সরান। হলুদ ছাপা সালোয়ার ও পায়ে চপ্পল পরা পূজাকে কার্যত বিধ্বস্ত দেখাছিল। তাঁকে এজলাসে বসে বসে সমানে কাঁদতেও দেখা যায়।

পুলিশ সাত দিনের হেফাজত চাইলে আত্মপক্ষ সমর্থনে পূজার কিছু বলার আছে বলে জানান তাঁর আইনজীবী। এজলাসে পূজা দাবি করেন, সিসিটিভি ফুটেজ পুরোটা দেখানো হচ্ছে না। পূজার দাবি, ওই শিশুর দিদিকে তিনি আগে দু’বছর সুনামের সঙ্গেই পড়িয়েছিলেন। পরে শিশুটির পারিবারিক গণ্ডগোলের কারণে পড়ানো ছেড়ে দেন। চলতি মাসে পড়ানোর জন্য ওই পরিবার থেকে তাঁকে ফের ফোন করে ডাকা হয়। পূজার দাবি, প্রথমে তিনি রাজি না হলেও ওই শিশুটির মা তাঁকে অনুরোধ করে বলেন, ছেলে খুব দুষ্টু। তিনিই পারবেন শিশুটিকে সামলাতে।

পূজা জানান, প্রথম দিন থেকেই ছেলেটি খুব দুষ্টুমি করছিল। এমনকী, ঘটনার দিন অর্থাৎ ২২ তারিখ দুপুরে পূজা তাকে পড়াতে বসতেই শিশুটি তাঁর মুখে থুতু ছেটায়, খেলনা-মোবাইল ছুড়ে মারে। পূজার দাবি, রাগের চোটে শিশুটিকে মারলেও তিনি তাকে আছড়ে ফেলেননি। পূজার দাবি, পড়ানোর সময়ে দরজা বন্ধ নয়, ভেজানো ছিল। এমনকী, মারধরের পরে বেশ কিছুক্ষণ তিনি ছেলেটিকে পড়ান। একটা লেখা লিখতে দেওয়ার পরে তাকে ‘গুড’-ও দেন। পরে পূজা যখন এজলাসে দাঁড়িয়ে ওই শিশুটির পরিবারিক নানা বিষয় নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন, তখন বিচারক তাঁকে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, “আসল ঘটনায় আসুন। বলুন আপনি শিশুটিকে মারধর করেছিলেন কি না?” পূজা বলেন, “আমি এক জন ভাল শিক্ষিকা। তবে একটা ভুল করেছি। জীবনে একটা বড় শিক্ষা পেয়েছি।” পুলিশ সাত দিনের হেফাজত চাইলেও পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজত দেয় আদালত।

ওই শিশুটির তরফের আইনজীবী মহম্মদ ওয়াকার বলেন, “পূজার সমস্ত অভিযোগ পুরো মিথ্যা।” তিনি জানান, পুলিশ যদি চায় ওই দিনের এক ঘণ্টার সিসিটিভি ফুটেজ তাঁরা দিতে পারেন। পূজার পরিবারের দাবি, ২২ তারিখ পূজাকে কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখেন ওই শিশুটির পরিবার। পরিবারের আরও দাবি, পূজা আত্মসমর্পণ করেছেন। যদিও বিধাননগর কমিশনারেটের এডিসিপি দেবাশিস ধর বলেন, “পূজা আত্মসমর্পণ করেননি। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে পূজার পরিবারের তরফে যদি কোনও অভিযোগ থাকে, সেগুলিও খতিয়ে দেখা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

private tutor lake town puja sinha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE