ভরসন্ধ্যার ব্যস্ত বাজার। হঠাৎই ভিড় ঠেলে এগিয়ে এল এক কিশোর। কোমর থেকে রিভলভার বার করে সোজা গুলি চালাল এক ফলবিক্রেতাকে লক্ষ করে। পুলিশের দাবি, তাঁরা ওই যুবককে ধরতে তার পিছনে ধাওয়া করেন। কিন্তু তখনই ওই যুবক রিভলভার ফেলে ভিড়ের মধ্যে গা-ঢাকা দেয়। এ ছাড়া, ওই দুষ্কৃতী একটি ওয়ান-শটারও ফেলে যায় বলে জানিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে বড়বাজারের নন্দরাম মার্কেটের সামনে। পুলিশ জানিয়েছে, খুরশিদ আলম নামে বছর তিরিশের ওই ফলবিক্রেতাকে বুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রাতে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।
গত কয়েক দিনে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে গোলমালের খবর মিলেছে। শনিবার রাতে পর্ণশ্রী থানার নাকের ডগায় মোটরবাইক তল্লাশির সময়ে কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবলকে মারধর করে রিভলভার ছিনতাই করার চেষ্টা করে এক দুষ্কৃতী। তার সঙ্গে ছিল আরও দু’জন। পরে বিরাট পুলিশ বাহিনী গিয়ে ওই তিন জনকে গ্রেফতার করে। আবার রবিবার সন্ধ্যায় জনবহুল বেলেঘাটা এলাকায় প্রকাশ্যে বোমাবাজি করে দু’দল দুষ্কৃতী। আর বৃহস্পতিবার বড়বাজারের যে এলাকায় গুলি চালানোর ঘটনাটি ঘটে, তার কাছেই রয়েছে একটি পুলিশ কিয়স্ক। ঘটনার পরে আততায়ী ওই কিয়স্কের সামনে দিয়েই পালায় বলে অভিযোগ প্রত্যক্ষদর্শীদের। এ দিকে ওই কিয়স্কের পুলিশের দাবি, তারা ওই যুবককে পালাতে দেখে তার পিছনে ধাওয়া করলেও তাকে ধরা যায়নি। মহানগরে প্রকাশ্যে যে ভাবে একের পর এক অপরাধ ঘটছে, তাতে এ বার প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েই। অনেকেই বলছেন, মহানগরের পুলিশকে আর ভয় পাচ্ছে না দুষ্কৃতীরা।
কী হয়েছিল এ দিন?
পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বড়বাজারের দোকানগুলিতে বেশ ভিড় ছিল। হঠাৎ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ গুলির শব্দ পান এলাকার দোকানিরা। তার পরেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে তড়িঘড়ি দোকানের ঝাঁপও ফেলে দেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানান, ওই কিশোর খুরশিদকে তাঁর দোকান থেকে ডেকে নিয়ে যায়। তার পরেই গুলি করে পালায়। এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার উপরে চাপ চাপ রক্ত পড়ে রয়েছে। খবর পেয়ে বড়বাজার থানার পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে। পৌঁছে যান লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের কর্তারাও।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, খুরশিদ আদতে বিহারের বাসিন্দা। এখানে মেছুয়ায় থাকতেন তিনি। বছর পাঁচেক আগে পারিবারিক জমি নিয়ে গণ্ডগোলের জেরে খুরশিদের দাদা সোহেল বিহারে খুন হন। তার পরে এখানে চলে আসেন তাঁরা। বছর দেড়েক আগে বড়বাজারের পগেয়াপট্টিতে গুলি করে খুন করা হয় খুরশিদের বাবাকে। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, খুরশিদের বাবা-দাদার খুনের পিছনে পারিবারিক গোলমালই দায়ী ছিল। এ দিনের ঘটনার পরে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “এর পিছনে পারিবারিক গোলমালই দায়ী কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
কারণ যাই হোক না কেন, প্রশ্ন উঠেছে মহানগরের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে। বড়বাজার এলাকা শহরের অন্যতম ব্যবসাকেন্দ্র। সেখানে পুলিশ-জনসাধারণের ভিড় লেগেই থাকে। এমন একটি জায়গায় ভরসন্ধ্যায় প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করার ঘটনায় আতঙ্কিত ওই এলাকার বাসিন্দারা। তাঁরা বলছেন, এই ঘটনার পরে শহরের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। যদি প্রকাশ্যেই এমন ভাবে খুন হতে হয়, তা হলে মানুষের নিরাপত্তা কোথায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। টানা এমন ঘটনায় কিছুটা বিব্রত লালবাজার কর্তারাও। এ নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য এড়াচ্ছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy