Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

প্রেসিডেন্সির গণভোটে জিত উপাচার্যেরই

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-গণভোটের রায় গিয়েছিল সেখানকার তদানীন্তন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। আর প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-গণভোট সিলমোহর দিল উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়ার সিদ্ধান্তেই। অর্থাৎ ছাত্রভোটে প্রার্থী হওয়ার জন্য ক্লাসে ন্যূনতম ৬০ শতাংশ হাজিরার কড়াকড়ির বিরোধিতায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল ছাত্রছাত্রী যে-অনশন আন্দোলন করছিলেন, শেষ পর্যন্ত তাতে সায় দিলেন না প্রেসিডেন্সির ছাত্রছাত্রীদের বৃহত্তর অংশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:২২
Share: Save:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-গণভোটের রায় গিয়েছিল সেখানকার তদানীন্তন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। আর প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-গণভোট সিলমোহর দিল উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়ার সিদ্ধান্তেই।

অর্থাৎ ছাত্রভোটে প্রার্থী হওয়ার জন্য ক্লাসে ন্যূনতম ৬০ শতাংশ হাজিরার কড়াকড়ির বিরোধিতায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল ছাত্রছাত্রী যে-অনশন আন্দোলন করছিলেন, শেষ পর্যন্ত তাতে সায় দিলেন না প্রেসিডেন্সির ছাত্রছাত্রীদের বৃহত্তর অংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অগণতান্ত্রিক’ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিল প্রেসিডেন্সির ছাত্র সংসদ। এ-হেন পরিবেশে ছাত্র নির্বাচন আদৌ উচিত কি না, সেই প্রশ্নে ঘটা করে গণভোটের আয়োজন করে পর্যদুস্ত হল তারা।

এতেই শেষ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ যে ভোটাভুটি নিয়ে মাথাই ঘামান না, সেটাও প্রমাণিত হল প্রেসিডেন্সির এই গণভোটে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় আড়াই হাজার ছাত্রছাত্রীর মধ্যে হাজার জন ভোটই দেননি। উপাচার্য অনুরাধাদেবীর কথায়, “এই ভোটেই জানা গেল, বড় একটা অংশের ছেলেমেয়ে রাজনীতির চৌকাঠ মাড়ায় না। তারা আসে শুধু পড়াশোনা করতে।” তবে ছাত্র সংসদের সভাপতি সুমাল্য মুখোপাধ্যায় উপাচার্যের এই যুক্তি মানতে চাননি।, তাঁর মন্তব্য, “সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাত্র দু’দিনের মধ্যেই ভোট নিতে হয়েছে। তা সত্ত্বেও এত সংখ্যক ছাত্রছাত্রী যে ভোট দিয়েছেন, সেটাই অনেক। আমরা এতে মোটেই নিরাশ নই।”

বুধ ও বৃহস্পতিবারের গণভোটে ১৪৮৩ জন ভোট দিয়েছেন। তাঁদের ৮০ শতাংশ উপাচার্যের শর্ত মেনে ছাত্র সংসদের নির্বাচনের পক্ষে রায় দিয়েছেন। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই বলে ছাত্র সংসদের অভিযোগ ও প্রচার ধাক্কা খেল বলে মনে করছেন প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষ। ছাত্র সংসদ অবশ্য এই রায়কে নিজেদের হার বলে মানতে রাজি নয়। ছাত্রনেতাদের মতে, রায় দিয়ে ছাত্র সংসদের প্রতিই আস্থা প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। সুমাল্য বলেন, “পড়ুয়ারা ছাত্র সংসদের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন। ন্যূনতম হাজিরা বাধ্যতামূলক করা, ছাত্রভোটে লিংডো কমিশনের সুপারিশ মানা ইত্যাদির বিরোধিতাই এ বারের ভোটে প্রায় সব ছাত্র সংগঠনের প্রচারের বিষয় হবে।”

দু’দিনের গণভোট শেষে ছাত্র সংসদ বৃহস্পতিবার রাতে ফল প্রকাশ করে। সংসদ সূত্রে বলা হয়, ১৪৮৩ জন ভোট দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১২০০ জন নির্বাচনের পক্ষে, ২৫০ জন বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। কিছু ভোট বাতিল হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার।

সুমাল্য যা-ই বলুন, এই রায় যে ছাত্র সংসদের বিরুদ্ধে, উপাচার্যের বক্তব্যে তা স্পষ্ট। অনুরাধাদেবী বলেন, “ভোটদাতাদের অধিকাংশই নির্বাচন চেয়েছে। তারা আসলে আমাকেই সমর্থন করেছে। আমি খুশি যে, ছাত্রছাত্রীরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতির পক্ষেই রায় দিয়েছে। ওরা অত্যন্ত বিচক্ষণ। ওদের সিদ্ধান্তে আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে।”

লিংডো কমিশনের সুপারিশ মেনে সর্বত্রই ছাত্র সংসদের নির্বাচনে যুক্ত হওয়ার জন্য পড়ুয়াদের অন্তত ৭৫ শতাংশ হাজিরা বাধ্যতামূলক বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষ শুধু এ বছরের জন্য তা কমিয়ে ৬০ শতাংশ করেছেন। কিন্তু তাতেও ১৮০ জনের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে। এই নিয়মের বিরোধিতা করে সোমবার রাত থেকে আমরণ অনশনে বসেন ১০ জন পড়ুয়া। তাঁদের মধ্যে আইসি, এসএফআই, আইসা-সহ সব ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরাই ছিলেন। পরের দিন আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে অনশন তোলার ব্যবস্থা করেন উপাচার্য নিজেই।

অনুরাধাদেবী জানান, সকলকেই নির্বাচনে ভোট দিতে দেওয়া হবে। কিন্তু হাজিরা কম থাকায় যাঁরা তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, সেই ১৮০ জন নির্বাচনে লড়তে পারবেন না। এর ফলে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, এই অভিযোগের সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র নির্বাচনের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে ছাত্র সংসদ। সেই প্রশ্নেই গণভোটের ডাক দেওয়া হয়।

প্রেসিডেন্সি সূত্রের খবর, ভোটদাতা অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী উপাচার্যের সিদ্ধান্ত সমর্থন করায় আগামী ছাত্র নির্বাচনে ৬০ শতাংশ হাজিরা না-থাকলে কোনও পড়ুয়াই ভোটে লড়তে পারবেন না। পরের বার থেকে ভোটের সঙ্গে যুক্ত হতে গেলে লিংডো কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ৭৫ শতাংশ হাজিরা থাকতেই হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jadavpur presidency anuradha lohia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE