এ যেন টেস্ট সিরিজ শেষ হতে না হতেই ওয়ান ডে ম্যাচের প্রস্তুতি!
দুর্গাপুজোর কাজ শেষ। চতুর্থী থেকেই মণ্ডপে শুরু হয়েছে দর্শনার্থীদের ভিড়। মণ্ডপ-প্রতিমার কাজ শেষ করে অনেক শিল্পীই কিন্তু বসে নেই। বিশ্রামের ফাঁকেই শুরু করে দিয়েছেন কালীপুজোর প্রস্তুতি। কোন পুজোয় কী করবেন, কী ভাবে করবেন, তা নিয়ে আলোচনা করছেন পুজোকর্তাদের সঙ্গে। প্রস্তুতির ব্যাপারে আলোচনা করে নিচ্ছেন সহকারীদের নিয়েও।
এ বার পুজোয় শহরের অন্তত তিনটি বড় পুজোর কাজ করেছেন শিল্পী অনির্বাণ দাস। কাঁকুড়গাছি যুবকবৃন্দ, স্বপ্নারবাগান, পাতিপুকুর বসাকবাগানে তাঁর শিল্প নজর কেড়েছে। তবে এখানেই শেষ করছেন না তিনি। পুজো পেরোতেই বেলেঘাটা ও বাগুইআটির দু’টো কালীপুজো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন অনির্বাণ। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় ফোনে ধরতেই পুজো বাজারের এই নবীন তারকা বললেন, “পুজোর চার দিন বিশ্রাম নেব। তার পরেই কালীপুজোর কাজ শুরু হবে।” বেলেঘাটার পুজোয় তিনি তুলে ধরছেন আঙ্কোরভাট। বাগুইআটির পুজোয় কী থিম হবে, তা এখনই খোলসা করতে চাইছেন না শিল্পী।
পুজো ময়দানের খবর, শহরের অনেক বড় শিল্পী আবার সরাসরি কালীপুজোর কাজ করেন না। বদলে তাঁদের সহকারীরাই কালীপুজোর কাজ করে ধীরে ধীরে হাত পাকান। যেমন দুর্গাপুজোয় শহরের বিভিন্ন নামী ক্লাবে কাজ করেন দেবনাথ রায়। কিন্তু কালীপুজোয় কাজ করেন তাঁর সহকারী অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়, সুমিত দাসেরা। দেবনাথ বলছেন, “কালীপুজোয় অনেক সময়েই বড় ক্লাবের দুর্গাপুজোর থিম মণ্ডপ কিনে নেওয়া হয়। সেটাকে ফের নতুন করে লাগিয়ে দিলেই মণ্ডপ তৈরি। তাই এই কাজ করলে সহকারীরা ধীরে ধীরে অভিজ্ঞ হয়ে ওঠেন।”
কালীপুজোয় কাজ করেন উষ্ণীষ মুখোপাধ্যায়। দুর্গাপুজোয় তিনি প্রতিমাশিল্পী নব পালের সহকারী। কখনও কখনও শিল্পী অনির্বাণ দাসকে সাহায্য করতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। আর্ট কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র উষ্ণীষ অবশ্য অনেক সময়ই কালীপুজোয় একা কাজ করেন। গত বছরেই মধ্যমগ্রামের একটি কালীপুজোয় নিজের থিম গড়ে অনেকের নজর কেড়েছিলেন এই তরুণ।
শহরের অনেক শিল্পী আবার লাগাতার খাটুনি থেকে রেহাই পেতে কালীপুজোকে একটু এড়িয়েও চলতে চান। এমনই এক জন সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। দমদম মলপল্লিতে এ বার ইটভাটা গড়ে তাক লাগিয়েছেন। তিনি বলছেন, “কালীপুজোয় কাজ করি না বললেই চলে। দুর্গাপুজোর পরে কাজ বলতে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো।” তবে জগদ্ধাত্রী পুজোয় অনেক সময়েই দুর্গাপুজোর মণ্ডপ কিনে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়। কখনও কখনও তাতে সামান্য অদলবদলও করেন শিল্পীরা।
সোমনাথের মতো একই সুর শহরের আর এক শিল্পী পরিমল পালের গলাতেও। উত্তরের নলিন সরকার স্ট্রিটে পুরো কাজটাই একা হাতে করেছেন তিনি। প্রতিমা গড়েছেন আরও কয়েকটি ক্লাবে। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় নলিন সরকার স্ট্রিটেই পাওয়া গেল পরিমলকে। টানা হাড়ভাঙা খাটুনিতে চোখমুখ দৃশ্যত বিধ্বস্ত। বললেন, “না, কালীপুজোয় কাজ করি না। যা করার ফের জগদ্ধাত্রী পুজোতেই করব।”
কালী হোক বা জগদ্ধাত্রী দুর্গাপুজোর দশমী পেরোতে না পেরোতেই লেগে পড়বেন শিল্পীরা। কেউ চেষ্টা করবেন পুরনো কাজকেই নতুন মোড়কে পেশ করার, কেউ বা চাইবেন নিজের থিম গড়ে নজর কাড়তে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy