আলিপুর থানায় হামলার ঘটনায় সিসিটিভি-র ফুটেজ থেকে পুলিশ ১০ জনকে শনাক্ত করেছিল। কিন্তু ধরেছিল মাত্র এক জনকে। তাকে সাত দিন ধরে রেখেও পুলিশ বাকিদের কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশের সেই অক্ষমতার জেরেই শুক্রবার আদালত থেকে জামিন পেয়ে গেল আলিপুর কাণ্ডে ধৃত যোগেশ বোরা।
থানা আক্রমণের ওই ঘটনায় একমাত্র ধৃত অভিযুক্ত যোগেশ জামিন পেয়ে যাওয়ায় আলিপুর থানার নিচু তলা রীতিমতো ক্ষুব্ধ। সেখানকার এক পুলিশকর্মীর মন্তব্য, যারা থানায় হামলা করল, কাচ ভাঙল, তাদের সকলের ছবিই তো ধরা পড়েছিল সিসিটিভি-তে। কিন্তু কয়েক দিন ধরে অনেক টালবাহানার পরে ধরা হল মাত্র এক জনকে। বাকিরা এলাকায় ঘোরাঘুরি করা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হল না। ওই পুলিশকর্মীর আক্ষেপ, “শনাক্ত করার পরেও অন্য অভিযুক্তদের না-ধরে যোগেশকে জামিন পেতে সাহায্য করেছেন আমাদের বড়কর্তারাই। এতে আখেরে হামলাকারীরাই তো বুকে বল পাবে। এর পরে বাকিদের ধরলে তারাও সহজে জামিন পেয়ে যাবে!”
থানা আক্রমণ নিয়ে ব্যাপক হইচই হওয়ায় প্রথমে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু ঘটনার সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগের তথ্যপ্রমাণ পেশ করতে পারেনি পুলিশ। তাই আদালত পাঁচ জনকেই জামিন দেয়।
আলিপুর থানায় হামলার ঘটনায় যাঁরা শনাক্ত হয়েছেন, তাঁদের সকলেই তৃণমূলের স্থানীয় নেতা ও কর্মী। ওই হামলার পিছনে যিনি ছিলেন, তাঁর ছবি সিসিটিভি ফুটেজে হয়তো নেই। তবে তিনি কে, থানার পুলিশকর্মীরা সেটা বিলক্ষণ জানেন। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমের ঘনিষ্ঠ প্রতাপ সাহার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আলিপুর থানার পুলিশকর্মীরাই। কিন্তু তদন্তকারীরা অভিযোগপত্রে প্রতাপের নামই রাখেননি। এই অবস্থায় প্রতাপ-ঘনিষ্ঠ যোগেশকে হাতে পেয়েও কেন তাকে ধরে রাখা গেল না, সেই প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছেন পুলিশের বড়কর্তারা। এমনই এক কর্তার দায়সারা মন্তব্য, “যোগেশের জামিন যাতে খারিজ হয়ে যায়, সেই চেষ্টা চালানো হবে।”
আলিপুরের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জীব দারুকা মঙ্গলবার যোগেশের জামিনের আর্জি খারিজ করে তাকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তা হলে সেই সময়সীমা ফুরোনোর দিন চারেক আগেই যোগেশ জামিন পেয়ে গেল কী ভাবে? যোগেশের আইনজীবী তীর্থঙ্কর রায় এ দিন জেলা দায়রা আদালতের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারক শুভ্রজ্যোতি মিত্রের এজলাসে দাবি করেন, তাঁর মক্কেলকে ভুল ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে তাঁর মক্কেল যে যুক্ত, তা-ও দেখাতে পারেনি পুলিশ। যোগেশ আটক থাকার সময় পুলিশ নতুন করে কাউকে গ্রেফতারও করতে পারেনি। তদন্তে কোনও অগ্রগতিই হয়নি। সরকারি আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করলেও তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে তেমন কোনও তথ্যই আদালতে পেশ করতে পারেননি। বিচারক সব শুনে যোগেশকে পাঁচ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দেন।
আলিপুর থানায় হামলা হয় ১৪ নভেম্বর। তার পরে প্রায় ১৫ দিন সময় পেয়েও পুলিশ সিসিটিভি-র ফুটেজ থেকে চিহ্নিত করা বাকি ন’জন অভিযুক্তকে ধরতে পারল না কেন?
“আমরা সকলকে ধরার চেষ্টা করছি। কিন্তু অভিযুক্তেরা সকলেই গা-ঢাকা দিয়েছেন,” বলেছেন কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাউথ) মুরলীধর শর্মা। যে-জমিতে সরকারি আবাসন তৈরি নিয়ে বিরোধ, তার লাগোয়া বিধানচন্দ্র রায় কলোনির বাসিন্দাদের অনেকেই ডিসি-র এই ব্যাখ্যা শুনে মুখ টিপে হেসেছেন। কারণ, পুলিশ দেখতে না-পেলেও তাঁরা ওই ন’জন অভিযুক্তের মধ্যে সাত জনকে গত কয়েক দিনের মধ্যেই বেশ কয়েক বার দেখেছেন বলে দাবি করেছেন কলোনির বহু বাসিন্দা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy