অগ্নিযুদ্ধে দমকল। বুধবার, সিইএসসি-র বিদ্যুৎকেন্দ্রে। — নিজস্ব চিত্র
রক্ষণাবেক্ষণের কাজের জেরে আগুন বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রে। তার জেরে বাতিহীন একাধিক মেট্রো স্টেশন, দু’টি সরকারি হাসপাতাল এবং রবীন্দ্র সদনের একটি অনুষ্ঠান। বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে না হতেই ফের ট্রান্সফর্মারের কেব্ল ফেটে বিপর্যস্ত পরিষেবা। পরপর এমনই বিভ্রাটের জেরে বিদ্যুৎহীন হয়ে বুধবার সকাল থেকে টানা ভোগান্তির শিকার হল মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশ। যে দুর্ভোগ চলল প্রায় বিকেল পর্যন্ত।
এ দিন সকালে প্রিন্সেপ স্ট্রিটে সিইএসসি-র সরবরাহকেন্দ্রের বেসমেন্টের ঘরে কেব্ল কাটা এবং ওয়্যারিংয়ের কাজ চলছিল। সকাল ৯টা নাগাদ হঠাৎই কর্মীরা দেখেন, চার দিক ধোঁয়ায় ছেয়ে গিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই ঘর থেকে বেরিয়ে যান তাঁরা। ততক্ষণে ধোঁয়ায় ঢেকেছে গোটা তল্লাট। তৎক্ষণাৎ ওই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সত্যরঞ্জন মিশ্র নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ে একটি মন্দিরে পুজো করছিলাম। হঠাৎ দেখি চারদিক ধোঁয়ায় ছেয়ে গিয়েছে।’’
দমকলের ১০টি ইঞ্জিন ঘণ্টা দেড়েকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। প্রাথমিক ভাবে দমকলের অনুমান, বেসমেন্টের ওয়্যারিংয়ে শর্ট সার্কিট থেকেই বিপত্তি হয়।
আগুন নিভলে কিছুক্ষণ দেখে নিয়ে ১২টা নাগাদ ফের বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়। কিন্তু তখন ফের একটি ট্রান্সফর্মারের কেব্ল ফেটে গিয়ে আগুনের ফুলকি দেখা যায়। ওই ট্রান্সফর্মারটি বন্ধ করে বাকিগুলি চালু রেখে বিদ্যুৎ সরবরাহ চলে। সিইএসসি-র দাবি, এক ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরো স্বাভাবিক হয়।
ব্যস্ত সময়ে প্রিন্সেপ স্ট্রিটে এই ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটায় গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ ও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে যানজট হয়। হয়রানির শিকার হন অফিসযাত্রীরা। বন্ধ করে দেওয়া হয় ঘটনাস্থলের আশপাশের দোকানপাটও। প্রিন্সেপ স্ট্রিটের ওই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকার জেরে মধ্য কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কবলে পড়ে। যার প্রভাব পড়ে মেট্রো পরিষেবাতেও। সেন্ট্রাল, মহাত্মা গাঁধী রোড, কালীঘাট ও নেতাজি ভবন স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। তবে স্মার্টগেট এবং ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল বলে মেট্রো-র দাবি। কিছুক্ষণের জন্য বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজার, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং এনআরএস হাসপাতালও। অন্য দিকে, এ দিন রবীন্দ্র সদনে নার্সদের একটি অনুষ্ঠান ছিল। বিদ্যুৎ না থাকায় মোমবাতি জ্বেলে সেই অনুষ্ঠান করতে হয়।
সিইএসসি কর্তৃপক্ষ জানান, আগুন লাগার কারণেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়। তা না হলে অগ্নিকাণ্ড ব্যাপক আকার নিতে পারত। তবে গুরুত্বপুর্ণ এলাকায় খুব দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়েছে বলে সংস্থার দাবি। সিইএসসি সূত্রে খবর, যেখানে আগুন লেগেছে, সেই জায়গায় কোনও সুইচ ছিল না। বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও কেব্ল খোলার কাজ চলছিল। তা-ও কী ভাবে আগুন লাগল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
দমকলের অভিযোগ, আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। যদিও ওই বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের এক আধিকারিকের দাবি, অভিযোগ ঠিক নয়। ট্রান্সফর্মার ও বেসমেন্ট— দু’জায়গাতেই আগুন নেভানোর জন্য আলাদা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা রয়েছে।
কিছু দিন আগে দমদম সেন্ট্রাল জেল বাস স্টপের কাছে যশোর রোডের ধারে সিইএসসি-র একটি সাব স্টেশনেও আগুন লেগে গিয়েছিল। সে দিন দমকল ছাড়াও কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বিশেষ আধুনিক গাড়ি এনে ফোম ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy