Advertisement
১১ মে ২০২৪

বিধাননগরে ৪১ ওয়ার্ডে পুনর্নির্বাচনে মাত্র ১২ শতাংশ ভোট তৃণমূলের

ভোট গণনার ২৪ ঘণ্টা আগে শুক্রবার দমদমের এক তৃণমূলনেত্রী সল্টলেকে এক নেতার বাড়িতে বসে বলছিলেন ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে কম পক্ষে হাজার ভোটে জিতবেন তাঁদের প্রার্থী অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। ওই কেন্দ্রে অনিন্দ্যর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী সল্টলেকে তৃণমূলেরই প্রাক্তন কাউন্সিলর অনুপম দত্ত।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৫ ২১:১৫
Share: Save:

ভোট গণনার ২৪ ঘণ্টা আগে শুক্রবার দমদমের এক তৃণমূলনেত্রী সল্টলেকে এক নেতার বাড়িতে বসে বলছিলেন ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে কম পক্ষে হাজার ভোটে জিতবেন তাঁদের প্রার্থী অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। ওই কেন্দ্রে অনিন্দ্যর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী সল্টলেকে তৃণমূলেরই প্রাক্তন কাউন্সিলর অনুপম দত্ত। ওই নেত্রী যখন ওই সব কথা বলছিলেন, পুর্ননির্বাচন তখনও চলছে ওই ওয়ার্ডের তিনটি বুথে।

শনিবার বিধাননগর কলেজে গণনা শেষে জয়ী কাউন্সিলর অনিন্দ্যের পাশে দাঁড়িয়ে সেই নেত্রী তথা দমদমের কাউন্সিলর রিঙ্কু দে দত্ত বললেন, ‘‘কী, আমি যা বলেছিলাম, মিলল তো?’’ কিছুটা যুদ্ধ জয়ের বীরত্ব ছিল তাঁর হাব-ভাবে। আসলে ভোটে জেতার ‘কারিগর’ হিসেবে ইতিমধ্যেই সুনাম পেয়েছেন দলীয় নেতৃত্বের কাছে। তাই তাঁরই উপর এ বার ভার ছিল ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থীকে জেতানোর। ৩ অক্টোবর ভোটের দিন ওই ওয়ার্ডের এএ, বিবি এবং বিসি ব্লকে ‘ঠিকঠাক’ ভোট করাতে তিনি নিজেই হাজির ছিলেন এবি-এসি পাকের্র পাশে দলের এক ছাউনিতে। সে দিন দলের পক্ষে কত ভোট পড়েছে তার আগাম হিসেবও তাঁর ঠোঁটস্থ ছিল। সেই হিসেব জেনেই হয়তো তিনি দলীয় প্রার্থীর জয় সম্পর্কে এতটা সুনিশ্চিত হয়ে ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন!

শনিবার ভোট গণনার শেষে দেখা গেল ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের যে তিনটি বুথে পুনর্নির্বাচন হয়েছে তার সব’কটিতেই জিতেছেন নির্দল প্রার্থী অনুপম দত্ত। নির্দল প্রার্থী অনুপমের ব্যাখ্যা, ‘‘ওই তিনটি বুথে ভোট হয়েছে কড়া পুলিশ প্রহরায়। বহিরাগত ঢুকতেই পারেনি। গণতান্ত্রিক ভাবেই ভোটারেরা তাঁদের মতামত জানিয়েছেন।’’

আর পুনর্নির্বাচনে ভোট দিয়ে স্থানীয় ভোটারদেরও প্রতিক্রিয়া ছিল ‘‘এমন শান্তিতেই তো ভোট দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ৩ অক্টোবর ভোটের নামে প্রহসন হয়ে গেল।’’ অনুপম নিজেও জানান, পুনর্নির্বাচন না হলে ওই তিনটি বুথেও হারতাম। প্রায় ৭০ শতাংশের উপর ভোট পড়েছিল সেখানে। আর পুনর্নির্বাচনে ভোট হয়েছে ৫০ শতাংশেরও কম।

পরিসংখ্যান বলছে, ৯ অক্টোবর ভোট হওয়া তিনটি বুথের ফলাফলে তৃণমূলের প্রার্থী অনিন্দ্য মোট ১২ শতাংশের মত ভোট পেয়েছেন। হিসেবটা হল, এবি ব্লক কমিউনিটি হলে ৪২৫ নম্বর বুথে অনুপম ১৯৫ আর তৃণমূল ৪৫। সল্টলেক প্রাইমারি স্কুলে ৪২৬ নম্বর বুথে তৃণমূল প্রার্থী অনিন্দ্য ৫৯ আর অনুপম ২৯০। আর যেখানে প্রথম দিন ভোটের সময় বোমা পড়েছিল সেই বিডি ব্লকে তৃণমূল মাত্র ৩৪। আর অনুপম ৪১০। আসলে অনুপম সল্টলেক পুরসভার তিন বারের জয়ী কাউন্সিলর। সল্টলেকে তৃণমূলের অন্যতম নেতাও। এ বার ভোটে দল অনুপমকে প্রার্থী না করায় তাঁকে ঘিরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। তৃণমূলকে হারাতে বামেরাও সরাসরি কাউকে সেখানে প্রার্থী করেনি। এক নির্দলকে সমর্থন জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। স্বভাবতই বিধাননগর পুর নিগমের ভোটে তৃণমূলের কাছে মর্যাদার লড়াই হয়ে ওঠে ৪১ ওয়ার্ড। অরুণাভ ঘোষের মত কংগ্রেস নেতারাও অনুপমকে সমর্থন করে বলে খবর। তাই তৃণমূলের প্রাক্তন বনাম বর্তমানের লড়াই নিয়ে নজর ছিল সকলেরই।

শনিবার ভোট গণনার সময় এবি ও বিডি ব্লকের তিনটি বুথের ফল বেরতেই তৃণমূলের অন্য নেতাদের চোখে মুখে অস্বস্তির ছাপ থাকলেও নিজের জেতা নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন অনিন্দ্য। বলেও ফেলেন, ‘‘এএ, বিবি বুথের ফল আসতে দিন, তাহলেই টের পাবেন।’’

হলও তাই। বিবি ৪২৯ নম্বর বুথে অনিন্দ্য ৫২২, অনুপম ৫৪। ৪৩০ বুথে তৃণমূল ৪৫৭, অনুপম মাত্র ৬৩। এর পিছনে দমদমের ওই নেত্রীর ‘ক্যারিশমা’ কাজ করেছে বলে অভিমত স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের। তাই অষ্টম পার্ট গণনার পর সাতশোরও বেশি ভোটে এগিয়ে থাকা নির্দল প্রার্থী স্বস্তি পাননি। অনুপমের অভিযোগ, ‘‘ওই দুটো ব্লকে ওঁরা বুথ দখল করে নিয়েছিল। সাধারণ ভোটারকে মেরে বের করে দিয়েছিল। দুপুরের পর থেকে একচেটিয়া ভোট করিয়েছে বহিরাগতদের দিয়ে।’’

যা একেবারেই মানতে নারাজ রাজ্য তৃণমূলের নেতা তথা মন্ত্রী সল্টলেকের বাসিন্দা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনিও এ দিন গণনা কেন্দ্রে হাজির হন। প্রার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বের হওয়ার সময় এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বলেন, ‘‘বহিরাগত কথাটা আমদানি করেছিলেন সিপিএম নেতা সুভাষ চক্রবর্তী। ভোট তো একটা গণতান্ত্রিক উৎসব। বাইরের লোক তো আসতেই পারে।’’

আবার বামেদের ভোট বয়কটের ফলে বিধাননগরের ৩৩ এবং ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের দু’টি বুথে বামেদের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা অনেকটাই কমে যায়। আর তৃণমূল সেখানে নিজেদের সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে হাজির করান। তাই পুনর্নির্বাচন হলেও ওই দুই ওয়ার্ডের ৫টি বুথে তৃণমূল প্রার্থীরা ভোটে এগিয়ে রয়েছে। ওই উদাহরণ দেখিয়ে তৃণমূল নেতা দেবাশিস জানার বক্তব্য, ‘‘বহিরাগত তত্ত্ব আসলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার।’’

অন্য দিকে, বামেদের দাবি, ভোট বয়কটের কারণে দলের সমর্থকেরা ভোট দিতেই আসেননি। তা জেনেও তৃণমূল এখন সত্য গোপনের চেষ্টা চালাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE