Advertisement
১১ মে ২০২৪

রাতে নেই মহিলা পুলিশ, নাজেহাল পুরুষ কর্মীরা

তারাতলার গড়াগাছায় হরিজন বস্তি। রবিবার গভীর রাতে মানসিক ভারসাম্যহীন এক তরুণীকে উদ্ধার করতে গিয়ে ফাঁপড়ে পড়ে স্থানীয় থানার পুলিশ। তরুণীকে উদ্ধার করতে মহিলা পুলিশ লাগবে। কিন্তু অত রাতে থানায় মহিলা পুলিশ কোথায়! পুলিশকর্মীরা ভেবেছিলেন, বস্তির মহিলাদের সাহায্যে এ বারের মতো ব্যাপারটা সামলে নেবেন। কিন্তু তাতে ফল হল উল্টো। বস্তির মহিলারাই চড়াও হলেন পুলিশের উপরে। তখন ‘ছেড়ে দে মা’ অবস্থা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৫১
Share: Save:

তারাতলার গড়াগাছায় হরিজন বস্তি। রবিবার গভীর রাতে মানসিক ভারসাম্যহীন এক তরুণীকে উদ্ধার করতে গিয়ে ফাঁপড়ে পড়ে স্থানীয় থানার পুলিশ। তরুণীকে উদ্ধার করতে মহিলা পুলিশ লাগবে। কিন্তু অত রাতে থানায় মহিলা পুলিশ কোথায়! পুলিশকর্মীরা ভেবেছিলেন, বস্তির মহিলাদের সাহায্যে এ বারের মতো ব্যাপারটা সামলে নেবেন। কিন্তু তাতে ফল হল উল্টো। বস্তির মহিলারাই চড়াও হলেন পুলিশের উপরে। তখন ‘ছেড়ে দে মা’ অবস্থা।

মাসখানেক আগে বালিগঞ্জ থানা এলাকার ঘটনাই ধরা যাক। মাঝরাতে প্রকাশ্যে মত্ত অবস্থায় এক মহিলা, তাঁর স্বামী-সহ বেশ কয়েক জন অশ্লীল আচরণ করছিলেন। বাধা দিতে গেলে মহিলারা উল্টে পুলিশের উপরেই চড়াও হন। ত্রিসীমানায় কোনও মহিলা পুলিশকর্মী ছিলেন না। ফলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপমান হজম করতে হয় বালিগঞ্জ থানার পুলিশকর্মীদের।

তারাতলা বা বালিগঞ্জ নয়, গভীর রাতের এমন চিত্র পুরো কলকাতা পুলিশ এলাকাতেই। সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে কলকাতা শহরে রাতের চরিত্রও বদলে যাচ্ছে। এখন অনেক রাত পর্যন্ত বহু মহিলাকেও দেখা যায় মহানগরের রাস্তায়। কিন্তু এত বড় শহরে গভীর রাতে কর্তব্যরত মহিলা পুলিশকর্মী কার্যত থাকেনই না। ফলে বিভিন্ন সময়ে মহিলাদের ঘিরে সমস্যার ক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে নাজেহাল হতে হয় কলকাতা পুলিশের পুরুষ কর্মীদের। কখনও কখনও মত্ত কিংবা উত্তেজিত কোনও মহিলার কাছে গালিগালাজ থেকে শুরু করে বেধড়ক চড়-থাপ্পড় খেয়েও হজম করে ফেলতে হয় তাঁদের।

মহানগরের এমন পরিস্থিতি লালবাজারের কর্তাদের অজানা নয়। কয়েক মাস আগে লালবাজারের তাবড় কতার্রা আশ্বাস দিয়েছিলেন, দিনের মতো রাতেও প্রতিটি থানায় পর্যাপ্ত সংখ্যায় মহিলা পুলিশকর্মী থাকবেন। সে জন্য আড়াইশো মহিলা পুলিশকর্মী নিয়োগও করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও রাতের কলকাতায় পুলিশ বাহিনীর চিত্রটা এতটুকু পাল্টায়নি। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্রের অবশ্য দাবি, আগে থানাগুলিতে মহিলা পুলিশকর্মীর সংখ্যা কম থাকলেও এখন আর সে সমস্যা নেই। তিনি বলেন, “নতুন নিয়োগের পরে মহিলা পুলিশের অভাব নেই। রাতে কোনও ঘটনা ঘটলে তো পার্ক স্ট্রিট এবং ময়দান এলাকায় টহলদারির কাজে নিযুক্ত শক্তি বাহিনী এবং লালবাজারের মহিলা পুলিশ বাহিনী থাকে। খবর পেলেই তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়।”

কিন্তু পুলিশকর্মীদের বক্তব্য, গড়িয়ায়, বেহালায় কিংবা শ্যামবাজারে কোনও ঘটনা ঘটলে শক্তি বাহিনী বা লালবাজারের মহিলা পুলিশ বাহিনী পৌঁছতে পৌঁছতে তা আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে। লালাবজার সূত্রে এ-ও খবর যে, নতুন নিয়োগের পরেও কলকাতায় থানা পিছু মহিলা পুলিশের সংখ্যা ৬-৭ জন। এর মধ্যে দু’জন অফিসার। এ ছাড়া, থাকে হাতে গোনা কয়েক জন ‘গ্রিন’ পুলিশ। পুলিশ মহলেরই একাংশের অভিযোগ, দিনের বেলায় এই সংখ্যক মহিলা পুলিশ দিয়ে কোনও মতে কাজ চলে যায় ঠিকই। কিন্তু ওই কয়েক জন মহিলা পুলিশের মধ্যে আর শিফ্ট ভাগ করা যায় না। তাই রাতে কাজের জন্য আর কোনও মহিলা পুলিশ থাকে না। কলকাতা পুলিশের এক কর্তার মতে, “রাতে কোনও মহিলা পুলিশকে থানায় ডিউটি দিতে গেলে যে ধরনের পরিকাঠামো থাকা প্রয়োজন, তা কোনও থানাতেই প্রায় নেই। ফলে পর্যাপ্ত সংখ্যায় মহিলা পুলিশকর্মী থাকলেই যে তাঁদের রাতে ডিউটি দেওয়া যাবে, এমনটাও নয়।”

রাজীব মিশ্র অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন। তাঁর দাবি, “আগের থেকে থানাগুলির পরিকাঠামো অনেক উন্নত হয়েছে। মহিলাদের রাখতে কোনও অসুবিধা নেই। ডিসি-রা চাইলে রাতেও মহিলা পুলিশ রাখতে পারেন।”

কিন্তু যুগ্ম কমিশনারের কথার সঙ্গে বাস্তবে রাতের কলকাতার চিত্রের কোনও মিল নেই। গভীর রাতে কোনও সমস্যার ক্ষেত্রে এখনও অমিল মহিলা পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

lady police kolkata police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE