Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

রাস্তায় নামিয়ে ঘুষি মারলেন ট্যাক্সিচালক

বন্ধুদের পুনর্মিলন উৎসবে যোগ দিতে রবিবার রাতে গিয়েছিলাম ভবানীপুর থানার শরৎ বসু রোডের এলগিন মোড়ে একটি রেস্তোঁরায়। ফেরার পথে এ ভাবে যে হেনস্থা হতে হবে, সত্যিই ভাবিনি। এমনকী, সাহায্য চেয়ে কোনও সাড়া পেলাম না পুলিশের কাছেও। দিল্লির কালকাজি এলাকায় আইটি সফ্টওয়্যারের ব্যবসা রয়েছে আমার। পরিবার এখানে থাকলেও পাকাপাকি ভাবে দিল্লির বাসিন্দা আমি।

হাতের ক্ষত দেখাচ্ছেন জখম যাত্রী চন্দন চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

হাতের ক্ষত দেখাচ্ছেন জখম যাত্রী চন্দন চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

চন্দন চট্টোপাধ্যায়(নিগৃহীত যাত্রী)
শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৪ ০৩:১০
Share: Save:

বন্ধুদের পুনর্মিলন উৎসবে যোগ দিতে রবিবার রাতে গিয়েছিলাম ভবানীপুর থানার শরৎ বসু রোডের এলগিন মোড়ে একটি রেস্তোঁরায়। ফেরার পথে এ ভাবে যে হেনস্থা হতে হবে, সত্যিই ভাবিনি। এমনকী, সাহায্য চেয়ে কোনও সাড়া পেলাম না পুলিশের কাছেও।

দিল্লির কালকাজি এলাকায় আইটি সফ্টওয়্যারের ব্যবসা রয়েছে আমার। পরিবার এখানে থাকলেও পাকাপাকি ভাবে দিল্লির বাসিন্দা আমি। সাত দিনের ছুটিতে কলকাতা এসেছিলাম। রবিবার নাকতলা থেকে এক বন্ধু আমার বাড়িতে আসার পরে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বেরোই আমরা। রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ শরৎ বসু রোডে ওই রেস্তোঁরায় অনুষ্ঠানের পরে বেরিয়ে আসি দু’জন। হিন্দুস্থান ক্লাবের সামনে ট্যাক্সি ধরার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। প্রথমে বেশি ভাড়া চাওয়ায় দু’একটি ট্যাক্সি ছেড়ে দিই। এর পরে হঠাৎই আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায় একটি ট্যাক্সি।

ওই ট্যাক্সিতে চালকের পাশে আর এক জন বসে ছিলেন। গাড়ি থামিয়েই চালক বলে উঠলেন, তাড়াতাড়ি উঠে পড়ুন। কোথায় যাব, কত ভাড়া কিছু জিজ্ঞাসা করার সময়ই দিলেন না। তাড়াহুড়ো করে আমি ও আমার বন্ধু ট্যাক্সিতে উঠে বসলাম।

বেশ কিছুটা যাওয়ার পরে চালক জানতে চাইলেন, আমরা কোথায় যাব। আমি গল্ফগ্রিন এবং আমার বন্ধু নাকতলা যাবে বলে জানাই। তখনই ট্যাক্সিচালক বলেন, “আমরা গোলপার্ক পর্যন্ত যাব। আপনারা এর মধ্যেই কোথাও নেমে পড়ুন।” এই কথা শুনেই প্রতিবাদ করে ওঠে আমার বন্ধু। বলে, “আপনারা ওঠার সময়ে কিছু বললেন না। আর এখন বলছেন যাব না? এটা করতে পারেন না আপনারা।” তখন চালক বলেন, “এটা আমার গাড়ি, কোথায় যাব না যাব, সেটা আমিই ঠিক করব। যেতে পারলে যান। না হলে গাড়ি থেকে নেমে যান। না হলে কী করে নামাতে হয় তা আমরা জানি।”

এই অসম্মানজনক কথার প্রতিবাদ করেছিল আমার বন্ধু। আমি ট্যাক্সির পিছনে ডান দিকে বসে ছিলাম। ও বসেছিল বাঁ দিকে। ক্ষিপ্ত ওই চালক ও তার সঙ্গী ট্যাক্সি থেকে নেমে আমার বন্ধুকে টেনে নামায়। তার পরে ওর মাথায় ও চোখে ঘুষি চালায়। ঘুষিতে চশমা ভেঙে যায় ওর। আটকাতে গেলে আমারও হাতে, পিঠে চোট লাগে।

ইতিমধ্যে ওরা আমাদের আটকে রেখে কাউকে ফোন করতে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে আরও ৮-১০ জন ট্যাক্সিচালক সেখানে জড়ো হয়ে যান। বেগতিক দেখে আমি ১০০ নম্বরে ডায়াল করি। সেখান থেকে বলা হয়, “এটা আমাদের বিষয় নয়, আপনি ১০৭৩ ডায়াল করুন।” ১০৭৩-এ দু’তিন বার ডায়াল করার পরে লাইন পাই। কিন্তু সেখান থেকেও সাহায্য মেলেনি। আমাকে বলা হয়, ‘ভবানীপুর থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করুন।’ তখন সত্যি কিছু মাথায় আসছিল না আমার। খালি মাথায় ঘুরছিল, এখান থেকে না পালালে আরও মার খেতে হবে। আমরা পিছু হটতে থাকি। তবে পালানোর সময়ে ট্যাক্সির নম্বর প্লেটের ছবি তুলে নিই মোবাইলে।

পালিয়ে হিন্দুস্থান ক্লাবের পাশে পেট্রোল পাম্পের সামনে চলে আসি। সেখানে অন্য ট্যাক্সি ধরে ভবানীপুর থানায় যাই। রাত ১টা নাগাদ থানায় অভিযোগ জানিয়ে বাড়ি ফিরি। ফিরে বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখব ভেবেছিলাম। কিন্তু এর পরে আর খেলাতেও মন বসাতে পারিনি। কলকাতায় এসে এমন অভিজ্ঞতা হবে, তা সত্যিই ভাবিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE