শিকেয় সচেতনতা। এ ভাবেই প্রাণ হাতে যাতায়াত। —নিজস্ব চিত্র
দৃশ্য ১: ধর্মতলা মোড়: দুপুর ১টা। সিগন্যালে দাঁড়িয়ে আছে বাস। হঠাৎ দেখা গেল, পিছন থেকে সমস্ত বাসের ডান দিক-বাঁ দিক কাটিয়ে এগোচ্ছেন মোটরবাইকে সওয়ার দুই যুবক। কারও মাথাতেই নেই হেলমেট। একটু দূরে চাঁদনি চক মোড়েও একই চিত্র। সিগন্যাল বদল হতেই হেলমেট-বিহীন দুই যুবক সাঁ করে বেরিয়ে গেলেন। পিছনে আরও একটি মোটরবাইক। যেখানে এক জন হেলমেট পরে রয়েছেন, কিন্তু পিছনে বসা স্কুলপড়ুয়া শিশুটির মাথা খালি।
দৃশ্য ২: শ্যামবাজার মোড়: দুপুর ১টা ২৫। সিগন্যাল ছাড়তেই দেখা গেল, এক ভদ্রলোক স্কুটিতে যাচ্ছেন। মাথায় হেলমেট নেই। আরও দু’জন যাচ্ছেন মোটরবাইকে। পিছনের লোকটির হাতে ধরা জিনিসপত্র। কারও মাথাতেই হেলমেটের বালাই নেই।
দৃশ্য ৩: পার্ক সার্কাস মোড়: দুপুর ২টো ২০। হেলমেট না পরাটাই যেন নিয়ম এখানে। পুলিশের সামনে দিয়েই মোটরবাইকে পিছনে এক তরুণীকে বসিয়ে চলে যাচ্ছে যুবক, একই মোটরবাইকে তিন-চার জন কিশোর। এমনকী পুলিশের সামনে দিয়ে দু’কানে হেডফোন দিয়ে পিছনে বন্ধুকে বসিয়ে দুর্বার গতিতে বেরিয়ে গেল গেঞ্জি-বারমুডা পরা এক কিশোরও। বলা বাহুল্য, হেলমেট নেই কারও মাথাতেই। এবং চোখের সামনে সব ঘটতে থাকলেও হেলদোল নেই পুলিশের।
ব্যতিক্রম শুধু গড়িয়াহাট মোড়। গ্রিন পুলিশ-সহ চার পুলিশকর্মী রাস্তায় নেমে ট্রাফিকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। বহুক্ষণ দাঁড়িয়েও হেলমেটহীন কাউকে নজরে পড়ল না। তবে মহাত্মা গাঁধী রোডের মোড়, মানিকতলা মোড়, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, চিংড়িহাটা মোড় ঘুরেও দেখা গেল কম-বেশি একই চিত্র।
বিনা হেলমেটে যাতায়াত আইনত দণ্ডনীয়। দুর্ঘটনায় প্রাণহানির আশঙ্কাও থেকেই যায়। তবু কেন বহু মোটরবাইক-সওয়ারি বিনা হেলমেটে যাতায়াত করতেই বেশি পছন্দ করেন? উত্তম সাহা নামে সিটি কলেজের এক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রের জবাব, “হেলমেট ছাড়া মোটরবাইকে স্পিড তুলতে ফাটাফাটি লাগে।” বেসরকারি সংস্থার কর্মী সৌম্যদীপ রায়চৌধুরী বলছেন, “এই গরমে হেলমেটের বোঝা মাথায় নিয়ে চলতে বড় অস্বস্তি হয়।”
বিনা হেলমেটে মোটরবাইকে তুমুল গতিতে যাতায়াতের প্রবণতা যে কতটা মারাত্মক, প্রায়শই বিভিন্ন দুর্ঘটনাই তার প্রমাণ। পুলিশের এক কর্তার মতে, প্রতি বছরই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মৃত ও আহতের সংখ্যার হার। যার বেশির ভাগই ঘটে হেলমেট না থাকার কারণে। জরিমানাও করা হয় বাইক আরোহীদের। লালবাজার সূত্রের খবর, ২০১১ সালে এই খাতে জরিমানা বাবদ আদায় হয়েছে ১ কোটি ২ লক্ষ ৮ হাজার ৬০০ টাকা। ২০১২ এবং ২০১৩ সালে যার পরিমাণ যথাক্রমে ৯০ লক্ষ ৬৬ হাজার ৩০০ টাকা এবং ৮৭ লক্ষ ১২ হাজার ২০০ টাকা। ওই পুলিশকর্তা জানান, খুব কম সময়ে খুব বেশি গতি তোলার মোটরবাইকই বেশি পছন্দ করে এখনকার তরুণ প্রজন্ম। বেশি রাতে এবং ভোরের দিকে ফাঁকা রাস্তায় বিনা হেলমেটে প্রায়শই বিভিন্ন রাস্তায় মোটরবাইকে প্রচণ্ড গতিতে রেষারেষি করতেও দেখা যায়। অনেক সময় প্রচণ্ড গতির মোটরবাইক এক দিকে কাত করে স্ট্যান্ড ফেলে দিয়ে রাস্তায় ঘষে আগুনের ফুলকি বার করার প্রবণতাও দেখা যায় অনেক তরুণের মধ্যে।
এমন বেপরোয়া মোটরবাইক চালানো রুখতে কতটা তৎপর পুলিশ? কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “যতটা কঠোর ভাবে সম্ভব প্রতিটি মোড়ে নজরদারি চালানো হয়। সচেতনতামূলক প্রচার ছাড়াও প্রতি সপ্তাহে ধরপাকড়, বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে জরিমানাও করা হয়। তবে কিছু জায়গায় সুফল পেলেও বেশির ভাগ জায়গায় নিয়মভঙ্গ চলছেই।” তাঁর মতে, ছোটবেলা থেকেই স্কুলপাঠ্যের মাধ্যমে ট্রাফিক-সচেতনতা রপ্ত করা উচিত সকলের। মানুষের নিজেদের সচেতনতা না বাড়লে শুধু পুলিশের পক্ষে এই প্রবণতা রোখা মুশকিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy