স্তব্ধ: মিছিলের জেরে যানজট। বুধবার, বি বা দী বাগে। —নিজস্ব চিত্র।
নোট বাতিলের বিক্ষোভ-মিছিলে রক্ষা নেই, ধর্মীয় সম্প্রদায়ের শোভাযাত্রা দোসর!
নোট বাতিলের বর্ষপূর্তিতে শাসক এবং বিরোধী দলের বিভিন্ন কর্মসূচি তো ছিলই। সেই সঙ্গে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের শোভাযাত্রা বুধবার দুর্ভোগ বাড়ল শহর জুড়ে। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, চৌরঙ্গি রোড, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, এম জি রোড, লেনিন সরণি, এস এন ব্যানার্জি রোডের মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যান চলাচল ব্যাহত হয়। বামেদের মিছিলের ফলে বিকেলের দিকে বেশ কিছু ক্ষণের জন্য অচল হয়ে যায় ডালহৌসি চত্বরও। শহর জুড়ে তৈরি হওয়া এই অচলাবস্থা কাটতে সন্ধ্যা পেরিয়ে যায়। নাজেহাল মানুষ রাস্তা এড়িয়ে পাতাল পথে মেট্রোয় উঠতে গেলেও পড়েন প্রচণ্ড ভিড়ের চাপে।
নোট বাতিলের বর্ষপূর্তিতে রাজ্য জুড়ে শাসকদলের প্রতিবাদ মিছিল করার কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সেই মতো পাড়ায় পাড়ায় এ দিন কালা দিবস পালন করে তৃণমূল। নিজের নিজের এলাকায় এ দিন দুপুর থেকে মিছিল বার করেন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা। পুলিশ জানায়, শিয়ালদহ, ধর্মতলা, হাজরা, বেহালা, জোকা, গড়িয়া, যাদবপুর, গড়িয়াহাট, টালিগঞ্জ, গিরিশ পার্কের মতো বিভিন্ন জায়গা থেকে মিছিল বেরোয়। যার ফলে সে সব চত্বরে বিঘ্নিত হয় যান চলাচল। বড় রাস্তার যানজট এড়িয়ে অলিগলি দিয়ে মেট্রো স্টেশনে নিয়ে যেতে সাত টাকার জায়গায় কুড়ি টাকা হাঁকেন অটোচালকেরা।
বেহালায় এ দিন মিছিলে হাঁটতে দেখা যায় কলকাতা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। একই ভাবে টালিগঞ্জে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং গিরিশ পার্কে স্মিতা বক্সী নোট বাতিলের প্রতিবাদে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি-র বিরুদ্ধে মিছিল বার করেন। পুলিশ জানায়, ওই সব মিছিল বড় আকারে না হলেও রাস্তার মাঝখানে দিয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হয় গাড়ি চলাচল।
এ দিকে, নোট বাতিলকে কালো টাকা-বিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে মনে রেখে এ দিন ‘উজালা দিবস’ পালন করে বিজেপি। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ এবং যদুনাথ দে স্ট্রিট থেকে বিজেপি কর্মীদের একটি মিছিল বেরোয়। মিছিলটি বিজেপি-র রাজ্য দফতর পর্যন্ত যাওয়ার কথা ছিল। অভিযোগ, মিছিল শুরু হলে তৃণমূলের তরফে বিজেপি কর্মীদের মারধর করা হয়। এর পরেই পুলিশের সামনে রাস্তার মাঝখানে গার্ড রেল ফেলে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউতে অবরোধ করেন বিজেপি সর্মথকেরা। প্রায় কুড়ি মিনিট অবরোধ চলার পরে কেন্দ্রের শাসকদলের সদস্যেরা বৌবাজার থানা ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিজেপি-র প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবরোধ করেন দলের মহিলা শাখার কর্মীরা। পুলিশ জানায়, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ থেকে বিজেপি সরে গেলে একই জায়গায় অবরোধ করেন তৃণমূলের সর্মথকেরা। ওই তিন অবরোধের জন্য মধ্য এবং উত্তর কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় যানজট হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। একই সময়ে রাসবিহারী মোড়ের কাছে বিজেপি-র একটি মঞ্চ ভেঙে সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যার প্রতিবাদে সেখানে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। ওই সময়ে বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে অবস্থা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ।
লালবাজার সূত্রের খবর, বিজেপি এবং তৃণমূলের মিছিল শেষ হয়ে রাস্তা স্বাভাবিক হওয়ার মুখে বেলগাছিয়া থেকে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের শোভাযাত্রা শ্যামবাজার, বিধান সরণি, অরবিন্দ সরণি, এম জি রোড হয়ে বড়বাজারের শ্রী হরিরাম গোয়েঙ্কা স্ট্রিটে যায়। পুলিশের দাবি, এর ফলে উত্তর কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে যান চলাচাল বিঘ্নিত হয়। পুলিশের অবশ্য দাবি, বিভিন্ন রাস্তায় গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া যানজট তীব্র আকার নেয়নি।
পুলিশ সূত্রের খবর, এই সব শেষ হওয়ার পরে নোট বাতিল নিয়ে বামফ্রন্টের একটি মিছিলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় অফিস ফেরত যাত্রীদের। রামলীলা ময়দান থেকে মৌলালি, এস এন ব্যানার্জি রোড, গণেশ অ্যাভিনিউ, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট হয়ে লালবাজারের পাশ দিয়ে মিছিলটি যায় অফিস পাড়ায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে। সেখানে তাঁরা বিক্ষোভ দেখান। কয়েক হাজার সর্মথকের ওই মিছিল সন্ধ্যায় ব্রেবোর্ন রোড পেরোনোয় বেশ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে যান চলাচাল। হাওড়ার দিক থেকে আসা গাড়ির লস্বা লাইন পৌঁছে যায় ব্রেবোর্ন রোড উড়ালপুলের উপরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy