অনুভব: ব্রেল বোর্ডে পুজোর বর্ণনা পড়ছেন এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দুই সদস্য। শুক্রবার, দক্ষিণ কলকাতার এক মণ্ডপে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
নীল টুকরো টুকরো কাগজে আকাশের আভাস। সেখান থেকে নেমে এসেছে অসংখ্য রুপোলি পাখি। মাতৃমূর্তি তামাটে রঙের। মায়ের কাছে প্রার্থনা একটাই— মৃত্যু মিছিল বন্ধ হয়ে ফিরুক শান্তি। মানুষ থাকুন নিশ্চিন্তে।
ত্রিধারা সম্মিলনীর মণ্ডপে দাঁড়িয়ে পুজোর এমন স্পর্শই পেলেন দু’জন মানুষ। ব্রেল বোর্ড-এর মাধ্যমে। তাঁরা দৃষ্টিহীন। পুজোর দিনগুলোয় শহরে চলে বিচিত্র থিম, আলো ঝলমলে মণ্ডপ, নজরকাড়া প্রতিমার কার্নিভ্যাল। তার স্বাদ নিতে মণ্ডপে মণ্ডপে ঢল নামে মানুষের। কিন্তু এই আনন্দ থেকে অনেকাংশে বঞ্চিত থেকে যান দৃষ্টিহীন মানুষেরা। মণ্ডপে পৌঁছলেও তাঁদের কাছে অধরা থেকে যায় পুজোর রূপ-রং।
উৎসবের আনন্দে দৃষ্টিহীন মানুষদের সামিল করতে সমাজকল্যাণ দফতরের সহায়তায় শহরের ১০টি মণ্ডপে এই ব্রেল বোর্ড রাখার আয়োজন করেছে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। পুজোর থিম থেকে শুরু করে মণ্ডপসজ্জা, প্রতিমার রূপ থেকে আলোকসজ্জার বর্ণনা— সবই থাকছে ওই বোর্ডে। শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা উদ্বোধন করলেন এই বোর্ডের। পরে পুজো উদ্যোক্তাদের হাতে তুলে দেওয়া হল সেগুলি।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির পক্ষে দেবজ্যোতি রায় জানালেন, ২০১২ থেকে তাঁরা একটি ব্রেল পুজো গাইড প্রকাশ করে আসছেন। সেখানে বিভিন্ন পুজোর অবস্থান ও পথ-নির্দেশ থাকে। কিন্তু দৃষ্টিহীন মানুষেরা মণ্ডপে গেলে তাঁদের নির্ভর করতে হয় কারও উপরে। কেউ না বলে দিলে পুজোর থিম বা মণ্ডপসজ্জা অনুভব করতে পারেন না। তাই গত বছর পরীক্ষমূলক ভাবে একটি মণ্ডপে ব্রেল গাইড রাখা হয়েছিল, যাতে কারও সাহায্য ছাড়াই দৃষ্টিহীন মানুষেরা জেনে নিতে পারেন ওই পুজোটি সম্পর্কে। এ বছর সেই ভাবনাকেই আরও ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তাঁরা। পরিকল্পনা রয়েছে আগামী বছর এই প্রচেষ্টায় আরও পুজো কমিটিকে সামিল করার।
ত্রিধারা সম্মিলনী ও কাশী বোস লেন পুজো কমিটির তরফে জানানো হয়, ভিড়ের মধ্যে সাহায্য করার জন্য থাকবেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। ব্রেল বোর্ড রাখা থাকবে নির্দিষ্ট ঘেরা জায়গায়। দৃষ্টিহীন মানুষেরা তাঁদের সুবিধা মতো পড়ে নিতে পারবেন সেটি।
এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘সমাজকল্যাণ দফতরের তরফে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের জন্য প্রতি বছরই নানা আয়োজন হয়। উৎসবে তাঁরা যাতে ব্রাত্য না হন, সে জন্যই এমন ব্যবস্থা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy