Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে তলিয়ে গেল কিশোর

পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ বেলেঘাটার সুভাষ সরোবরে দুর্ঘটনাটি ঘটে। মৃত কিশোরের নাম ধীরজ শর্মা। বাড়ি এন্টালি থানার মুন্সির বাজার রোড এলাকায়। সে স্থানীয় একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত।

ধীরজ শর্মা

ধীরজ শর্মা

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৪২
Share: Save:

ছুটির দিনে সকালে এন্টালি থেকে বেলেঘাটায় খেলতে গিয়েছিল ছয় বন্ধু। পরে স্থির হয় সুভাষ সরোবরে এক সঙ্গে স্নান করতে নামবে তারা। কিন্তু সাঁতার জানত না কেউই। হঠাৎই তাদের মধ্যে এক কিশোর একাই জলে নেমে পড়ে। তাকে তলিয়ে যেতে দেখে বন্ধুকে বাঁচাতে জলে ঝাঁপ দেয় বছর পনেরোর আরও এক কিশোর। সাঁতার না জানায় এক সঙ্গে তলিয়ে যেতে থাকে দু’জনেই। তখন সরোবরে স্নান করছিলেন আরও কয়েক জন। তাঁরাই কোনও মতে এক জনকে উদ্ধার করেন। কিন্তু সাঁতার না জানা সত্ত্বেও শুধুমাত্র বন্ধুকে বাঁচাতে যে কিশোর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তাকে বাঁচানো সম্ভব হল না। প্রায় ৪৫ মিনিট পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।

পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ বেলেঘাটার সুভাষ সরোবরে দুর্ঘটনাটি ঘটে। মৃত কিশোরের নাম ধীরজ শর্মা। বাড়ি এন্টালি থানার মুন্সির বাজার রোড এলাকায়। সে স্থানীয় একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। আশঙ্কাজনক অবস্থায় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে অন্য কিশোর আরিয়ান মালিকে।

পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে এন্টালি থেকে ছয় বন্ধু সুভাষ সরোবরের মাঠে খেলতে গিয়েছিল। পরে বেলা ১১টা নাগাদ তারা সকলে মিলে এক সঙ্গে স্নান করতে নামবে বলে স্থির করে। কিন্তু বাকিরা পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকার সময়েই আরিয়ান একা জলে নেমে তলিয়ে যেতে শুরু করে। তাকে বাঁচাতে নেমে ধীরজও তলিয়ে যায়। পরে এলাকার সুইমিং ক্লাবের এক প্রশিক্ষক পরে ধীরজের দেহটি জল থেকে উদ্ধার করেন।

এ দিন ধীরজের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন তার মা রহমতি শর্মা। তার কাকা ক্ষুব্ধ অজয় শর্মা বলেন, ‘‘সরোবর পাঁচিল দিয়ে ঘেরা থাকলে এবং নিরাপত্তারক্ষীদের নজরদারি থাকলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না।’’ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ছুটির দিনে ধীরজ বন্ধুদের সঙ্গে প্রায়ই সেখানে খেলতে যেত। বন্ধু-অন্ত প্রাণ ধীরজ এ দিনও জানিয়ে গিয়েছিল তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে।

এ দিনের ঘটনার পরেই প্রশ্ন উঠেছে সুভাষ সরোবরের নিরাপত্তা নিয়ে। প্রায় ৪০ একরের সরোবর-সহ গোটা এলাকাটি মোট ৯৭ একরের। কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (কেএমডিএ) তত্ত্বাবধানে থাকা এই বিশাল এলাকাটিতে কোনও পাঁচিল নেই। ফলে যে কেউ সেখানে অবাধে প্রবেশ করতে পারেন। যুব বিশ্বকাপের জন্য মাস তিনেক আগে দু’টি শিফটে ২৬ জন নিরাপত্তারক্ষীকে নিয়োগ করা হলেও সেটা যে যথেষ্ট নয় তা মেনে নিয়েছেন অধিকাংশ নিরাপত্তারক্ষীই।

কেএমডিএ-র এক আধিকারিক জানান, মঙ্গলবারের ঘটনাটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তবে সুভাষ সরোবর ঘিরে দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। কারণ এর এক দিকে মেট্রো রেলের কাজ চলছে, অন্য দিকে রাস্তা থাকায় গাড়িও যাতায়াত করে। রবীন্দ্র সরোবরের মতো এখানেও জলে নামা এবং জল দূষণ রোধে কড়া আইন প্রণয়ন প্রয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE