এতদিন যাত্রীরা ধরা পড়ছিলেন। সোনা পাচারে এ বার ধরা পড়লেন কলকাতা বিমানবন্দরে কর্মরত এক যুবক। শুল্ক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই যুবকের নাম কেশব নায়েক (৩২)। বাড়ি কৈখালিতে। সোমবার ভোরে কলকাতা বিমানবন্দরের ভিতরে তাঁকে তল্লাশি করায় জুতোর ভিতর থেকে এক কিলোগ্রামের দু’টি সোনার বার পাওয়া গিয়েছে। যার বাজারদর প্রায় ৫২ লক্ষ টাকা বলে শুল্ক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, কেশব একটি গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সংস্থার কর্মী। বিমান কলকাতায় নামার পরে সিঁড়ি লাগানো, যাত্রীদের মালপত্র নামানো-ওঠানো, বিমান পরিষ্কারের মতো কাজ করে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সংস্থা। বিভিন্ন বিমানসংস্থার হয়ে কলকাতায় গোটা তিনেক এমন গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সংস্থা কাজ করে। সূত্রের খবর, এ দিন ভোরে ব্যাঙ্কক থেকে স্পাইসজেটের বিমান কলকাতায় আসে। সন্দেহ করা হচ্ছে, সেই বিমানের কোনও এক যাত্রীর সঙ্গে আগে থেকেই যোগাসাজস হয়েছিল কেশবের। পরিকল্পনা মাফিক সেই যাত্রী বিমান থেকে নেমে টার্মিনালে ঢুকে আন্তর্জাতিক লাউঞ্জের শৌচালয়ে যান। সেখানেই হাতবদল হয় সোনা। এর পর ওই যাত্রী নিশ্চিন্তে শুল্ক দফতরের ঘেরাটোপ পেরিয়ে ঢুকে যান শহরে। সকাল ৬টা নাগাদ সোনার বার দু’টি জুতোর ভিতরে লুকিয়ে কেশব টার্মিলানের একতলা থেকে লিফ্টে উঠে দোতলায় যাচ্ছিলেন। সেই সময়ে শুল্ক দফতরের অফিসারদের সন্দেহ হয়। তাঁরা কেশবের পথ আটকান।
এক শুল্ক অফিসারের কথায়, ‘‘গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং যাঁরা করেন, তাঁদের টার্মিনালের ভিতরে আসার কথা নয়। কেশবকে জেরা করার পরে তিনি পরিচয় দিলে সন্দেহ ঘনীভূত হয়।’’ পরে জেরার মুখে তিনি আরও দুই ব্যক্তির নাম বলেন। যাঁর মধ্যে ওই যাত্রী ছাড়াও কলকাতা শহরেরও এক ব্যক্তি রয়েছেন। বিমানবন্দরের বাইরে ওই ব্যক্তির হাতেই সোনা তুলে দেওয়ার কথা ছিল কেশবের।
জানা গিয়েছে, ব্যাঙ্কক থেকে নিয়মিত সোনা পাচার চলছে। কখনও-সখনও যাত্রীদের কাছ থেকে সেই সোনা পাওয়া যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বিমানের আসনের তলায়, শৌচালয়ে লুকিয়ে রেখে দেওয়া হচ্ছে সোনা। যাঁরা বিমান পরিষ্কার করতে যাচ্ছেন, তাঁদের কেউ সেই সোনা পাচার করে দিচ্ছেন বিমানবন্দরের বাইরে। শুল্ক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়মিত সোনা পাচারের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে ২০১৫ সালের গোড়ার দিকে কলকাতা বিমানবন্দরের কয়েক জন কর্মীকে ধরাও হয়েছিল। তার পর থেকে সোনা পাচারের প্রবণতা কমে যায়। সম্প্রতি সেই প্রবণতা আবার বেড়েছে। শুল্ক দফতরের এক অফিসারের কথায়, ‘‘ব্যাঙ্কক থেকে আসা প্রতিটি বিমানে প্রায় নিয়মিত ভাবে তল্লাশি চালানো হচ্ছিল। অন্য সমস্ত সংস্থার বিমান থেকে সোনা পাওয়া গেলেও স্পাইসজেটের বিমান থেকে তা ততটা পাওয়া যাচ্ছিল না। সন্দেহ হয়, এই সংস্থার গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এর কর্মীরা পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে।’’
ওই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সংস্থার ডিরেক্টর দিলীপ দাস জানিয়েছেন, তাঁরা যে যুবকদের নিয়োগ করেন তাঁদের সম্পর্কে পুলিশি তদন্ত হয়। ফলে, কারও সঙ্গে অপরাধ জগতের কোনও যোগ থাকলে তাঁকে চাকরিতে নেওয়া হয় না। পরে কেউ জড়িয়ে গেলে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। কেশবকে এ দিনই বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy