Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

কফির কাপে স্মৃতি-সুধা, চুমুক অমর্ত্যের

সাবেক খাড়াই সিঁড়ি, ‘আপনি পারবেন হেঁটে উঠতে?’ চাপা আশঙ্কা ছিল প্রশ্নটায়। চুরাশির চৌকাঠে পা-রাখা মানুষটি সে চিন্তাকে মোটে আমল দিলেন না। সিধে উঠে গেলেন কফি হাউসের সিঁড়ি দিয়ে। স্মৃতির সরণি পার হয়ে দোতলার সেই বিখ্যাত উঁচু সিলিংয়ের নীচে পৌঁছে গেলেন তিনি।

কফি হাউসে অমর্ত্য সেন। সঙ্গে হার্ভার্ডের অধ্যাপক সুধীর আনন্দ। বুধবার। — নিজস্ব চিত্র

কফি হাউসে অমর্ত্য সেন। সঙ্গে হার্ভার্ডের অধ্যাপক সুধীর আনন্দ। বুধবার। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৫৭
Share: Save:

সাবেক খাড়াই সিঁড়ি, ‘আপনি পারবেন হেঁটে উঠতে?’ চাপা আশঙ্কা ছিল প্রশ্নটায়।

চুরাশির চৌকাঠে পা-রাখা মানুষটি সে চিন্তাকে মোটে আমল দিলেন না। সিধে উঠে গেলেন কফি হাউসের সিঁড়ি দিয়ে। স্মৃতির সরণি পার হয়ে দোতলার সেই বিখ্যাত উঁচু সিলিংয়ের নীচে পৌঁছে গেলেন তিনি।

বুধবার, সন্ধে ছ’টা বাজব-বাজব তখন। কিছু ক্ষণের জন্য থমকে গেল আড্ডাধারীদের চিরকেলে সমুদ্রগর্জন মার্কা কলরোল। হতবাক কলেজ স্ট্রিট কফি হাউস দেখল, তার সামনে বহু যুগের ও-পার থেকে ফিরে আসা একটি মুখ। অমর্ত্য সেন। ১৯৫১-৫৩’য় তখনকার প্রেসিডন্সি কলেজের ছাত্র অমর্ত্যের বহু বিকেল কেটেছে এই কফি হাউসেই। বাঙালির সেই সাবেক আড্ডা-তীর্থে বসেই বন্ধু ও সহপাঠী সুখময় চক্রবর্তীর কাছে শুনেছিলেন কল্যাণ-অর্থনীতি (ওয়েলফেয়ার ইকনমিক্স)’তে অর্থনীতিবিদ কেনেথ অ্যারো-র নতুন গবেষণাপত্রের কথা। পরে এই বিষয়ের উপরে কাজের স্বীকৃতিতেই অমর্ত্য এক দিন নোবেল পাবেন। তাঁর নির্মাণের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কফি হাউসে বহু বছর বাদে ফের পা রাখলেন অর্থনীতিবিদ।

শিক্ষাজগতের সঙ্গে জড়িত দেশ-বিদেশের কয়েক জন বন্ধুকে নিয়ে তিনি এ দিন গিয়েছিলেন কলেজ স্ট্রিটের আর একটি স্মৃতিজড়িত জায়গাতেও। ১৩২ বছরের পুরনো দাশগুপ্তদের বইয়ের দোকানের সঙ্গেও অমর্ত্যের যোগাযোগ কলেজ-জীবন থেকেই। অর্থনীতিরই হোক, বা বাংলা-সংস্কৃতে হঠাৎ দরকার হওয়া কোনও বইয়ের খোঁজ— কলকাতায় এলেই অমর্ত্য বারবার এসেছেন ওই দোকানে। এ দিনও তেমনটাই ঘটেছিল। দোকানের কর্ণধার অরবিন্দ দাশগুপ্ত বলছিলেন, ‘‘আমাদের দোকানে বসে পুরনো কথা বলতে বলতেই ওঁর খেয়াল হল, কফি হাউসে যাবেন। তক্ষুণি গেলেনও সেখানে!’’

সাকুল্যে আধ ঘণ্টা অমর্ত্য ছিলেন কফি হাউসে। তাঁর সঙ্গী অধ্যাপক-বন্ধুরা ছাড়া যোগ দেন আনন্দ পাবলিশার্স-এর আধিকারিক সুবীর মিত্র। অমর্ত্য সেন এসেছেন জেনে চলে আসেন কফি হাউসের কর্তাব্যক্তিরা। কফি খেতে খেতে স্মৃতিচারণের অবকাশ মেলেনি, মেলার কথাও ছিল না। তাঁর সঙ্গে নিজস্বী তুলতে আবদারের ছড়াছড়ি। প্রথমটায় অবশ্য হঠাৎ তাঁকে সামনাসামনি দেখে একদল ছেলেমেয়ে হতভম্ব, তাঁদের দেখে নিজেই কথা বলেন অমর্ত্য। তাঁদের পড়াশোনার খবর নেন। প্রথম বার কফি হাউসে আসা আর এক তরুণ কোনও মতে বলেন, ‘‘আমি কি একবারটি ওঁকে ছুঁতে পারি?’’ জনৈক সঙ্গীর কাছে এই অভিলাষের কথা শুনে সহাস্য অমর্ত্য করমর্দনের জন্য হাত বাড়িয়ে দেন।

তবে প্রবীণ অর্থনীতিবিদের ঘনিষ্ঠ মহলের খবর, সিগারেটের ধোঁয়ায় খুব বেশি ক্ষণ ওই তল্লাটে থাকতে চাননি তিনি। অল্প দুধ দিয়ে কফি শেষ করেই উঠে পড়েন। সিঁড়ি বেয়ে নেমে হেঁটেই এগিয়ে যান কলেজ স্ট্রিটে দাঁড় করানো গাড়ির দিকে।

কয়েকটি মুহূর্তের পরিসরে জলজ্যান্ত কবেকার সিপিয়ারঙা অতীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

coffee house Amartya Sen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE