Advertisement
০৬ মে ২০২৪

রোগিণীর মৃত্যু, তাণ্ডব আমরিতে

পুলিশ ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতেরা হলেন মৃতার মামা মহম্মদ লালু এবং দিলনাওয়াজ খান, নাসিরুদ্দিন খান এবং গৌরব কুমার। বুধবার আলিপুর আদালতে মহম্মদ লালু জামিন পান কিন্তু বাকী তিন জনের পুলিশি হেফাজত হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৭ ০০:১১
Share: Save:

হাসপাতালের অধিকাংশ রোগী খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক, কয়েক জন হাসপাতাল কর্মী ও দু’জন পুলিশ কর্মী ছাড়া তখন বাইরের লোকজনের বিশেষ যাওয়া-আসা নেই। হঠাৎ কয়েক জন চিৎকার করে ছুটে গিয়ে হাসপাতালের সামনে রাখা ফুলের টব ছুড়ে মারল কাচের দরজায়। এর পরে প্রায় জনা পঞ্চাশ লোক হাসপাতালে ঢুকে তাণ্ডব চালাতে শুরু করে। হাতে সাইকেলের চেন নিয়ে হাসপাতালের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দুষ্কৃতীরা। সঙ্গে চলছে হুঙ্কার, ‘আরও লোক আসছে, দেখ নেব’— মঙ্গলবার রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালের ছবিটা ছিল এমনই। প্রায় ঘণ্টা দেড়েকের তাণ্ডবে আতঙ্কিত চিকিৎসকদের পাশাপাশি হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরাও।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, গড়ফা থানা এলাকার শহীদনগরের বাসিন্দা গুলনার খান (১৬) ২৭ সেপ্টেম্বর বেলা বারোটা নাগাদ আমরি হাসপাতালে ভর্তি হয়। তার জ্বর ও বমি হচ্ছিল। এনএস ১ পরীক্ষায় তার ডেঙ্গি ধরা পড়ে। ৩ অক্টোবর রাত পৌনে দশটা নাগাদ গুলনার মারা যায়। মৃত্যুর খবর জেনে পরিজনেরা প্রথমে দেহ নিয়ে যেতে রাজি হন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই হাসপাতাল থেকে তাঁরা বেরিয়ে যান। অভিযোগ, কয়েক ঘণ্টা পরে লোকজন এসে চড়াও হন। এর পরে হাসপাতালের তরফে লেক থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।

পুলিশ ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতেরা হলেন মৃতার মামা মহম্মদ লালু এবং দিলনাওয়াজ খান, নাসিরুদ্দিন খান এবং গৌরব কুমার। বুধবার আলিপুর আদালতে মহম্মদ লালু জামিন পান কিন্তু বাকী তিন জনের পুলিশি হেফাজত হয়।

যদিও গুলনারের পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালের গাফিলতিতে তার মৃত্যু হয়। কিন্তু শাস্তি পেতে হচ্ছে মৃতের পরিজনদের। বুধবার মৃতের দিদি রোশনী খান জানান, ভর্তির সময়ে চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন দু’দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবে গুলনার। কিন্তু ভর্তির পরের দিন থেকে হাসপাতাল জানাতে শুরু করে তার অবস্থা খারাপ। অভিযোগ, তাঁদের সম্মতি না নিয়েই গুলনারকে আইটিইউ-তে ভর্তি করা হয়েছিল। বিল বাড়ানোর জন্য রোগীর পরিজনদের বারবার নানা ভাবে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। রোশনী বলেন, ‘‘মারা যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেও ৭০ হাজার টাকার ওষুধ কেনায়। তার পরে জানায় ও মারা গিয়েছে।’’

কিন্তু রোগীর মৃত্যুতে হাসপাতাল ভাঙচুর কি যুক্তিসঙ্গত? রোশনীর কথায়, ‘‘ওই হাসপাতালকে শেষ করে দেওয়া হোক। সুস্থ বোনকে মেরে ফেলল। তবে, ভাঙচুরের সময় অনেকে ছিল। পুলিশ শুধু আমাদের বাড়ির লোকদের ধরল।’’

যদিও রোগীর পরিজনদের চিকিৎসায় গাফিলতি সংক্রান্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এক কর্তা জানান, গুলনার ভর্তি হওয়ার পরে তার পরিজনেরা হাসপাতালের কর্মী এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানাতে গেলেও গালাগালি করতেন রোগীর পরিজনেরা। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরিবারের সম্মতি নিয়ে ২৯ অক্টোবর তাকে আইটিইউ-তে ভর্তি করা হয়। সেই সম্মতির প্রমাণ পুলিশের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। ৩০ অক্টোবর গুলনারের পরিজনেরা আইটিইউ-তে ঢুকে কর্তব্যরত চিকিৎসককে নিগ্রহ করেন। এর পরে তাদের বিরুদ্ধে লেক থানায় অভিযোগ দায়ের করেন কর্তৃপক্ষ। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে দু’জন পুলিশ কর্মী হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকতেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও শেষ রক্ষা হল না।

গুলনারের দাদা বাপ্পা হাসপাতালের এই দাবি মানতে নারাজ। তিনি জানান, হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে চিকিৎসকেরা খারাপ ব্যবহার করতেন। টাকার জন্যও চাপ দেওয়া হত। হাসপাতালের বিরুদ্ধে তাঁরা লেক থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। ভাঙচুর সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘বাড়ির লোকের মাথার ঠিক ছিল না। হাসপাতাল জোর করছিল, দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছিল। জনতা আর সহ্য করতে পারেনি। কে বা কারা এই ভাঙচুরের সঙ্গে যুক্ত সেটা বলতে পারব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE