মহানগরের রাস্তায় পুলিশকে পেটানোর অভিযোগ এত দিন উঠছিল মূলত পুরুষদের বিরুদ্ধেই। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কর্তব্যরত ট্রাফিক কনস্টেবলকে মারধরের অভিযোগে এক মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিলজলা থানা এলাকার পঞ্চান্নগ্রামের ওই ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন মহিলার স্বামী এবং তাঁদের গাড়ির চালকও। তাঁরা তিলজলারই বাসিন্দা বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঠিক কী ঘটেছিল?
পুলিশ জানায়, সন্ধ্যায় ই এম বাইপাস দিয়ে নিজের গাড়িতে তিলজলার বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন ইলু রশিদ চট্টোপাধ্যায় নামের ওই মহিলা। পঞ্চান্নগ্রামের কাছে একটি মিনিবাস ওভারটেক করতে গিয়ে তাঁর গাড়ির লুকিং গ্লাসে ধাক্কা মারে। লুকিং গ্লাসটি ভেঙে যায়। কাছাকাছি মোড়ে যানবাহন সামলাচ্ছিলেন তিলজলা ট্রাফিক গার্ডের কনস্টেবল কল্যাণ রায়। মহিলা গাড়ি থেকে নেমে তাঁর কাছে গিয়ে মিনিবাসটিকে থামাতে অনুরোধ করেন। ওই কনস্টেবল সঙ্গে সঙ্গে মিনিবাসটিকে থামিয়েও দেন। তার পরেই মহিলার গাড়ির চালক শুভঙ্কর বিশ্বাস মিনিবাসের চালককে টেনে নামিয়ে বেধড়ক পেটাতে শুরু করেন। কল্যাণবাবু তখনকার মতো কোনও রকমে দু’জনকে ছাড়িয়ে দেন। গাড়িচালকের হাত থেকে ছাড়া পেয়েই মিনিবাস নিয়ে চম্পট দেয় চালক।
মিনিবাসের চালক পালিয়ে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ওই মহিলা। পুলিশের বিরুদ্ধে অকর্মণ্যতার অভিযোগ তুলে তিনি কল্যাণবাবুকেই মারতে শুরু করেন বলে পুলিশের অভিযোগ। মহিলার মারধরে গুরুতর আহত হন ওই কনস্টেবল। তাঁর জ্যাকেট-জামা ছিঁড়ে যায়। অন্য পুলিশকর্মীরা ছুটে এসে কল্যাণবাবুকে বাঁচান। খবর যায় তিলজলা থানায়। সেখান থেকে নির্মলা রায় নামে এক মহিলা অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর এবং অন্য পুলিশকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। তাঁরা ইলুদেবী এবং তাঁর গাড়ির চালককে পুলিশের গাড়িতে উঠে থানায় যেতে বলেন।
ইতিমধ্যে ইলুদেবীর কাছ থেকে ফোনে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন তাঁর স্বামী রশিদ রিয়াজ। অভিযোগ, স্ত্রীকে পুলিশের হাত থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য তিনিও পুলিশকর্মীদের সঙ্গে মারপিট শুরু করে দেন। স্বামীর সহযোগিতা পেয়ে ইলুদেবীও ফের মারমুখী হয়ে ওঠেন। তাঁর মারধরে জখম হন তিলজলা থানার ওই মহিলা মহিলা অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টরও। শেষ পর্যন্ত ইলুদেবী এবং তাঁর স্বামী ও গাড়ির চালককে গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের পরে তিন জনকেই গ্রেফতার করা হয়। ওই মহিলার গাড়িটিকেও আটক করা হয়েছে।
প্রাণ হাতে নিয়ে যাঁরা রাস্তায় যান-শাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করেন, সেই পুলিশকর্মীদের ইদানীং প্রায়ই মারধর খেতে হচ্ছে। বেপরোয়া গাড়ির রোষের মুখে পড়ে তাঁদের কারও কারও প্রাণহানিও ঘটেছে। গত রবিবার পার্ক স্ট্রিটের একটি নামী হোটেলের সামনে পুলিশ পেটানোর অভিযোগে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। বচসার জেরে ওই যুবক এক ট্যাক্সিচালককে মারধর করছিলেন। এক এএসআই এবং তাঁর সঙ্গী কনস্টেবল ওই যুবককে থামানোর চেষ্টা করেন। যুবকটি তখন এএসআই-কেও পেটান। তার আগের দিন সকালে বড়বাজারের রাস্তা থেকে কংক্রিটের চাঙড় তুলে জোড়াবাগান ট্রাফিক গার্ডের এক কনস্টেবলকে আঘাত করেছিল একটি লোক। কিছু দিন আগে পর্ণশ্রীতে গাড়ি পরীক্ষা করার সময় দুই পুলিশকর্মীকে মারধর করা হয়েছিল। পাটুলিতেও এক ট্রাফিক সার্জেন্টকে ঘুষি মেরে পালাতে গিয়ে গ্রেফতার হয় এক গাড়িচালক।
সাম্প্রতিক কালে রাস্তায় পুলিশের আক্রান্ত হওয়ার সব থেকে বড় ঘটনাটি ঘটে খিদিরপুরে। সেখানে রাস্তায় গাড়িতে তল্লাশি চালানোর সময় জুয়েল সাহা নামে এক তরুণ সার্জেন্টকে চাপা দিয়েছিল একটি লরি। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy