Advertisement
১১ মে ২০২৪

রক্তদান ঘিরে উত্তপ্ত কসবা, গ্রেফতার ৩

প্রজাতন্ত্র দিবসে কসবার ধানমাঠ এলাকার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় রক্তদান শিবিরের আয়োজনকারী ধানমাঠ শিবমন্দির কমিটির কয়েক জন সদস্য আহত হয়েছেন।

ঘটনায় আহত পরিতোষ বিশ্বাস।

ঘটনায় আহত পরিতোষ বিশ্বাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৩২
Share: Save:

আয়োজন হয়েছিল রক্তদান শিবিরের। কিন্তু শেষ হল রক্তপাতে!

শুক্রবার, প্রজাতন্ত্র দিবসে কসবার ধানমাঠ এলাকার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় রক্তদান শিবিরের আয়োজনকারী ধানমাঠ শিবমন্দির কমিটির কয়েক জন সদস্য আহত হয়েছেন। মহিলারাও রেহাই পাননি বলে অভিযোগ। ভাঙচুর করা হয়েছে কয়েকটি গা়ড়ি এবং দোকানেও। এই ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম অমিত যাদব, ছোট্টু মাঝি ওরফে দুঁদে এবং বিশ্বজিৎ সাহা ওরফে টোটন। শনিবার রাত পর্যন্ত দিনু যাদব-সহ কয়েক জন ফেরার। অভিযুক্তেরা ধানমাঠ সংলগ্ন প্রান্তিক পল্লির বাসিন্দা। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, শ্লীলতাহানি-সহ একাধিক জামিনঅযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।

গত বছর খানেকে বারবার গোলমালে উত্তপ্ত হয়েছে কসবা। গত অগস্ট মাসে এই প্রান্তিক পল্লিতেই সিন্ডিকেট ব্যবসা নিয়ে হাঙ্গামা হয়েছিল। সে বার আক্রান্ত হয়েছিল দিনুর দলবল। অক্টোবর মাসেও স্থানীয় কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ এবং বিধায়ক জাভেদ খানের গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল বাধে। শুক্রবারের গোলমালের অভিযুক্তেরা স্থানীয় একটি ইমারতি সিন্ডিকেট এবং শাসক দল ঘনিষ্ঠ বলে খবর। ধানমাঠ এলাকার অনেকেই জানিয়েছেন, অভিযুক্তেরা স্থানীয় কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষের অনুগামী বলে পরিচিত। যদিও সুশান্তবাবু এই অভিযোগ উড়িয়ে বলেছেন, ‘‘ওই দুষ্কৃতীরা আমার ঘনিষ্ঠ বলে কেউ হাওয়ায় খবর ছড়ালেই তা সত্যি হয় না। বরং শুক্রবার আক্রান্তদের রক্তদানে আমি উপস্থিত ছিলাম।’’

কী হয়েছিল শুক্রবার?

ধানমাঠ শিবমন্দির কমিটির সদস্যেরা জানান, বিকেল তিনটে নাগাদ রক্তদানের অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গিয়েছিল। তার পরে সাউন্ডবক্সে গান বাজানো হচ্ছিল। বিকেল পাঁচটা নাগাদ দিনুর নেতৃত্বে প্রান্তিক পল্লির এক দল যুবক এসে ভাঙচুর শুরু করে। কাছেপিঠে থাকা মন্দির কমিটির সদস্যদের বাঁশ, রড, ইট দিয়ে মারতে শুরু করে। লাঠির ঘায়ে পরিতোষ বিশ্বাস এবং রাজীব মিস্ত্রি নামে দু’জনের মাথা ফেটে যায়। পরিতোষবাবুর ডান পায়ের পাতা ইট দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয়।
তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন অশোক সাউ নামে আরও এক জন। ওই পাড়ার মহিলাদের গায়েও হাত দেওয়া হয়েছে। ওই এলাকার একটি সেলুন এবং আরও কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করা হয়। লণ্ডভণ্ড করে দেওয়া হয় অনুষ্ঠানের সাউন্ডবক্সও। মত্ত অবস্থায় বেশ কিছু ক্ষণ তাণ্ডব চালিয়ে চলে যায় দিনুরা।

এলাকায় পুলিশি পাহারা। শনিবার, কসবার প্রান্তিক পল্লিতে।

শনিবার প্রান্তিক পল্লিতে গেলে সেখানকার মহিলারা জানান, শিবমন্দিরের যুবকেরাই আগে এসে মারধর করেছিল। কিন্তু কারা মার খেয়েছিলেন, তা বলতে পারেননি। দিনুর মায়ের দাবি, তাঁর ছেলে ওই এলাকায় থাকে না।

পুলিশের একটি সূত্রের খবর, একই দলের ঘনিষ্ঠ হলেও রক্তদান উৎসবে দিনুদের অংশীদারি ছিল না। তা নিয়েই ক্ষোভ ছিল তাদের। অনুষ্ঠান মিটে যাওয়ার পরেও কেন গান বাজছে, এই ছুতো তুলেই হাঙ্গামা বাধানো হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, শিবমন্দির এলাকায় বেশ কিছু নির্মাণ হচ্ছে। ওই পাড়ায় নিজেদের দাপট বজায় রাখার জন্য রক্তদানে ভিড়তে চেয়েছিল দিনুরা। কিন্তু তা না হওয়ায় হাঙ্গামার পথ বেছে নিয়েছে ওরা।

পুলিশ সূত্রের খবর, দিনু ঘটনার পর থেকেই মোবাইল ফোন বন্ধ করে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে। তাঁর এবং বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। লালবাজারের এক পুলিশকর্তা এ দিন বলেন, ‘‘তল্লাশি চলছে। আশা করছি, দিনু বেশি দিন পালিয়ে থাকতে পারবে না।’’

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE