Advertisement
১১ মে ২০২৪

শাসক দলের গোষ্ঠী-লড়াই, আবার উত্তপ্ত শ্যামপুকুর

ফের শ্যামপুকুর কেন্দ্র। ফের তৃণমূলের গোষ্ঠী লড়াইয়ে উত্তপ্ত এলাকা। ভোটের রাত থেকেই লাগাতার চলা সন্ত্রাসে জেরবার এলাকা। শুধু বদলে বদলে যাচ্ছে পাড়াগুলো। প্রথম দিকে গোষ্ঠী সংঘর্ষের অভিযোগ এসেছিল দর্জিপাড়া, গ্রে স্ট্রিট, অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিট চত্বর থেকে। নতুন সরকার গঠনের পরেও কাটল না আতঙ্ক। এ বার একই ধরনের অভিযোগ এল শিবশঙ্কর মল্লিক লেন থেকে।

ভাঙচুরের পরে। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র

ভাঙচুরের পরে। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৬ ০১:৫১
Share: Save:

ফের শ্যামপুকুর কেন্দ্র। ফের তৃণমূলের গোষ্ঠী লড়াইয়ে উত্তপ্ত এলাকা।

ভোটের রাত থেকেই লাগাতার চলা সন্ত্রাসে জেরবার এলাকা। শুধু বদলে বদলে যাচ্ছে পাড়াগুলো। প্রথম দিকে গোষ্ঠী সংঘর্ষের অভিযোগ এসেছিল দর্জিপাড়া, গ্রে স্ট্রিট, অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিট চত্বর থেকে। নতুন সরকার গঠনের পরেও কাটল না আতঙ্ক। এ বার একই ধরনের অভিযোগ এল শিবশঙ্কর মল্লিক লেন থেকে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরনো বিবাদকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ে শনিবার রাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে শ্যামপুকুরের শিবশঙ্কর মল্লিক লেন এলাকা। পুলিশ এই ঘটনায় ওই রাতেই স্থানীয় যুব তৃণমূল নেতা খোকন দাস-সহ চার জন তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করেছে।

বিধানসভা ভোটের ফলাফল বেরোনোর পরের রাতেই শ্যামপুকুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত কলকাতা পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দর্জিপাড়া বস্তি এলাকায় স্থানীয় তৃণমূল নেতা স্বপন ভদ্রের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। আক্রমণকারীরা তৃণমূলেরই কর্মী বলে আক্রান্তের তরফে পুলিশে অভিযোগ জমা পড়ে। একই ভাবে ২১মে শ্যামপুকুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিট এলাকায় শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়াই। ওই ঘটনায় শ্যামপুকুর থানার সার্জেন্ট প্রতীক শী আহত হন। পরপর গোষ্ঠী লড়াইয়ে জেরবার সেই শ্যামপুকুর এলাকাতেই শনিবার আবার এই ঘটনা ঘটে।

ঠিক কী ঘটেছিল ওই রাতে?

স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই রাতে শিবশঙ্কর মল্লিক লেনে শীতলাপুজো উপলক্ষে অনুষ্ঠান চলছিল। অভিযোগ, রাত বারোটা নাগাদ তৃণমূল নেতা প্রসূন ঘোষের অনুগামী ১০-১২ জন তৃণমূল সমর্থক স্থানীয় তৃণমূল নেতা খোকন দাসের অনুগামীদের উপরে আক্রমণ করে। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে হাতাহাতিতে আহত হন প্রসূন ঘোষের অনুগামী চার তৃণমূল সমর্থক। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার সময়ে বুড়ি ফটিক নামে এক প্রসূতি আহত হন। বুড়িকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান খোকন। ওই ঘটনার আধ ঘণ্টা পরে প্রসূন ঘোষের অনুগামী তৃণমূল সমর্থকেরা খোকন দাসের বাড়ি আক্রমণ করে। অভিযোগ, বাড়ির সামনে খোকনের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এই ঘটনার পরেই দুই গোষ্ঠীর তরফে শ্যামপুকুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ রাতেই খোকন দাস, তারক ঘোষ, কৌশিক মাঝি ও নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে। ধৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশ মারধর, ভাঙচুর ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে মামলা রুজু করে। রবিবার ধৃতদের আদালতে তোলা হলে বিচারক ৩১ মে পর্যন্ত পুলিশ হেফাজত দেন।

গত কলকাতা পুরনির্বাচনের পর থেকেই ১০ নম্বর ওয়ার্ডে শ্যামপুকুর এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা বেড়ে চলেছে। উত্তর কলকাতায় দুই মন্ত্রী-বিধায়ক সাধন পাণ্ডে ও শশী পাঁজার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা নতুন নয়। গত পুর-নির্বাচনে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের তরফে প্রার্থী করা হয়েছিল বেলগাছিয়ার বাসিন্দা প্রসূন ঘোষকে। কিন্তু পুর-নির্বাচনে প্রসূন হেরে যাওয়ার পর থেকেই অভিযোগ ওঠে, সাধন পাণ্ডের অনুগামী খোকন দাস চক্রান্ত করে প্রসূনকে হারিয়েছেন। অভিযোগ, পুর-নির্বাচনের পর থেকেই ১০ নম্বর ওয়ার্ডে লাগাতার সন্ত্রাসের ঘটনায় শঙ্কিত ধৃত খোকন দাসের স্ত্রী অনিতা দাস। অনিতা বলেন, ‘‘আমরা সক্রিয় ভাবে তৃণমূলকর্মী। আমার স্বামীকে ফাঁসানো হয়েছে। প্রসূন ঘোষের নেতৃত্বে বহিরাহত গুন্ডাবাহিনী যে ভাবে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে সন্ত্রাস চালাচ্ছে, তাতে আমাদের সাধারণ জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা থামান। আমরা এলাকায় শান্তি চায়।’’

কিন্তু ইতিমধ্যেই গোষ্ঠী লড়াই নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধায়ক, সাংসদদের নিয়ে এক বৈঠকে মূলত সব্যসাচী দত্ত, কাকলি ঘোষদস্তিদারকে লক্ষ্য করে হলেও এই দ্বন্দ্ব বন্ধ
করতে গোটা দলকেই সতর্ক করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তা সত্ত্বেও যে গোষ্ঠী লড়াই থামানো যাচ্ছে না, শনিবারের ঘটনা ফের তারই প্রমাণ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘গত পুরভোটে প্রসূন ঘোষ ১০ নম্বর ওয়ার্ডে পরাজিত হয়েছিল। বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী, শশী পাঁজা ওই ওয়ার্ডে জিতেছেন। তারই বদলা নিতে শশী অনুগামীরা খোকনের উপরে আক্রমণ চালিয়েছে। এ রকম ঘটনা ভীষণ দুর্ভাগ্যজনক।’’ স্থানীয় বিধায়ক শশী পাঁজাকে একাধিক বার ফোন করা হলেও যোগাযোগ করা যায়নি। এসএমএসেরও কোনও জবাব মেলেনি। তৃণমূলের মহাসচেতক পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE