Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ক্ষতিপূরণ দিক ভ্রমণ সংস্থা, বলল কোর্ট

ক্রেতা-সুরক্ষা দফতর সূত্রের খবর, ২০১৪ সালে পুজোর সময়ে কাশ্মীর যাওয়ার জন্য ‘ঘোষ স্পেশ্যাল’ নামের এক ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন বেহালার শকুন্তলা পার্কের বাসিন্দা, সমরকুমার ভট্টাচার্য ও তাঁর স্ত্রী কাবেরী ভট্টাচার্য।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:১৭
Share: Save:

ভ্রমণ সংস্থাকে মোটা টাকা দেওয়ার পরেও বেড়াতে গিয়ে প্রতি পদেই চূ়ড়ান্ত হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল বলে ক্রেতা-সুরক্ষা আদালতে অভিযোগ জানিয়েছিলেন বেহালার এক প্রবীণ দম্পতি। তাঁরা দাবি করেছিলেন, কখনও হোটেলের অব্যবস্থা, কখনও সংরক্ষণ ছাড়াই দূরপাল্লার ট্রেনে উঠে চরম ভোগান্তি, কখনও আবার বেড়ানোর সময়ে গাড়ি নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় তাঁদের। এর পরে পর্যটকদের ছেড়েই নাকি মাঝপথে গায়েব হয়ে যান ট্যুর ম্যানেজার। অসহায় ওই প্রবীণ দম্পতির অভিযোগ, ট্যুর ম্যানেজার বা কলকাতার ওই ভ্রমণ সংস্থার কর্ণধারকে বারবার ফোন করেও কোনও সুরাহা হয়নি। নিরুপায় ওই দম্পতি তাই নিজেদের টাকায় গ্বালিয়র শহরে দু’দিন হোটেলে থাকেন। পরে ট্রেনের টিকিট কেটে কলকাতায় ফিরেন। ফেরার পরে ওই ভ্রমণ সংস্থার বিরুদ্ধে ক্রেতা-সুরক্ষা আদালতে মামলা করেছিলেন তাঁরা। সেই মামলায় ক্রেতা-সুরক্ষা আদালত সম্প্রতি ওই ভ্রমণ সংস্থাকে নির্দেশ দিয়ে বলেছে, ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় তিয়াত্তর হাজার টাকা যেন ওই দম্পতিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

ক্রেতা-সুরক্ষা দফতর সূত্রের খবর, ২০১৪ সালে পুজোর সময়ে কাশ্মীর যাওয়ার জন্য ‘ঘোষ স্পেশ্যাল’ নামের এক ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন বেহালার শকুন্তলা পার্কের বাসিন্দা, সমরকুমার ভট্টাচার্য ও তাঁর স্ত্রী কাবেরী ভট্টাচার্য। ঘটনাচক্রে তাঁরা নিজেরাও ক্রেতা-সুরক্ষা দফতরের অবসরপ্রাপ্ত দুই আধিকারিক। ওই সময়ে কাশ্মীরে প্রবল দুর্যোগ শুরু হওয়ায় সেই ট্যুর বাতিল করে মধ্য ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন তাঁরা। কাশ্মীরের জন্য তাঁদের কাছ থেকে ওই ভ্রমণ সংস্থা নিয়েছিল ৩১৪০০ টাকা। মধ্য ভারতে কুড়ি দিনের প্যাকেজের জন্য দিতে হয়েছিল আরও ১৩৩৩৬ টাকা। কাবেরীদেবী বলেন, ‘‘আমাদের বেড়ানোর যে সূচি ওঁরা দিয়েছিলেন, সেই মোতাবেক অধিকাংশ দর্শনীয় স্থানেই আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়নি। হোটেল, পরিবহণ ব্যবস্থা, খাবারদাবার— সবই খুব নিম্নমানের ছিল। খাজুরাহো থেকে গ্বালিয়রের পথে সংরক্ষণ ছাড়াই ভি়ড় ট্রেনে ঠাসাঠাসি করে আমাদের যেতে হয়েছিল। যার জেরে আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েন।’’

ওই দম্পতির অভিযোগ, চিত্রকূটে থাকার সময়ে ট্যুর ম্যানেজার তাঁদের থেকে অতিরিক্ত পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। তাঁরা তিন হাজার টাকা দিলেও তা ফেরত পাননি। কাবেরীদেবীর অভিযোগ, ‘‘২ নভেম্বর রাতে হোটেল থেকে অটো করে গ্বালিয়র স্টেশনে পৌঁছই। ট্যুর ম্যানেজার আমাদের ‘একটু ঘুরে আসছি’ বলে চলে যান। আর ফেরেননি। ফোনেও পাওয়া যায়নি। এর পরে কলকাতায় সংস্থার মালিক মানিক ঘোষকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তার পরে ফোন বন্ধ করে দেন।’’ সেই রাতে গ্বালিয়রের স্থানীয় থানাতেই তাঁরা ওই ভ্রমণ সংস্থা ও ট্যুর ম্যানেজারের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। এর পরে দু’দিন নিজেদের টাকায় হোটেলে থেকে ট্রেনের তৎকাল টিকিট কেটে কলকাতায় ফেরেন।

এর পরে কলকাতা জেলা ক্রেতা-সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন ওই দম্পতি। আদালত ভ্রমণ সংস্থার কর্ণধারকে তীব্র ভর্ৎসনা করে ওই দম্পতিকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩৫ হাজার টাকা ফেরত দিতে বলে। কিন্তু টাকার পরিমাণে অসন্তুষ্ট হয়ে ওই দম্পতি সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য ক্রেতা-সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন।

গত ১৩ অক্টোবর রাজ্য ক্রেতা-সুরক্ষা আদালতের বিচারক শ্যামল গুপ্ত ও উৎপলকুমার ভট্টাচার্য তাঁদের রায়ে বলেন, ‘‘অনেক আশা নিয়ে ওই প্রবীণ দম্পতি ভ্রমণ সংস্থাকে আগেই পুরো টাকাটা দিয়েছিলেন। কিন্তু আনন্দের বদলে তাঁদের সফর যন্ত্রণার হয়ে ওঠে। যার পুরো দায় ভ্রমণ সংস্থারই।’’ রায় বেরোনোর ৪৫ দিনের মধ্যে ওই সংস্থাকে ৭২ হাজার ৭৭০ টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দিলেও এখনও তা পাননি বেহালার প্রবীণ দম্পতি। আদালত অবমাননার অভিযোগে ওই দম্পতি রাজ্য ক্রেতা-সুরক্ষা আদালতে ভ্রমণ সংস্থার কর্ণধারের বিরুদ্ধে ‘এগজিকিউশন কেস’ দায়ের করেছেন। এই রায় প্রসঙ্গে সম্প্রতি ‘ঘোষ স্পেশ্যাল’-এর কর্ণধার মানিক ঘোষ বলেন, ‘‘আমি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি। আদালতের রায় মেনে শীঘ্রই ওই দম্পতিকে টাকা ফেরত দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE