Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
ট্যাংরা

ন’বছরের কার্তিককে বেঁধে ‘পুড়িয়ে’ মেরে উধাও হল ‘বাবা-মা’!

একচালা খুপরি ঘরটা থেকে গলগলিয়ে ধোঁয়া আর সঙ্গে পোড়া গন্ধ বেরোতে দেখে ছুটে গিয়েছিলেন প্রতিবেশীরা। কোনও মতে ভিতরে ঢুকে তাঁরা দেখেন, ঘরের ভিতরে উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে ছোট্ট শরীরটা। পুড়ে খাক। হাত-পা পিছমোড়া করে বাঁধা।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৬ ০২:৩১
Share: Save:

একচালা খুপরি ঘরটা থেকে গলগলিয়ে ধোঁয়া আর সঙ্গে পোড়া গন্ধ বেরোতে দেখে ছুটে গিয়েছিলেন প্রতিবেশীরা। কোনও মতে ভিতরে ঢুকে তাঁরা দেখেন, ঘরের ভিতরে উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে ছোট্ট শরীরটা। পুড়ে খাক। হাত-পা পিছমোড়া করে বাঁধা।

ন’বছরের কার্তিক দলুইকে গত রবিবার তার বাবা ও সৎমা গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে পুড়িয়ে মেরেছে বলে অভিযোগ নিহতের দুই দিদি এবং ট্যাংরা থানার পুলিন খটিক রোডের পড়শিদের। আরও অভিযোগ, এ ভাবেই রোজ কার্তিককে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বেঁধে রাখত তার সৎমা। সেই কারণেই রবিবার পালাতে পারেনি ছোট্ট ছেলেটি। পড়শিরাই থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন। তার পরে বুধবার থেকেই পুরো বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে কার্তিকের বাবা তপন দলুই ও সৎমা আশা দলুই।

ট্যাংরা থানার পটারি রোড রেল ব্রিজ পেরিয়ে একটু এগোলেই কয়লা মাঠ। তার পাশে পুলিন খটিক রোডের ঝুপড়িতে দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী আশা, আগের পক্ষের দুই মেয়ে মাম্পি (১০), পুনম (১১) এবং ছেলে কার্তিককে নিয়ে বাস তপনের। পেশায় সে রিকশাচালক। তপনের বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কার্তিকই সব চেয়ে ছোট। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, রোজ তিন ছেলেমেয়েকে বেদম মারত ওই দম্পতি। স্কুল ছাড়িয়ে তাদের দিয়েই বাড়ির যাবতীয় কাজ, এমনকী রান্নাও করাত। লোকের বাড়িতে কাজে পাঠিয়ে সেই টাকাও নিয়ে নিত বাবা-মা। অভিযোগ, এ সবের প্রতিবাদ করাতেই কার্তিককে বেঁধে রাখা হতো। খেতেও দেওয়া হতো না। এমনকী, পাড়ার কেউ শিশুটিকে খাবার দিতে গেলে গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দিত আশা।

কার্তিকের মৃত্যুতে এখন ফুঁসছে গোটা পাড়া। প্রতিবেশী লীলা হরি, সুভাষ হরি, দীনেশ রাই, বাচ্চু আলিদের মতো অনেকেই বলছেন, ‘‘বাকি দুটো বাচ্চাকে বাইরে পাঠিয়ে বাবা-মা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। তার পরেও নির্বিকার ছিল ওরা! মানুষ এত নৃশংস হতে পারে?’’ প্রতিবেশীদের আরও অভিযোগ, পুলিশ কেস শুরু করতে দেরি করায় অভিযুক্তেরা পালিয়ে যেতে পেরেছে। যদিও ট্যাংরা থানার পুলিশের দাবি, শিশুটির দেহের ময়না-তদন্তের পরেও কেউ লিখিত অভিযোগ জানাননি। তাই তদন্তও শুরু করা যায়নি। বুধবার অভিযোগ পাওয়ার পরে বৃহস্পতিবার থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে।

কার্তিকের দুই দিদিকে বৃহস্পতিবার পড়শিরাই চাইল্ডলাইনের হাতে তুলে দেন। কলকাতা শিশু নিরাপত্তা কমিটির (সিডব্লিউসি) নির্দেশ এক রাত তাদের হোমে রাখে পুলিশ। শুক্রবার সিডব্লিউসি-র সামনেও ভয়ে কাঁটা হয়ে ছিল ছোট্ট মেয়ে দু’টি। মাম্পির কথায়, ‘‘রোজ বাবা-মা পাইপ দিয়ে, লাঠি দিয়ে মারত। খেতে দিত না। স্কুলে পাঠাত না। বাড়ির সব কাজ করাতো। ভাইকে বেঁধে রেখে দিত। ওরাই ওকে পুড়িয়ে দিয়েছে।’’ আর পাথরের মতো মুখে পুনম বলেছে, ‘‘জল তোলা, রান্না, বাসন মাজা, কাপড় কাচা, লোকের বাড়ি কাজ— আমরা তো সবই করতাম। তবু বাবা-মা ভাইকে পুড়িয়ে মেরে দিল। মঙ্গলবার বাবা বলেছিল, যদি বাড়ি থেকে চলে না যাই, তবে ওরা আমাদেরও পুড়িয়ে দেবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE