Advertisement
০৫ মে ২০২৪

হাওড়ায় পুলিশের দেওয়া নম্বর টোটোর লাইসেন্স নয়: সিপি

ব্যাটারিচালিত গাড়িটির পিছনে ও সামনের দিকে লাগানো একটি স্টিকার। তাতে স্থানীয় থানার সংক্ষিপ্ত নাম ও ক্রমিক নম্বর ছাড়াও রয়েছে একটি বারকোড।

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৫৮
Share: Save:

ব্যাটারিচালিত গাড়িটির পিছনে ও সামনের দিকে লাগানো একটি স্টিকার। তাতে স্থানীয় থানার সংক্ষিপ্ত নাম ও ক্রমিক নম্বর ছাড়াও রয়েছে একটি বারকোড। হাওড়া শহর জুড়ে দাপিয়ে বেড়ানো টোটো চালকেরা এই স্টিকারটিকেই পুলিশের দেওয়া লাইসেন্স বলে দাবি করেন। কিন্তু আদৌ যে তা টোটোর লাইসেন্স নয়, শনিবার স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন হাওড়ার পুলিশ কমিশনার।

এ দিন এক সাংবাদিক সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, ‘‘পুলিশের তরফ থেকে টোটোকে কোনও লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। পুলিশ কখনও লাইসেন্স দিতে পারে না। যে স্টিকার দেওয়া হয়েছে সেটি টোটোর চিহ্নিতকরণ নম্বর মাত্র। এর বেশি কিছুই নয়।’’ একমাত্র পরিবহণ দফতরই টোটোকে লাইসেন্স দিতে পারেন বলে দাবি পুলিশ কর্তাদের। জেলা পরিবহণ দফতর থেকে টোটো নিয়ন্ত্রণের একটি প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে জানান তাঁরা।

জেলা পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘পুলিশের দেওয়া নম্বর কখনওই লাইসেন্স হতে পারে না। পরিবহণ দফতরের ঠিক করে দেওয়া বিভিন্ন রুটে টোটোর লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ফলে ওই রুট পারমিট ছাড়া যেখানে সেখানে টোটো চালানো যাবে না।’’ জেলা পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, টোটোর চালকদের ‘ই-রিকশা ড্রাইভিং’ লাইসেন্স দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে তার আগে চালকদের পরীক্ষা নিয়ে নিয়ে তবেই টোটোর রেজিস্ট্রেশন করে নম্বর প্লেট দেওয়া হবে।

তাহলে এখন টোটোয় লাগানো স্টিকারটি কিসের জন্য?

পুলিশ কর্তারা জানান, হাওড়া শহরে প্রতিনিয়ত টোটোর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছিল। দেখা গিয়েছিল, জেলা থেকেও টোটো নিয়ে শহরে এসে চালাচ্ছেন অনেকে। তখনই টোটো নিয়ন্ত্রণে নামেন পুলিশ কর্তারা। যে টোটো মালিক যে এলাকার বাসিন্দা, তাঁকে সেই এলাকার স্থানীয় ট্রাফিক গার্ড থেকে নম্বর-সহ একটি স্টিকার দেওয়া হয়েছিল। যাতে হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের কোন এলাকায় কত টোটো চলে, তার একটি পরিসংখ্যান সহজেই পাওয়া যায়। পাশাপাশি, অপরাধ দমন-সহ অন্য বিষয়েও টোটোর ওই নম্বর গুরুত্বপূর্ণ বলেই দাবি পুলিশ কর্তাদের। তাঁরা জানান, স্টিকার নেওয়ার জন্য টোটো মালিকদের ভোটার কার্ড-সহ বিভিন্ন নথি পুলিশের কাছে জমা করতে হয়েছিল। কখনও কোনও টোটোকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে যাতে সহজেই সে সম্পর্কে সমস্ত তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়।

শুক্রবার শিবপুর থানার সামনে টোটো চালকেরা পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, রাস্তা অবরোধ ও ইট ছুঁড়েছিলেন। এ দিন পুলিশ কমিশনার সাফ জানিয়ে দেন, কোনও রকম বেয়াদপি বরদাস্ত করা হবে না। পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘জিটি রোড ও জাতীয় সড়কের গতি যাতে আটকে না যায় সে জন্য ওই সব রাস্তায় টোটো চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। নিয়ম মেনে না চললে অন্যান্য যানবাহনের মতোই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

জেলা পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, হাওড়া জেলার যে সমস্ত রাস্তায় বাস চলে না, শুধুমাত্র সেখানেই চলতে পারবে টোটো। এ বিষয়েও নির্দেশিকা জারি করবে পরিবহণ দফতর। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদিত সংস্থা থেকে কেনা টোটোই শুধুমাত্র রেজিস্ট্রেশন করাতে পারবে।
তবে পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘রাজ্যে একটি টেকনিক্যাল দল এসেছে। তারা অন্য সমস্ত টোটোর কাঠামো, যান্ত্রিক অবস্থা খতিয়ে দেখছেন। যদি তারা মনে করে ওই টোটোগুলি রাস্তায় চলার উপযুক্ত, তখন তাদেরও রেজিস্ট্রেশন করা হবে।’’

তবে টোটোকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন পুর-কর্তা থেকে টোটো সংগঠনের নেতারাও। যেমন হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ তথা হাওড়া টোটো ওয়ার্কাস ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি শ্যামল মিত্র বলেন, ‘‘পরিবহণ দফতরের তরফে পুরসভায় এখনও পর্যন্ত কোনও নির্দেশিকা আসেনি। তবে পরিবহণ দফতরের একটা নির্দেশিকা থাকলে টোটোকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। সেটা চালু হলেই ভাল হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police given number Toto
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE