Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পুকুরে ডেঙ্গির মশার লার্ভা, নিধনে গড়িমসি

পুরসভা সূত্রের খবর, গত সোমবার পরিদর্শনের সময়ে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মীনগর এলাকার ছ’টি পুকুরে এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা পায় বিশেষ প্রতিনিধি দল। সেই দলের সদস্যেরা ঘটনার গুরুত্ব বুঝে পুর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

সৌরভ দত্ত
শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৮ ০৩:২৬
Share: Save:

বিপদ জেনেও চটজলদি দাওয়াই প্রয়োগের পথে হাঁটল না দক্ষিণ দমদম পুরসভা।

একই ওয়ার্ডের ছ’টি পুকুরে ডেঙ্গির জীবাণুবাহী এডিস ইজিপ্টাই মশার লার্ভা চিহ্নিত করল পুরসভারই পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে গঠিত বিশেষ দল। এর পরে একের পর এক পরিদর্শন চললেও পুকুরে মশার লার্ভা নিধনে মাছ ছেড়ে উঠতে পারলেন না পুর কর্তৃপক্ষ। এ ক্ষেত্রে সেটিই যে জরুরি পদক্ষেপ, তা মানছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকেরাই।

পুরসভা সূত্রের খবর, গত সোমবার পরিদর্শনের সময়ে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মীনগর এলাকার ছ’টি পুকুরে এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা পায় বিশেষ প্রতিনিধি দল। সেই দলের সদস্যেরা ঘটনার গুরুত্ব বুঝে পুর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ওই অঞ্চল ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। পুকুরে ডেঙ্গির লার্ভা খুঁজে পাওয়ার অর্থ যে কী মারাত্মক, তা প্রতিনিধি দলের অজানা নয়। কিন্তু পুর কর্তৃপক্ষ তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠেই গেল।

শনিবার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চন্দনরানি পাল বলেন, ‘‘পুকুরের ওই লার্ভা ডেঙ্গি মশারই কি না, তা পরীক্ষা করার পরেই নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে। তবে যেখানে লার্ভা পাওয়া গিয়েছে, সেই জায়গাটা খুব ভাল ভাবে পরিষ্কার করা হয়েছে।’’ কাউন্সিলর এ কথা বললেও পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে তাঁর কার্যালয়ে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তাতে পুকুরে ডেঙ্গির লার্ভা পাওয়া নিয়ে কোনও সংশয় প্রকাশ করা হয়নি। পুরসভা সূত্রের খবর, ছ’টি পুকুরের ঠিকানা দিয়ে ওই চিঠিতে লেখা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট পুকুরগুলিতে প্রচুর পরিমাণ এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা রয়েছে। অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে ওই এলাকায় ডেঙ্গির সংক্রমণ ছড়াতে পারে। সেই ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রেই তৎপরতার অভাব দেখছেন পুর আধিকারিকদের একাংশ।

১০ নম্বর ওয়ার্ডের পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে যুক্ত কর্মীদের একাংশের দাবি, গত ১ মার্চ এলাকার পুকুরগুলিতে মশার লার্ভা দেখে তাঁদের সন্দেহ হয়। তাঁরাই প্রথম পুরসভার বিশেষ দলকে বিষয়টি জানান। এর পরে সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সেই দলের সদস্যেরা। তার পরে বুধবার পরিদর্শনে আসেন জনস্বাস্থ্য বিভাগের চেয়ারম্যান পারিষদ দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বাস্থ্যের চেয়ারম্যান পারিষদ গোপা পাণ্ডে, স্যানিটারি ইনস্পেক্টর রতনগোপাল দাস-সহ পুর আধিকারিকেরা। পুকুরগুলির যে অংশে লার্ভা মেলে, সেখানে মশা মারার তেল দেওয়া হয়। কিন্তু তা যে যথেষ্ট নয়, মানছেন ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে অভিজ্ঞ পুর আধিকারিকেরাই। তাঁদের এক জনের বক্তব্য, ‘‘পুকুরে এত লার্ভা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না! মশা মারার তেল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুকুরে তেল দিয়ে লার্ভা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়!” আর এক পুর আধিকারিক বলেন, ‘‘গাপ্পি, তেলাপিয়া, ল্যাটা মাছ ছেড়ে দিলেই কাজ হয়ে যেত।’’

শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য ভবনের প্রতিনিধিরা। পুরসভা সূত্রের খবর, পুকুরে ডেঙ্গির লার্ভা থাকার বিষয়টি তাঁরাও মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব, পুকুরে মাছ ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য ভবনের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল।

কিন্তু বাস্তবে পুরসভা এখনও সেই কাজ করে উঠতে পারেনি। লার্ভার অস্তিত্ব জানার পরে এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তা হল না কেন? এ দিন জনস্বাস্থ্য বিভাগের চেয়ারম্যান পারিষদ বলেন, ‘‘পুকুরগুলি পরিষ্কার করে মাছ ছাড়তে হবে। নইলে মাছ বাঁচবে না। আশা করি, আগামী সপ্তাহে মাছ ছাড়তে পারব।’’ তার আগে মশা মারার তেলই ভরসা বাসিন্দাদের!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue mosquito South Dum Dum Dum Dum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE