নিজের ফ্ল্যাটে হাসিরানিদেবী। নিজস্ব চিত্র
সত্তর বছরের বৃদ্ধার সামনে ১৪-১৫ জন কমবয়সী ছেলের দল। বেশিরভাগের হাতেই মোবাইল। তাতে চলছে ভিডিও রেকর্ডিং, সঙ্গে নানা প্রশ্ন। ‘‘দিদা, দাদু তো মরে গেল, তুমি একা এত বড় ফ্ল্যাট, টাকা নিয়ে কী করবে?’’ ‘‘দিদা, তুমি দাদুর পচাগলা দেহ নিয়ে কী করে বসেছিলে?’’ শনিবার রাতে হরিদেবপুরের ১২০৭/১সি, উস্তাদ আমির খান সরণির দোতলার ফ্ল্যাট থেকে গৃহকর্তা অমর সান্যালের দেহ উদ্ধারের পরে তাঁর অসুস্থ স্ত্রী হাসিরানিদেবীকে ঘিরে এলাকার ক্লাবের ছেলেদের এ ভাবেই চলল কথাবার্তা। পুলিশের ভাষায় ‘কাউন্সেলিং!’’
কীসের কাউন্সেলিং?
পুলিশ জানায়, দিন চার-পাঁচ আগে মারা গিয়েছেন অমরবাবু। তার পর থেকেই স্বামীর দেহ আগলে বসেছিলেন হাসিরানিদেবী। শনিবার ফ্ল্যাট থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে প্রতিবেশীরা থানায় জানান। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে অমরবাবুর দেহ উদ্ধার করে। কিন্তু মানসিক ভাবে অসুস্থ ওই বৃদ্ধার কোনও আত্মীয়স্বজন না আসায় বিপাকে পড়ে তারা। পরে খবর পেয়ে অমরবাবুর ভাগ্নে সঞ্জিৎ বাগচী এলেও তিনি মামিমার দায়িত্ব নিতে চাননি।
এই অবস্থায় হাসিরানিদেবীর কী উপায় হবে, তা ভেবে উঠতে পারেননি ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশকর্মীরা।
তখনই তাঁরা ঠিক করেন, হাসিরানিদেবীকে ফ্ল্যাট থেকে বার করতে পড়শিদের প্রয়োজন। কিন্তু পড়শি কোনও মহিলা বা মহিলা পুলিশকর্মী না ডেকে তাঁরা এলাকার ক্লাবের ছেলেদের উপর দায়িত্ব দেন বৃদ্ধার ‘কাউন্সেলিং’-এর।
এর পরেই একদল যুবক হইহই করে মোবাইল হাতে ঢুকে পড়েন অমরবাবুর ফ্ল্যাটে। তাঁরা অবশ্য ওই বৃদ্ধের স্ত্রীকে উদ্ধার করেননি। বরং তাঁকে ঘিরে একের পর এক প্রশ্ন করতে করতে পুরো ঘটনার ভিডিও রেকর্ডিং করেছেন। এক সময়ে
বিরক্ত হয়ে এক জনের মোবাইল সরিয়েও দেন হাসিরানিদেবী। কিন্তু তার পরেও পুলিশ ওই যুবকদের বার করেনি। উল্টে তাঁদের দাবি, ‘‘মহিলা কারও কথা শুনছেন না। তাই ক্লাবের ছেলেদের পাঠানো হয়েছে তাঁকে বোঝানোর জন্য। কিন্তু কী বোঝানোর জন্য? সে উত্তর অবশ্য মেলেনি।
তবে মানসিক অসুস্থ নাগরিককে উদ্ধার করাই হোক বা তাঁকে সামলানো, পুলিশের ‘অমানবিক’ মুখ দেখা গিয়েছে এর আগেও। শ্যামপুকুর থানা এলাকার একটি বস্তির ঘর থেকে এক যুবককে বার করতে পুলিশ ডেকে পাঠিয়েছিল দমকল, এমনকী র্যাফও। পরে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে উদ্ধার করা হয় তাঁকে। শনিবার অবশ্য হাসিরানিদেবীকে উদ্ধারের জন্য এত কিছু করেনি পুলিশ। তাঁরা বেছে নিয়েছিলেন আরও সহজ উপায়। স্থানীয় ক্লাবের যুবকদের। অভিযোগ, যদিও তাঁরা হাসিরানিদেবীকে রীতিমতো অতিষ্ঠ করে এসেছিলেন।
বিষয়টি ডিভিশনাল অফিসার মিরাজ খালিদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি শুধু বলেছেন, ‘‘আমরা জানতে পেরেই ব্যবস্থা নিয়েছি। মহিলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’’ কিন্তু পুলিশ ক্লাবের ছেলেদের কী করে এমন অনুমতি দিল? সেই উত্তর অবশ্য মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy