Advertisement
১১ মে ২০২৪

‘স্পুফিং কলে’ বাড়ছে হয়রানি, নাকাল পুলিশ

লালবাজারের অফিসে এক শীর্ষকর্তার মোবাইল হঠাৎই বেজে উঠল। তিনি দেখলেন, স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে এক অধস্তন অফিসারের নাম। তিনি ফোন ধরতেই কোনও পুলিশ অফিসার নয়, ভেসে এসেছিল এক টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকের গলা!

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৫ ০২:১৪
Share: Save:

লালবাজারের অফিসে এক শীর্ষকর্তার মোবাইল হঠাৎই বেজে উঠল। তিনি দেখলেন, স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে এক অধস্তন অফিসারের নাম। তিনি ফোন ধরতেই কোনও পুলিশ অফিসার নয়, ভেসে এসেছিল এক টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকের গলা! কিছুটা হকচকিয়ে গিয়ে ওই সাংবাদিককে ডেকে পাঠিয়েছিলেন সেই পুলিশকর্তা। জানতে চেয়েছিলেন, কী ভাবে সম্ভব হল এটা?

লালবাজারের ওই কর্তার মতো এমন ‘মজার’ ফোন আরও অনেকেই পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে বন্ধুমহলে হাসির খোরাক হয়েছেন। আবার কেউ কেউ জালিয়াতির খপ্পরেও পড়েছেন। পুলিশ বলছে, স্পুফিং কলের জেরে এমন অপরাধের আশঙ্কা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন তাঁরাও। কিন্তু এই সব অ্যাপ অনেক ক্ষেত্রেই বিদেশে তৈরি হওয়ায় হাত গুটিয়েই থাকতে হচ্ছে তাঁদের।

পুলিশ সূত্রে খবর, ভবানীপুরের ব্যবসায়ী বিশাল সোনিকেও এমন ভাবেই ফাঁসানো হয়েছিল। অভিযুক্ত মণীশ সোনি ইন্টারনেট থেকে একটি অ্যাপ নামিয়ে নিজের ফোন নম্বর থেকে শেক্সপিয়র সরণির এক ব্যবসায়ীর নাম দিয়ে ফোন করছিলেন। কী ভাবে? সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের অ্যাপে নিজের নম্বরের বদলে অন্যের নম্বর গুঁজে দেওয়া যায়। তার ফলে যে নম্বর থেকে ফোন করা হচ্ছে তার বদলে গোঁজা নম্বরটি দেখাবে।

গোয়েন্দাদের একাংশ বলছেন, এই ধরনের ফোন সাধারণ মোবাইল পরিষেবাপ্রদানকারী সংস্থার বদলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয় এবং তা বিদেশে থাকা সার্ভারের মাধ্যমে ঘুরে আসে। তার ফলে এই ধরনের ফোনে কোনও অপরাধ হলে তার হদিস পেতে কার্যত কালঘাম ছুটে যায় তদন্তকারীদের। এক গোয়েন্দা অফিসারের বক্তব্য, ‘‘বিদেশি সংস্থার কোনও অফিস যে হেতু এ দেশে থাকে না। তার ফলে তথ্যও পাওয়া যায় না।’’ ভবানীপুরের জালিয়াতি ঘটনার ক্ষেত্রেও ব্রিটেন ও কানাডার সার্ভারের সূত্রও পেয়েছেন গোয়েন্দারা।

সাইবার ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলছেন, স্পুফিং ফোনের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত বেশির ভাগ সময়েই ছদ্মবেশে থাকে। ফলে খুঁজে বের করা সমস্যার হয়ে ওঠে। সার্ভারগুলি বিদেশে থাকায় তথ্য আনার ক্ষেত্রেও কূটনৈতিক বেড়াজাল ডিঙোতে হয়। ‘‘এ ক্ষেত্রে অন্য কোনও তথ্যপ্রমাণ থাকলে তবে তদন্তের কিনারা করা সহজ হয়,’’ বলছেন বিভাসবাবু। পুলিশও বলছে, ভবানীপুরের ঘটনার ক্ষেত্রে এক মহিলার সূত্র ধরে গয়না উদ্ধার হওয়াতেই পাকড়াও করা গিয়েছিল মূল অভিযুক্তকে।

এবং এই সমস্যার মূলে গোয়েন্দাদের একাংশ দায়ী করছেন ভুয়ো নথি দিয়ে সিমকার্ড বিক্রিকে। জালিয়াতির ঘটনায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুয়ো নথি দিয়ে সিমকার্ড তোলা হয়। তার ফলে সিমকার্ডের তথ্য দিয়ে অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা যায় না। বরং আরও বেশি গোলকধাঁধায় পড়েন তদন্তকারীরা। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, এই ভুয়ো নথি দিয়ে সিমকার্ড বিক্রি বন্ধ না হলে এই জালিয়াতি আরও বাড়বে। লালবাজারের এক গোয়েন্দাকর্তা বলেন, ‘‘আমরা বহু বার টেলিকম সংস্থাগুলিকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছি। কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থাও নিয়েছি। তা সত্ত্বেও এটা রোখা যাচ্ছে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fake phone calls Fake calls spoofing app kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE