উদ্ধারে: নামিয়ে আনা হচ্ছে হোটেলে আটক অতিথিদের। —নিজস্ব চিত্র।
শহরের কেন্দ্রস্থলে বিলাসবহুল হোটেলের ঘরে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছিলেন ওঁরা। মাঝ রাতে হোটেলে ভয়াবহ আগুনে পালাতে না পেরে মারা গেলেন দু’জন।
শহরে এমন প্রাণঘাতী আগুন এই প্রথম নয়। ২০১১-র ডিসেম্বরে আমরি হাসপাতালে আগুন লেগে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তার আগে ও পরে এ রকম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু, হাসপাতাল থেকে হোটেল, বহুতল থেকে অফিস — এখনও সর্বত্র সেই ব্যবস্থা করে ওঠা যায়নি, যেখানে আগুন লাগলেও নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পারবেন মানুষ।
অনেক ক্ষেত্রেই যতটা না আগুন, তার চেয়েও বেশি ধোঁয়ায় দম আটকে মৃত্যুর ঘটনাই বেশি ঘটে। যেমনটি ঘটেছিল আমরি-র ক্ষেত্রে। বুধবার রাতে হো চি মিন সরণির গোল্ডেন পার্ক হোটেলেও মূলত ধোঁয়ার কারণেই দুই আবাসিকের মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাঁদের একজন টাটা স্টিলের অফিসার চমর কিষেণ (৪৯)। অন্য জন গুজরাতের সুরাতের বাসিন্দা, পেশায় ব্যবসায়ী অনুপ অগ্রবাল (৫৩)। ব্যবসার কাজেই শহরে এসেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: অপারেশন টেবিলে ‘শজারুর কাঁটা’!
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার পরেই হোটেলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দমকলের তরফে করা সুনির্দিষ্ট মামলার ভিত্তিতে সন্ধ্যায় হোটেলের মালিক বি এস গুজরাল এবং এক ম্যানেজার গৌতম মজুমদারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ দিন ধোঁয়ার প্রকোপ এত মারাত্মক ছিল যে, কাচ ভেঙে হোটেলের ঘরে ঢুকতেই দম বন্ধ হয়ে এসেছিল দমকলকর্মীদের। কালো ধোঁয়ার মধ্যেই তাঁরা দেখেছিলেন, আতঙ্কে জবুথবু হয়ে রয়েছেন আবাসিকেরা। আটকে পড়া লোকজনকে নামিয়ে আনলেও দু’জনকে বাঁচানো যায়নি।
দমকল জানিয়েছে, বুধবার রাত পৌনে তিনটে নাগাদ আগুন লাগে হোটেলে। দশটি ইঞ্জিন নিয়ে দমকল, পুলিশ এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর অফিসারেরা উদ্ধার কাজ শুরু করেন। চমর এবং অনুপ-সহ ৭ জনকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়। দমকল সূত্রের খবর, হোটেলের ৫০টি ঘরের মধ্যে ২৯টি ঘরে লোক ছিল। আবাসিকদের অনেকেই আতঙ্কে বেরিয়ে এসেছিলেন। দুই আবাসিক পাইপ বেয়ে নীচে নেমে আসেন।
বুধবার রাত থেকে দমকল, পুলিশের সঙ্গে উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছিলেন স্থানীয় অন্য একটি হোটেলের কর্মী সুরজিৎ জানা। তিনি জানান, হোটেলের মোটা কাচের জানলা ভেঙে ঢুকতেই কালো ধোঁয়া গ্রাস করে নিয়েছিল। গ্যাস মুখোশ লাগিয়েও বেশি ক্ষণ থাকা যাচ্ছিল না। তার মধ্যেই দড়ি এবং বিছানার চাদর দিয়ে আবাসিকদের নামিয়ে আনা হয়।
দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দেখলাম তো , ওই হোটেলের এমারজেন্সি এক্সিট সিঁড়ির সমানে ডাঁই হয়ে রয়েছে মাল। টেবিল, ম্যাট্রেসে ভর্তি। তাতে আগুন লাগলে মানুষের পালানোর পথও আটকে থাকে। এ সব দেখা তো আর দমকলের কাজ নয়। তাই ওদের মনে রাখতে হবে, দমকল সব করবে না।’’ দমকল জানায়, হোটেলের একতলায় রান্নাঘর থেকে আগুন লাগে। তার ধোঁয়াই এসি ডাক্টের মাধ্যমে সারা হোটেলে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের ঘটনা এবং গাফিলতির অভিযোগ নিয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy