সেই ফাটল। — নিজস্ব চিত্র
নির্মাতা সংস্থা জানিয়েছে, তৈরির সময় থেকেই কিছু সমস্যা ছিল উড়ালপুলে। সেই সমস্যাই এখন ফাটলের আকার নিয়েছে। ফাটলগুলি সারাইয়ের কাজও চলছে প্রায় মাসখানেক ধরে। অথচ, তার উপর দিয়েই নিত্য দিন চলছে গাড়ি থেকে স্কুলবাস। প্রশ্ন উঠেছে, এত গুরুত্বপূর্ণ এবং যানবহুল চিংড়িঘাটা উড়ালপুলের মেরামতির কাজ এত দিন ধরে কেন চলছে? সেই কাজ চলাকালীন উড়ালপুল দিয়ে কি গাড়ি নিশ্চিন্তে যাতায়াত করতে পারে?
ওই উড়ালপুলের নির্মাতা কেএমডিএ-র বাস্তুকার উদয়ন মণ্ডলের কথায়, ‘‘উড়ালপুলটি তৈরির সময় থেকেই এক্সপ্যানশন জয়েন্টে কিছু সমস্যা ছিল। সেগুলিই পরে ফাটলের চেহারা নিয়েছে। এখন সারাই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ এ বিষয়ে নবান্নে রিপোর্টও জমা দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারেরা জানাচ্ছেন, যে কোনও সেতু বা উড়ালপুলের উপরে কংক্রিটের দু’টি স্ল্যাবের মধ্যে ধাতব পাত দিয়ে এই ‘এক্সপ্যানশন জয়েন্ট’ তৈরি করা হয়। গরমে বা শীতে যাতে এই স্ল্যাব সঙ্কুচিত বা প্রসারিত হতে না পারে, সেই কারণেই এই ব্যবস্থা করা হয়। উদয়নবাবুর যুক্তি, ‘‘সারা দিন ধরে গাড়ি চলাচল করে ওই উড়ালপুলের উপর দিয়ে। রাতে মাত্র ছ’ঘণ্টা কাজ করার অনুমতি রয়েছে আমাদের। তাই মেরামতির কাজ শেষ হতে কিছুটা দেরি হচ্ছে।’’ এই সারাইয়ের কাজ চলাকালীন উড়ালপুল ভেঙে পড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই দাবি করেছেন তিনি।
যদিও নিরাপত্তা নিয়ে তাঁর এই স্তুতিবাক্য মোটেও কাজ করছে না। এখনও বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভেঙে বহু মানুষের মৃত্যুর ঘটনা জ্বলজ্বল করছে শহরবাসীর মনে। কিছু দিন আগেই সামনে এসেছিল সন্তোষপুরের সুকান্ত সেতুর ফাটল। চিংড়িঘাটার এই উড়ালপুলের ফাটল নিয়েও বিস্তর জলঘোলা হয়েছে কিছু দিন আগেই। আবার নতুন করে কয়েক মাস ধরেই দেখা যাচ্ছে ওই উড়ালপুলে বড় বড় ফাটল। একটা নয়, সাত-আটটা।
এর জেরে আতঙ্কে রয়েছেন বহু স্কুলপড়ুয়ার অভিভাবক থেকে নিত্যযাত্রী। যেমন, কসবার বাসিন্দা মহাশ্বেতা সমাজদার। ছেলে ঋষি নিউ টাউনের একটি স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলবাসেই যাতায়াত করত ঋষি। সেই বাস চিংড়িঘাটা উড়ালপুল দিয়ে যাতায়াত করে। উড়ালপুলের গা বরাবর ওই ফাটলগুলি দেখার পরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন মহাশ্বেতা। স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে বাস রুট বদলের জন্য লিখিত অনুরোধও জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন স্কুল-কর্তৃপক্ষ। মহাশ্বেতা বলেন, ‘‘এর পরে আর কোনও ঝুঁকি নিতে চাইনি। এখন বাড়ির গাড়িতে অন্য রাস্তা দিয়ে ছেলেকে স্কুলে পাঠাই।’’ তাঁর মতো অনেক অভিভাবকই বাধ্য হয়ে এই একই পথ নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
সেক্টর ফাইভের তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী রাজর্ষি ভট্টাচার্য দক্ষিণ কলকাতা থেকে রোজ নিউ টাউনে যান। দীর্ঘ দিন ধরে চিংড়িঘাটা উড়ালপুল দিয়ে গেলেও সম্প্রতি অন্য পথ ধরেছেন। রাজর্ষির কথায়, ‘‘সময় বেশি লাগে, জ্যামও পাই। কিন্তু এত দিন ধরে চোখের সামনে এতগুলো ফাটল দেখে পথ বদলাতে বাধ্য হয়েছি।’’
সেক্টর ফাইভেরই তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী, বছর বিয়াল্লিশের সিদ্ধার্থ সমাজদার সাফ বললেন, ‘‘এত বড় ঘটনা ঘটে গিয়েছে শহরে। আর বিশ্বাস রাখতে পারছি না। যত দিন না ফাঁকগুলি পুরোপুরি সারানো হচ্ছে, তত দিন আর ওই পথ ধরছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy