Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পুজোয় বন দফতরের ‘পাখির চোখ’ নীলকণ্ঠ

পুজোয় এ বার পুলিশ-দমকলের পাশাপাশি সক্রিয় বন দফতরও! পুজোর সাবেক প্রথার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে নীলকণ্ঠ পাখি। রীতি অনুযায়ী, দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জনের আগে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো হয়। পৌরাণিক মতে, নীলকণ্ঠ পাখি উড়ে গিয়ে কৈলাসে শিবের কাছে উমার ফিরে যাওয়ার বার্তা পৌঁছে দেয়।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৪৭
Share: Save:

পুজোয় এ বার পুলিশ-দমকলের পাশাপাশি সক্রিয় বন দফতরও!

পুজোর সাবেক প্রথার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে নীলকণ্ঠ পাখি। রীতি অনুযায়ী, দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জনের আগে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো হয়। পৌরাণিক মতে, নীলকণ্ঠ পাখি উড়ে গিয়ে কৈলাসে শিবের কাছে উমার ফিরে যাওয়ার বার্তা পৌঁছে দেয়। কলকাতার বহু বনেদি বাড়িতেই দীর্ঘ দিন ধরে এই রীতি চলে এসেছে। বন দফতরের কর্তারা বলছেন, নীলকণ্ঠ পাখি কেনাবেচা আইনত নিষিদ্ধ। এই পাখিকে বাঁচাতে সংরক্ষিত পশুপাখির তালিকার চতুর্থ তফসিলে অন্তর্ভুক্তও করা হয়েছে। তবুও নীলকণ্ঠ ধরা বা কেনাবেচা বন্ধ করা যায়নি। বরং এখনও পুজোর সময়ে শহরের বহু বাড়িতেই চোরাপথে চলে এই পাখির কেনাবেচা।

বন দফতর সূত্রের খবর, নীলকণ্ঠ কেনাবেচার কথা কানে এসেছে তাঁদেরও। মাঝে ক’বছর নীলকণ্ঠ বিক্রিতে ভাটা পড়লেও ফের এই পাখি কেনাবেচা বেড়েছে বলেও জানতে পেরেছেন বনকর্তারা। তাতে রাশ টানতেই এ বার উৎসবের মরসুম শুরুর পর থেকেই সক্রিয় হয়েছে বন্যপ্রাণ শাখা। গ্যালিফ স্ট্রিট-সহ কলকাতা ও লাগোয়া এলাকার পশুপাখির বাজারগুলিতেও নজরদারি শুরু হয়েছে।

বন দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, গত রবিবার গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গ্যালিফ স্ট্রিটের পাখি-বাজারে হানা দিয়েছিল বন্যপ্রাণ শাখার একটি দল। নীলকণ্ঠ না পেলেও টিয়া, বুুলবুল, বসন্তবৌরির মতো দেশি পাখি উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে দু’জনকে। বন দফতর সূত্রের খবর, মহালয়ার পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চোরাকারবারিরা নীলকণ্ঠ পাখি ধরে শহরে নিয়ে আসে। বিভিন্ন পাখি বাজার বা ঘুরপথে সেই পাখি পৌঁছয় পুজো উদ্যোক্তাদের কাছে।

বন দফতরের একাংশের অভিমত, শুধু ধরপাকড় করে এই রীতিতে লাগাম টানা যাবে না। এর পাশাপাশি মাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোও জরুরি। কারণ, বনেদি বাড়িতে পুজো চলার সময়ে হানা দেওয়া সমস্যার। গ্রেফতারিও কার্যত অসম্ভব। তাই নীলকণ্ঠ বাঁচাতে সচেতনতার পথেই হাঁটতে চাইছেন বন্যপ্রাণ শাখার শীর্ষকর্তারা।

এ ব্যাপারে রাজ্য বন্যপ্রাণ শাখার উপ-বনপাল (সদর) এস কুলানদাইভেল বললেন, “পুজোর সময়ে নীলকণ্ঠ পাখির কেনাবেচা রুখতে সক্রিয় হতে বলে পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। পুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গেও কথা বলা হবে।”

বন দফতর সূত্রের খবর, স্থানীয় থানাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হবে শহরের বনেদি বাড়িগুলির কর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে। এমনকী, নীলকণ্ঠ পাখি ধরা এবং কেনাবেচা আটকাতে পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যে পোস্টার বিলির আয়োজনও করা হচ্ছে।

বন দফতর সূত্রে খবর, উৎসবের রীতি নিয়ে উদ্যোক্তা, বিশেষ করে বনেদি বাড়িগুলির অনেকেরই স্পর্শকাতরতা থাকে। সেই রীতি বজায় রাখতে জ্যান্ত নীলকণ্ঠ পাখি কেনার বদলে মাটির পাখি দিয়ে প্রথা পালন করার কথাও বলা হবে। শহরের পুজো উদ্যোক্তাদের অনেকে অবশ্য বলছেন, ইদানীং ধরপাকড়ের ভয়ে অনেকেই নীলকণ্ঠ পাখি কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। যদিও বনকর্তাদের অনেকেই তা মানতে নারাজ।

তা হলে গত কয়েক বছরে সে ভাবে কেউ ধরা পড়েনি কেন? বন দফতরের একটি সূত্রের খবর, বছর পাঁচেক বন্যপ্রাণ শাখা সে ভাবে পশুপাখি উদ্ধারে সক্রিয় হয়নি। কোনও বছর গড়ে ৮টি তল্লাশি হত, কোনও বছর একটি-দু’টি। সম্প্রতি তল্লাশি শুরু হয়েছে। গত বছর ৪০টির বেশি জায়গায় হানা দিয়েছিল বন দফতর। এ বছরের প্রথম থেকে এখনও পর্যন্ত কুড়িটির বেশি জায়গায় হানা দেওয়া হয়েছে।

বন দফতরে অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, এই কড়াকড়ি নিয়ে চলছে হাসি-ঠাট্টা। অনেক কর্তাই বলছেন, যুগ বদলেছে। মণ্ডপে ঘোরাঘুরি করে ঠাকুর দেখার চেয়ে ইন্টারনেটে ঠাকুর দেখেন অনেকে। বাড়ি বয়ে গিয়ে বিজয়া সারার বদলে এসএমএসেই প্রণাম করা রীতি হয়ে উঠেছে। তাই উমার ঘরে ফেরার বার্তা দিতে বেচারি নীলকণ্ঠের উড়ে যাওয়ার কী দরকার! ই-মেল বা এসএমএস করলেই তো হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE