Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

‘বোনের’ হেনস্থায় সরব দিদিরা

সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক প্রাক্তন ছাত্রী ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, মেয়েদের স্কার্টের ঝুল বা নখের আকার নিয়ে মাথাব্যথার অন্ত না-থাকলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ যৌন হেনস্থার বিপদে সুরক্ষার ছিটেফোঁটা পরোয়া করেন না।

দাবি: স্কুলপড়ুয়ার নির্যাতনে দোষীদের শাস্তি চেয়ে অবস্থান। রবিবার, টালিগঞ্জে। নিজস্ব চিত্র

দাবি: স্কুলপড়ুয়ার নির্যাতনে দোষীদের শাস্তি চেয়ে অবস্থান। রবিবার, টালিগঞ্জে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৩১
Share: Save:

এ বার জি ডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশন স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরব হলেন প্রাক্তন ছাত্রীরা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক প্রাক্তন ছাত্রী ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, মেয়েদের স্কার্টের ঝুল বা নখের আকার নিয়ে মাথাব্যথার অন্ত না-থাকলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ যৌন হেনস্থার বিপদে সুরক্ষার ছিটেফোঁটা পরোয়া করেন না। অথবা, মেয়েদের অন্তর্বাসের রং নিয়ে কটাক্ষ করে প্রকাশ্যে অপমান করা হলেও, স্কুলে সিসিটিভি বসানো নিয়ে তাপ-উত্তাপ ছিল না কর্তৃপক্ষের।

জি ডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশন-এর অন্দরে এই ‘আপাত শৃঙ্খলা’র আড়ালে আসলে মেয়েদের প্রতি চরম অবহেলাই বছরের পর বছর প্রকাশ পেয়েছে বলে এখন মুখ খুলছেন প্রাক্তনীরা। ২০১৪ সালে স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ তুষিতা বসু বলছেন, ‘‘স্কুলে এখনও অনেক ভাল শিক্ষক রয়েছেন। জীবনের অনেক ভাল শিক্ষা স্কুলে পেয়েছি, কিন্তু এত বড় অন্যায়ের সামনে কী ভাবে মুখ বন্ধ করে থাকব!’’

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির সদ্য স্নাতক তরুণী ফেসবুকেও তাঁর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘স্রেফ স্কুলের বাইরে ভিড় করে সমস্যা মিটবে না। স্কুলের পরিচালন সমিতির সদর, ক্যামাক স্ট্রিটের ইন্ডাস্ট্রি হাউজ থেকে সব ঠিক করা হয়। প্রধান শিক্ষিকা তো আদতে পুতুল। তাঁর গাফিলতি এবং বাচ্চা মেয়েটির বিষয়ে দায়সারা নিষ্ঠুর মন্তব্যের জন্য শাস্তি হলে হোক, কিন্তু স্কুলের খোলনলচে পাল্টাতে ইন্ডাস্ট্রি হাউজেই আন্দোলন চালাতে হবে।’’

তুষিতার সুরে সুর মিলিয়ে একই কথা বলছেন জি ডি বিড়লার আর এক প্রাক্তনী সঞ্চারী মুখোপাধ্যায়। আগামী সপ্তাহে দিনক্ষণ ঘোষণা করে ইন্ডাস্ট্রি হাউজে বিক্ষোভ দেখানোর জন্য ফেসবুকে ইভেন্ট তৈরি করা হবে বলে তিনিও জানিয়ে রেখেছেন। প্রেসিডেন্সি-যাদবপুরে অঙ্ক নিয়ে পড়ার পরে কল্যাণীর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর প্রাক্তন গবেষক সঞ্চারী লিখেছেন, ‘‘কর্তৃপক্ষের একাংশের গাফিলতির জন্য আমাদের স্কুলের এই দুর্নাম সহ্য করব না।’’

জি ডি বিড়লা-র নামাঙ্কিত স্কুলটি, অশোক হল গ্রুপ অব স্কুলস-এর দ্বারা পরিচালিত। ওই গোষ্ঠীর কর্ত্রীর নাম করেই আঙুল তুলেছেন তুষিতা এবং বহু প্রাক্তন ছাত্রী। পড়ুয়াদের নিরাপত্তার খামতির পরিবেশের জন্য প্রধানত স্কুলের পরিচালন গোষ্ঠীর ভূমিকাই দায়ী বলে তাঁরা মনে করছেন।

প্রাক্তনীদের এ ভাবে সরব হওয়ার কাজটা সহজ ছিল না। সামগ্রিক ভাবে স্কুলের একেবারে নিচু ক্লাসের পড়ুয়া, চার বছরের মেয়েটির নির্যাতিতা হওয়ার ঘটনাতেই সবার ক্ষোভের বাঁধ ভেঙেছে। তুষিতা-সঞ্চারীরা বলছেন, আমাদের ছোট্ট বোনটির কথা ভেবেই মুখ খুলছি। আর এক প্রাক্তনী রূপলেখা বসু ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘স্কুলের অজস্র নিরীহ ছাত্রীদের ভোগান্তি-কষ্টের কথা ভেবেই তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে!’’

এ বছরই জি ডি বিড়লা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কানাডার টরন্টোয় ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে মনস্তত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করছেন রূপলেখা। তাঁর ফেসবুক পোস্ট ইতিমধ্যেই জনে জনে ছড়িয়ে পড়েছে। রূপলেখার অভিযোগ, স্কুলে কোনও মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেও সচরাচর কর্তৃপক্ষের মন গলে না। উল্টে শৃঙ্খলার নাম করে তাঁকে মিথ্যাবাদী বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। সেই স্কুলে মেয়েদের নিরাপত্তার দিকটি অবহেলিত কেন বলেও ফেসবুকে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। ক্লাস এইটে পড়াকালীন এক বার নিজের অসুস্থতার সময়ে স্কুলে চরম হেনস্থার কথা লিখেছেন রূপলেখা। জ্বর-বমিতে কাবু অবস্থাতেও স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে আমলই দেননি। সহপাঠিনীরা না-থাকলে সে যাত্রা তিনি বড় বিপদে পড়তেন বলে মনে করেন রূপলেখা।

এই মেয়েদের থেকে কিছু বছর আগে, ২০০৩ নাগাদ জি ডি বিড়লা থেকে বারো ক্লাস পাশ ঈপ্সিতা বন্দ্যেপাধ্যায়ও ব্যথিত, নিজেদের স্কুল থেকে এতশত খারাপ কথা বার বার শুনতে হচ্ছে বলে। তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের সময়ে স্কুলের ভিতরে এই নিরাপত্তাহীনতার বোধ কিন্তু ছিল না। জানি না, স্কুলের প্রশাসন কেন এতটা খারাপ হয়ে গেল!’’

স্কুলে যৌন হেনস্থায় সুরক্ষার জন্য প্রাক্তনীদের অনেকেই সেল গড়ায় জোর দিচ্ছেন। কী ভাবে প্রাক্তনীরা কাজ করবেন, তার রূপরেখা এখনও ঠিক হয়নি। তুষিতাই বলছেন, ‘‘স্কুলের মেয়েরা দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে। তাঁদের মধ্যে ভাল উকিলরাও আছেন। মেয়েদের নিরাপত্তা বা আইনি সুরক্ষার কাজে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অনেকেই কাজ করতে উৎসুক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE