দোরগোড়ায় মাধ্যমিক। উচ্চ মাধ্যমিক তার ক’দিন পরেই। শনিবার বিকেলে নারকেলডাঙার ভয়াবহ আগুনে ছাই হয়ে গিয়েছে তিন মাধ্যমিক এবং এক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর বাড়ি। তাদের সমস্ত বই, নোটের খাতা থেকে শুরু করে আধার কার্ড, বার্থ সার্টিফিকেটও আর অবশিষ্ট নেই। এই অবস্থায় ওই পরীক্ষার্থীরা বুঝতে পারছে না, এ বছর তারা আদৌ পরীক্ষায় বসতে পারবে কি না। দিন কাটছে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে।
অগ্নিকাণ্ডে সব খুইয়েছে রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিটের বাসিন্দা মোট ৩৬টি পরিবার। আপাতত তাঁদের ঠাঁই হয়েছে উল্টো দিকে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হলঘরে। কিন্তু সব থেকে সমস্যায় পড়েছে তিন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। দু’টি ঘুপচি ঘরে মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন পেশায় কলকাতা পুরসভার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মহম্মদ কওসর। তাঁর একমাত্র মেয়ে ইনসা কওসর এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।
শনিবার ঘটনার সময়ে নিজের বাড়িতেই পড়াশোনা করছিল কওসর। পাশের বাড়ি থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখে মাকে নিয়ে কোনও রকমে ছুটে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসে সে। মা ও মেয়ে প্রাণে বাঁচলেও বাড়ির যাবতীয় জিনিসপত্র পুড়ে গিয়েছে। খাতা-বইয়ের সঙ্গেই পুড়ে গিয়েছে মাধ্যমিকের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, বার্থ সার্টিফিকেট ও আধার কার্ড। বাড়ির জীবনবিমার নথি, ব্যাঙ্কের পাসবইও পুড়ে ছাই। শনিবার রাতে নারকেলডাঙাতেই এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাত কাটিয়েছেন তাঁরা। মহম্মদ কওসরের কথায়, ‘‘আত্মীয়দের বাড়িতে এক-দু’দিন থাকা যায়। তার পরে কী করব, জানি না। আমার মেয়ে বরাবরই পড়াশোনায় ভাল। বাড়ি পুড়ে যাওয়ার পরে ইনসার গৃহশিক্ষকদের আসতে বারণ করেছি। জানি না, ও কী ভাবে পরীক্ষায় বসতে পারবে।’’
হতাশার মধ্যে কিঞ্চিত আশার কথাও শুনিয়েছেন তিনি। বললেন, ‘‘ওর স্যারেরা খোঁজ নিচ্ছেন। নোট জোগা়ড় করে দেবেন বলে জানিয়েছেন। স্থানীয় কাউন্সিলরও আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দেখা যাক, কী হয়।’’ এত বড় বিপদ ঘটে গেলেও অবশ্য পরীক্ষায় বসার ব্যাপারে অনড় ইনসা। তার কথায়, ‘‘আমি পরীক্ষায় বসতে চাই। স্যারেরা সাহায্য করবেন বলেছেন। বই আর কোচিংয়ের নোট পেয়ে গেলে আমার পরীক্ষা দিতে অসুবিধা হবে না।’’
ইনসার মতোই শোচনীয় অবস্থা সাকলাইন হায়দার, মহম্মদ আদনান ও মহম্মদ আকিবের। নারকেলডাঙার পুড়ে যাওয়া বাড়ির দোতলায় থাকত ওরা। সাকলাইন ও আদনান রাজাবাজারের একটি স্কুল থেকে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। মহম্মদ আকিব উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তিন জনেরই বাড়ি আগুনে পুড়ে যাওয়ায় কী ভাবে পরীক্ষায় বসতে পারবে, তা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে ওরা। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর ইকবাল আহমেদ বলেন, ‘‘ওই পড়ুয়ারা যাতে পরীক্ষায় বসতে পারে, তার জন্য সব রকম সাহায্য করা হবে। তাদের যাবতীয় বইয়ের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy