Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

দগ্ধ রোগীদের সরকারি শুশ্রূষা চলছে খুঁড়িয়েই

ফি বছরই দীপাবলির প়রে আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। কারণ, বাজি পোড়াতে গিয়ে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৭ ০৬:০০
Share: Save:

কোথাও আলাদা বিভাগই নেই। কোথাও আবার আলাদা বিভাগ আছে বলেই ইমার্জেন্সি বিভাগে পরিষেবা মেলে না। তাই নাজেহাল হন রোগীরা।

ফি বছরই দীপাবলির প়রে আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। কারণ, বাজি পোড়াতে গিয়ে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। বার্ন ইউনিটে ভর্তি হওয়ার জন্য হাহাকার পড়ে যায় বিভিন্ন হাসপাতালে। প্রতি বছরই এ সময়ে প্রশ্ন ওঠে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়ে। এমন সমস্যায় কতটা প্রস্তুত শহরের সমস্ত সরকারি হাসপাতাল?

অভিযোগ, আর জি কর এবং এসএসকেএম ছাড়া অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালেই অগ্নিদগ্ধ রোগীরা পর্যাপ্ত চিকিৎসা পরিষেবা পান না। যেমন শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে মাত্র ৬টি শয্যা রয়েছে। প্লাস্টিক সার্জারির পরিকাঠামো নেই। দেহ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত পুড়ে গেলে সামাল দিতে পারেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হলে এসএসকেএমের উপরে ভরসা করতে হয়। শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের সুপার সৌমাভ দত্ত বলেন, ‘‘কালীপুজোর রাতে সব শয্যা ভর্তি হয়ে গিয়েছে। ফলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কোনও রোগী এলে প্রাথমিক চিকিৎসা করে এসএসকেএমে পাঠিয়ে দিতে হবে।’’ এম আর বাঙুর হাসপাতালে অবশ্য ৭০ শয্যা বিশিষ্ট বার্ন ইউনিট রয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ নেই। তাই স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারছে না ওই ইউনিট।

এনআরএসে আলাদা বার্ন ইউনিট নেই। তাই পুড়ে যাওয়া রোগীদের সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়। অস্ত্রোপচারও জেনারেল সার্জারির চিকিৎসকেরাই করেন। তার পরে রোগীদের ওই বিভাগের স্পেশ্যাল ইউনিটে রাখা হয়। তাই পৃথক বার্ন ইউনিট দরকার বলে মনে করছেন হাসপাতালের সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু দীপাবলির সময়ে নয়, বছরভর বিভিন্ন এলাকা থেকেই পুড়ে যাওয়া রোগীরা হাসপাতালে আসেন। এটা জরুরি চিকিৎসার মধ্যেই পড়ে। তাই হাসপাতালে আলাদা বার্ন ইউনিট থাকলে ভাল হয়।’’

মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪০ শয্যার বার্ন ইউনিট থাকলেও চাহিদার তুলনায় তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানান, অনেক সময়ে জরুরি বিভাগে পুড়ে যাওয়া রোগীকে ভর্তি করা নিয়েও সমস্যা হয়। বার্ন ইউনিটে শয্যা না থাকলে জরুরি বিভাগে তাঁদের ভর্তি করা হলেও সব রকম পরিষেবা দেওয়া যায় না। হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান, চিকিৎসক নির্মল মাজি বলেন, ‘‘৪০ শয্যা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। তাই দ্রুত বার্ন ইউনিটকে ৬০ শয্যাবিশিষ্ট করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এসএসকেএম হাসপাতালের মডেলে এখানে জরুরি বিভাগে পুড়ে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার পরিকাঠামো তৈরি করা হবে।’’

অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের ভরসার জায়গা হলেও বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে এসএসকেএমে। বার্ন ইউনিটে ৩০টি এবং প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে ৬০টি শয্যা রয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় কোনও অগ্নিদগ্ধ রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগে ভর্তি করে তাঁকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি, রাজ্যের একমাত্র স্কিন ব্যাঙ্ক রয়েছে সেখানে। তাই পুড়ে যাওয়া রোগীর চামড়া প্রতিস্থাপন করার সুযোগ পিজি-তে বেশি। তবে, রোগীদের একাংশের অভিযোগ, পরিকাঠামো থাকলেও পরিষেবা পর্যাপ্ত নয়। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, স্কিন ব্যাঙ্ক কর্মীর অভাবে ধুঁকছে। যদিও এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ এ সব মানতে নারাজ। হাসপাতালের এক কর্তার কথায়, ‘‘রাজ্যের সব চেয়ে উন্নত বার্ন ইউনিট এই হাসপাতালে। অন্যদের মডেল।’’ আর জি কর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম দিয়ে অগ্নিদগ্ধদের অস্ত্রোপচার হয় প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে।
এ ছাড়াও ৪০ শয্যাবিশিষ্ট বার্ন ইউনিট রয়েছে। যেখানে অগ্নিদগ্ধ শিশুদের চিকিৎসা হয়। যদিও চাহিদার অনুপাতে এটাও যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন কর্তাদের একাংশ। আর জি করের প্রিন্সিপাল শুদ্ধোদন বটব্যাল বলেন, ‘‘প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের পরিকাঠামো যথেষ্ট উন্নত। রিকনস্ট্রাকশন অপারেশন, অর্থাৎ পুড়ে যাওয়ার পরে বিভিন্ন অঙ্গকে পুনরায় আগের চেহারায় ফেরানোর একাধিক অস্ত্রোপচার এখানে হয়। অনেক হাসপাতালে সেই পরিকাঠামো নেই। তাই রোগীর বাড়তি চাপ রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE