Advertisement
০৫ মে ২০২৪
পুজোয় চাই
Dengue

বন্ধ হোক রোগ নিয়ে তথ্য গোপন

শহর জুড়ে ঘরে ঘরে জ্বর। শিশু থেকে বৃদ্ধ, আক্রান্ত সবাই। রক্ত পরীক্ষায় অনেকের এনএস-১ পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু এলাইজা পরীক্ষার আগেই রোগীর মৃত্যু হচ্ছে কিছু ক্ষেত্রে। সংক্রমণের জেরে লিভার খারাপ হচ্ছে। পেটের অসুখ সারছেই না। এত দিন তবু জ্বরের কথাটা স্বীকার করছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ কিংবা স্বাস্থ্য দফতর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:০৭
Share: Save:

তথ্য গোপনের জেরেই কি সংক্রমণের আতঙ্ক আরও চেপে বসছে? বাড়ছে বিপর্যয়ের আশঙ্কা?

শহর জুড়ে ঘরে ঘরে জ্বর। শিশু থেকে বৃদ্ধ, আক্রান্ত সবাই। রক্ত পরীক্ষায় অনেকের এনএস-১ পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু এলাইজা পরীক্ষার আগেই রোগীর মৃত্যু হচ্ছে কিছু ক্ষেত্রে। সংক্রমণের জেরে লিভার খারাপ হচ্ছে। পেটের অসুখ সারছেই না। এত দিন তবু জ্বরের কথাটা স্বীকার করছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ কিংবা স্বাস্থ্য দফতর। এখন ডেঙ্গি বলা তো দূর, জ্বরের বিষয়টিও চেপে গিয়ে মৃত্যুর কারণ হিসেবে পেটের রোগকে দায়ী করা হচ্ছে।

কেন্দ্রের আইসিএমআর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ)-এর এক সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞের অভিমত, ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া বা অন্য সংক্রামক রোগের অন্যতম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল লিভার ও কিডনির মতো অঙ্গের প্রদাহ। তার জেরে জন্ডিস বা আন্ত্রিকও হতে পারে। কিডনির ক্ষতি হলে তখনই বোঝা যায় না। মালুম হয় কয়েক বছর পরে।

ওই বিশেষজ্ঞের ব্যাখ্যা, রোগ প্রতিরোধের মূল কথাই হল, সংক্রমণ কোথায় ছড়িয়েছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সংগ্রহ করে সেই সব অঞ্চলকে বছরভর নজরদারিতে রাখা। কিন্তু রোগের তথ্যই যদি চাপার চেষ্টা হয়, তা হলে রোগ প্রতিরোধের ভিত্তিই নষ্ট হয়ে য়ায়। কেন্দ্রের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কমিউনিকেবল ডিজিজেস’-এর এক অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী বললেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে জীবাণু প্রতিরোধের সঙ্গে সচেতন করাও জরুরি।’’ তার পদ্ধতি দু’রকম। এক দিকে জীবাণু ও তার বাহক থেকে সাবধানে থাকতে হবে, পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, প্রয়োজনে প্রতিষেধক নিতে হবে, অন্য দিকে মানুষকে বলতে হবে, রোগ হলেই তা স্থানীয় প্রশাসনকে জানাতে। যাতে তথ্যপঞ্জি তৈরি করা যায়।

পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ডেঙ্গির এনএস-১ পরীক্ষার ফল নিয়ে অযথা জটিলতা বাড়াচ্ছে সরকার ও পুরসভাগুলি। এক বিশেষজ্ঞের ব্যাখ্যা, এনএস-১ সতর্কতামূলক পরীক্ষা। ডেঙ্গির জীবাণুর অ্যান্টিজেনের উপস্থিতিই এনএস-১ পজিটিভ। পরবর্তী পর্যায়ে এলাইজা পরীক্ষায় অনেক ক্ষেত্রেই এনএস-১ পজিটিভ রক্তে ডেঙ্গির অ্যান্টিবডি মেলে না।

ওই পরীক্ষায় ডেঙ্গির অ্যান্টিবডি মিললেই ডেঙ্গি পজিটিভ বলা হয়।

কিছু ক্ষেত্রে এনএস-১ পজিটিভ ব্যক্তির রক্তে অ্যান্টিবডি মেলে। তাই এনএস-১ পজিটিভ রোগীকে সাবধানে রাখাই নিয়ম।

এক দিকে রোগ প্রতিরোধের গোড়ায় গলদ, অন্য দিকে সচেতনতা অভিযানের ভুল প্রয়োগে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, সোয়াইন ফ্লু নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে বলে মত পরজীবী বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের এক জনের কথায়, রোগের তথ্য গোপন করতে যেমন রোগীর আত্মীয়, চিকিৎসক ও হাসপাতাল-নার্সিংহোমকে চাপ দেওয়া হচ্ছে, তেমনই পেঁপে পাতার রস ডেঙ্গির প্রতিষেধক বলে যে প্রচার চলছে, তা ঠেকানোর উদ্যোগ পুরসভা বা স্বাস্থ্য দফতরের নেই।

ওই পরজীবী বিশেষজ্ঞ বলছেন, ‘‘ডেঙ্গির প্রতিষেধক নেই বলে পেঁপে পাতার রস খেতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। ওই রসে প্লেটলেট বাড়ে না। উল্টে চাপ পড়ে লিভারে। বমি হয়ে রক্তচাপ বাড়ে। তাতে রক্তক্ষরণের আশঙ্কা বেড়ে যায়।’’ তথ্য চাপার অভিযোগ অবশ্য কলকাতা ও সংলগ্ন পুরসভাগুলি স্বীকার করেনি। মানেনি স্বাস্থ্য দফতরও। এক স্বাস্থ্যকর্তার মন্তব্য, ‘‘যা ঘটছে, কেবল তা-ই বলছি। যা ঘটেনি, তা প্রকাশ করে আতঙ্ক ছড়াতে নিষেধ করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE