ধারদেনার চাপ নয়, খুনের কারণ আসলে স্ত্রীর সন্দেহবাতিক মনোভাব। তাতেই তিতিবিরক্ত হয়ে স্ত্রী জেসিকাকে খুন করেন নীল ফনসেকা। আর তার পরেই তাঁর মনে হয়, স্ত্রীর অবর্তমানে যমজ নাবালক ছেলে জোশুয়া ও ড্যারেনের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে। তাই ঘুমিয়ে থাকা ১৬ বছরের দুই ছেলেকে প্রথমে মাথায় ডাম্বেলের বাড়ি মেরে, তার পরে নিশ্চিত হওয়ার জন্য গলা কেটে খুন করেন নীল— পাম অ্যাভিনিউয়ে খুনের মামলার তদন্তে এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিশ।
১৬ জানুয়ারি পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাটে পরিবারের তিন জনকে খুনের মামলায় অভিযুক্ত পেশায় ইন্টিরিয়র ডিজাইনার নীল ফনসেকার বিরুদ্ধে গোয়েন্দারা চার্জশিট দেন গত ১২ এপ্রিল। আলিপুর জজ কোর্টে চার্জ গঠন হবে জুন মাসে। এ ছাড়া, ফাস্ট ট্র্যাক এক নম্বর কোর্টে জুনের শেষে ওই মামলার বিচার শুরু হবে বলে আশা করছে কলকাতা পুলিশ। নীল এখন জেলে। তদন্তকারীদের আশা, বন্দি অবস্থাতেই বিচার শুরু হবে তাঁর।
স্ত্রী ও দুই ছেলেকে খুন করে নীলের মনে হয়েছিল, তাঁরও বেঁচে থাকা অর্থহীন। তখন ছুরি দিয়ে নিজের গলার নলি কেটে ফেলেন তিনি। ব্রড স্ট্রিটের একটি নার্সিংহোমে এক মাস রেখে তাঁর চিকিৎসা চলে। ১৭ ফেব্রুয়ারি সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে নীলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ১৫ জানুয়ারি রাতে সপরিবার একটি পার্টিতে যান নীল। তখন তাঁর মোবাইল বন্ধ ছিল। ভোরে ঘুম ভেঙে যাওয়ার পরে ফোন খুলে তিনি কার কার মিসড্ কল, এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ এসেছে— সে সব দেখছিলেন। ঘটনাচক্রে তখনই ঘুম ভাঙে জেসিকারও। তাঁর সন্দেহ হয়, নীল অন্য নারীতে আসক্ত এবং মোবাইলের মাধ্যমে মেসেজে দু’জনের কথাবার্তা চলছে। এই নিয়ে স্বামীর সঙ্গে অশান্তি শুরু হয় তাঁর।
তদন্তকারীদের নীল জানান, তাঁর সঙ্গে এক মহিলার সম্পর্ক ছিল ঠিকই, কিন্তু তিন বছর আগে সে সব চুকে গিয়েছে। অথচ তার পরেও নীলের উপর জেসিকার সন্দেহ যায়নি। নীল মোবাইলে কথা বললে বা মেসেজ করলেই জেসিকার সন্দেহ হত যে তিনি ফের সেই মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। নীলের বক্তব্য, অনর্থক সন্দেহ করে জেসিকা তাঁর জীবন অতিষ্ঠ করে দিয়েছিলেন। দিনের পর দিন এ রকম হতে হতে ১৫ জানুয়ারি রাতে মেজাজ হারিয়ে জেসিকাকে খুন করেন তিনি।
সেই সময়ে একই ফ্ল্যাটে পাশের ঘরে ছিলেন নীলের মা শার্লি ও মেয়ে সামান্থা। আমেরিকায় পড়াশোনা করা সামান্থা বড়দিনের ছুটি উপলক্ষে এসেছিলেন। পুলিশের কাছে নীলের দাবি, স্ত্রীকে খুন করার পরে তাঁর মনে হয়, সামান্থা সাবালিকা এবং বাইরে পড়াশোনা করেন বলে মায়ের অবর্তমানে তাঁর কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু নাবালক দুই ছেলের ভবিষ্যৎ শেষ হয়ে যাবে বলে তাদেরও খুন করেন তিনি। তদন্তকারীদের কাছে নীলের দাবি, বাজারে তাঁর লক্ষ লক্ষ টাকা ধার ছিল ঠিকই, কিন্তু ইন্টিরিয়রের ব্যবসায় তিনি যে পরিমাণ বরাত পেয়েছিলেন, তাতে তা শোধ করা সমস্যা ছিল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy