Advertisement
০৪ মে ২০২৪

জমি বিবাদেই ফেঁসেছি, দাবি বন্দর-প্রধানের

জমির দখল নিয়ে তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ চলচ্চিত্র প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতার সঙ্গে বিবাদেই তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে বলে ঘুরিয়ে অভিযোগ করলেন কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান রাজপাল সিংহ কাহালোঁ। বুধবার সন্ধ্যায় চৌরঙ্গির একটি পাঁচতারা হোটেলে ২০ লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে কাহালোঁকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। এ দিন তাঁকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করা হয়।

ব্যাঙ্কশাল কোর্ট থেকে বেরিয়ে আসছেন রাজপাল সিংহ কাহালোঁ।-নিজস্ব চিত্র।

ব্যাঙ্কশাল কোর্ট থেকে বেরিয়ে আসছেন রাজপাল সিংহ কাহালোঁ।-নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৬ ০৩:২২
Share: Save:

জমির দখল নিয়ে তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ চলচ্চিত্র প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতার সঙ্গে বিবাদেই তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে বলে ঘুরিয়ে অভিযোগ করলেন কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান রাজপাল সিংহ কাহালোঁ। বুধবার সন্ধ্যায় চৌরঙ্গির একটি পাঁচতারা হোটেলে ২০ লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে কাহালোঁকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। এ দিন তাঁকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করা হয়। সেখানেই নিজের বোনের উদ্দেশে কাহালোঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘পি-৫১ হাইড রোডের জমিটি দখলমুক্ত করার জন্যই আমাকে ফাঁসানো হল!’’ এজলাসের বাইরে তাঁর বোন অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই তাঁর দাদাকে ফাঁসানো হয়েছে। আদালতের বাইরে ষড়যন্ত্রের কথা বলেছেন রাজপালের আইনজীবী অমিত ভট্টাচার্যও।

বুধবার সন্ধ্যায় কাহালোঁর সঙ্গেই গ্রেফতার হন মুম্বইয়ের একটি ব্যবসায়িক সংস্থার ডিরেক্টর জগতাপ দত্তাজি। অভিযোগ, তিনি কাহালোঁকে ঘুষ দিচ্ছিলেন। এ দিন দু’জনকেই বিচারক দেবব্রত সিংহের এজলাসে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁদের ১৭ মার্চ পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

যে জমি নিয়ে বিবাদে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কাহালোঁ, সেই পি-৫১ হাইড রোডে মোহতার সংস্থা ভেঙ্কটেশ ফিল্মস পাঁচটি স্টুডিও তৈরি করে। পরবর্তী কালে সেই জমির দখল পেতে বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হয় বন্দর কর্তৃপক্ষকে। সেই সময় বন্দর কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেন, মোহতা শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলেই তাঁর দখলে থাকা জমি খালি করাতে কলকাতা পুলিশ ঢিলেমি দেখাচ্ছে। পরে আদালতের নির্দেশে পুলিশের উপস্থিতিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ জমির দখল পান।

কাহালোঁর অভিযোগ, তারই বদলা নিতে ফাঁসানো হয়েছে তাঁকে। যাঁর বিরুদ্ধে কাহালোঁর অভিযোগ সেই শ্রীকান্ত মোহতা অবশ্য বলেন, ‘‘আমি এর সঙ্গে কোনও ভাবেই জড়িত নই। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলব। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেব।’’

তবে কাহালোঁর গ্রেফতারিকে সহজ ভাবে নিচ্ছে না জাহাজ মন্ত্রক। সেই কারণেই এখনই তাঁকে সরানো হচ্ছে না বলে জানান মন্ত্রকের এক কর্তা। তিনি বলেন, ‘‘সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জাহাজ মন্ত্রককে অন্ধকারে রেখে কেন ওই সিনিয়র আইএএসকে গ্রেফতার করা হল, রাজ্য সরকারের কাছে তা জানতে চাওয়া হবে।’’ ইতিমধ্যেই এ নিয়ে কলকাতা বন্দরের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছেন কেন্দ্রীয় জাহাজ সচিব রাজীব কুমার। কাহালোঁ যে হেতু সিনিয়র আইএএস, তাই জাহাজ মন্ত্রকে রিপোর্ট পাঠাতে হবে কলকাতা পুলিশকেও। মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব অলোক শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘পুলিশি রিপোর্ট খতিয়ে দেখেই পরবর্তী পদক্ষেপ করব আমরা।’’

বন্দরের একাংশের ধারণা, কাহালোঁ সম্পর্কে পুলিশের কাছে খবর গিয়েছে বন্দরের ভিতর থেকেই। কাহালোঁ পদ খোয়ালে যাঁরা লাভবান হবেন, তাঁরাই এর পিছনে আছেন। লালবাজারের একাংশ বলছেন, সাধারণত এ সব ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্নীতি দমনের দায়িত্বে থাকা সিবিআইকে জানানো দস্তুর। কাহালোঁর ক্ষেত্রে তা হয়নি। বরং ছক কষেই কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স, গোয়েন্দা বিভাগ ও নিউ মার্কেট থানা তাঁকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারি কর্তাকেও দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতারের অধিকার রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের রয়েছে।’’

এ দিন আদালতে সরকারি আইনজীবী তমাল মুখোপাধ্যায় জানান, হোটেলে ঘুষ লেনদেনের সময় হাতেনাতে ধরা হয়েছে কাহালোঁ এবং দত্তাজিকে। ঘুষের ২০ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। হোটেলে ওই ডিরেক্টরের ঘর থেকে আরও ১১ লক্ষ টাকা এবং মুম্বই থেকে কলকাতায় আসার উড়ানের বোর্ডিং পাস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এ দিন লালবাজারে গোয়েন্দা প্রধান দেবাশিস বড়াল বলেন, ‘‘কাহালোঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে চার লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে। ওঁর অফিসেও তল্লাশি চালানো হয়েছে।’’

কাহালোঁর আইনজীবী অমিত ভট্টাচার্য আদালতে বলেন, তাঁর মক্কেল যে ঘুষ নিচ্ছিলেন, এমন অকাট্য প্রমাণ পুলিশের হাতে নেই। টাকাভর্তি ব্যাগ এবং যে গাড়ি থেকে তা উদ্ধার করা হয়েছে, তা-ও বন্দর চেয়ারম্যানের নয়। শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে এ ভাবে কাউকে গ্রেফতার করা যায় না। ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছেন বিচারক। আদালতের নির্দেশ, ধৃতদের উপরে শারীরিক নির্যাতন করা যাবে না। নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষাও করাতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE