বাংলা খবরের চ্যানেল দেখার উপায় নেই। ইন্টারনেট, হোয়াটস্অ্যাপ আর মোবাইল আছে। তাতেই মূহুর্মূহু বার্তা আসছিল। একটার পর একটা বুথে গোলমাল হচ্ছে। একের পর কর্মী-সমর্থক, সাধারণ ভোটার, সাংবাদিক আক্রান্ত হচ্ছেন। মোবাইল কানে সম্মেলন কক্ষ থেকে ঘন ঘন বাইরে বেরিয়ে আসছেন এক এক জন। প্রাণপণ চেষ্টা চলছে কর্মী বাহিনীর মনোবল চাঙ্গা রাখার।
সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসে শনিবার দিনভর এ ভাবেই ছায়া ফেলে গেল কলকাতার পুরভোট। কলকাতা জেলার নেতারা বেশির ভাগই বিশাখাপত্তনমে আসেননি। যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদেরও ১০ জন দু’দিন আগে ফিরে গিয়েছেন। বাকি রাজ্যের যাঁরা এখানে আছেন, সম্মেলনের পঞ্চম দিনে দলের রাজনৈতিক লাইন ও সাংগঠনিক হালহকিকত নিয়ে আলোচনার চেয়ে তাঁরা বেশি মনোযোগী ছিলেন কলকাতা থেকে আসতে থাকা হাঙ্গামার খবর নিয়েই।
কলকাতার পুরভোটে ব্যাপক ‘রিগিং’য়ের প্রতিবাদে পার্টি কংগ্রেসে এ দিন একটি প্রস্তাবও গৃহীত হয়েছে। প্রস্তাব এনেছিলেন বাংলায় দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র নিজেই। যেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার, শাসক দল তৃণমূল এবং প্রশাসনের সব যন্ত্র মিলে যে ভাবে কলকাতার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের উপরে আক্রমণ চালানো হয়েছে, তার কড়া নিন্দা করা হয়েছে। সূর্যবাবু পরে বলেন, ‘‘শুধু আমরাই নয়। সমস্ত বিরোধী দল, সাধারণ মানুষ, সংবাদমাধ্যমও আক্রান্ত। শাসক দলের হাত থেকে কারও নিস্তার নেই! মানুষকে বলছি, আরও প্রতিবাদ না করলে আমরা-আপনারা সকলেই আরও আক্রান্ত হব!’’
কলকাতায় তৃণমূলের সন্ত্রাসের প্রতিবাদে পার্টি কংগ্রেসের আসরে এ দিন ভাষার ব্যবধান মুছে নিজেদের রাজ্যের লব্জে বাংলার আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে স্লোগান তুলেছেন গোটা দেশের প্রতিনিধিরা। এক কথায় যা অভূতপূর্ব। প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের উপরে হামলা এবং কিড স্ট্রিটে ফুয়াদ হালিম-সহ সিপিএম নেতাদের লক্ষ করে গুলিচালনার ঘটনার কড়া নিন্দা করা হয়েছে প্রস্তাবে।
সূর্যবাবুর কথায়, ‘‘এই আক্রমণ প্রমাণ করছে, শাসক দলের সামনে আর কোনও রাস্তা খোলা নেই! তবে কলকাতার মানুষ আগের চেয়ে বেশি সক্রিয় হয়েছেন। যতটুকু সুযোগ পেয়েছেন, তাঁরা প্রতিবাদ করেছেন।’’ পার্টি কংগ্রেসের সঙ্গে ভোটের দিন মিলে যাওয়ায় সেই প্রতিবাদে সামিল হতে না পারার আক্ষেপ এখন বাংলার বাম নেতাদের মুখে। সূর্যবাবু যেমন বলেই দিলেন, ‘‘আমাদের শরীরটা এখানে, মন পড়ে বাংলায়! কর্মী-সমর্থকদের নতুন করে কোনও বার্তা দেওয়ার ধৃষ্টতা আমার নেই। তাঁরাই আক্রমণের মুখে লড়াই করে আমাদের বার্তা দিচ্ছেন।’’ সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য এস আর পিল্লাইও বলেছেন, ‘‘বাংলার মানুষই এই আক্রমণের জবাব দেবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy