Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
দুর্নীতির অভিযোগ বিরোধীদের, নীরব মেয়র

পরোয়া নেই ক্ষতির, পাশ লেক মল চুক্তি

রাজ্য সরকারের প্রায় ২৪ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতির সম্ভাবনাকে আমল না দিয়েই বিতর্কিত লেক মল চুক্তিটি পুরসভার অধিবেশনে পাশ করিয়ে নিল তৃণমূল। ওই চুক্তিতে লেক মলের নির্মাণ সংস্থা ভেঙ্কটেশ ফাউন্ডেশন প্রাইভেট লিমিটেডকে ‘বিশেষ’ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুরসভার বিরুদ্ধে। এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য দাবি করেছিলেন বিরোধীরা।

পুর অধিবেশনে বাম কাউন্সিলরদের প্রতিবাদী পোস্টার। ছবি: প্রদীপ আদক

পুর অধিবেশনে বাম কাউন্সিলরদের প্রতিবাদী পোস্টার। ছবি: প্রদীপ আদক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৩৪
Share: Save:

রাজ্য সরকারের প্রায় ২৪ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতির সম্ভাবনাকে আমল না দিয়েই বিতর্কিত লেক মল চুক্তিটি পুরসভার অধিবেশনে পাশ করিয়ে নিল তৃণমূল। ওই চুক্তিতে লেক মলের নির্মাণ সংস্থা ভেঙ্কটেশ ফাউন্ডেশন প্রাইভেট লিমিটেডকে ‘বিশেষ’ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুরসভার বিরুদ্ধে। এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য দাবি করেছিলেন বিরোধীরা। কিন্তু সভায় হাজির থাকা সত্ত্বেও নিজে মুখ খোলেননি মেয়র। উল্টে বক্তৃতা দিতে এগিয়ে দেন মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদারকে। যিনি বলেন, “চুক্তিতে যা রয়েছে, তাতে ভেঙ্কটেশ যা বলবে, তা-ই আমাদের করতে হবে।”

পুরসভার হাতে থাকা লেক বাজারকে ভেঙে পিপিপি মডেলে লেক মল তৈরির ব্যাপারে ১৯৮৭ সালে বড়বাজারের অরুণ প্লাস্টিকের (পরে যার নাম পাল্টে হয় ভেঙ্কটেশ ফাউন্ডেশন) সঙ্গে ৬০ বছরের লিজ চুক্তি হয়েছিল পুরসভার। যদিও সেই মূল চুক্তিপত্রের খোঁজ মিলছে না। সম্প্রতি পুরনো চুক্তিটি ৩০ বছর করে দু’ভাগে ভেঙে ভেঙ্কটেশ কর্তৃপক্ষকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুরসভার বিরুদ্ধে। হিসেব বলছে, চুক্তিটি দু’ভাগে ভাঙার ফলে স্ট্যাম্প ডিউটি বাবদ প্রায় ২৪ কোটি টাকা ক্ষতি হবে সরকারের। কারণ, এ ক্ষেত্রে ভেঙ্কটেশকে বাজার দরের পরিবর্তে লিজ ভাড়া অনুযায়ী স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হচ্ছে। চুক্তি পিছু যা মেরেকেটে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা।

কারও কারও মতে, ‘ভেঙ্কটেশ যা বলবে’ বলতে দেবব্রতবাবু এ দিন বুঝিয়েছেন যে, ভেঙ্কটেশ কর্তৃপক্ষ পুরনো চুক্তিটিকে যত ভাগে ইচ্ছে ভাঙতে পারেন। কারণ, তাঁদের সঙ্গে আগে থেকেই ৬০ বছরের চুক্তি হয়ে রয়েছে। পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের রূপা বাগচী, কংগ্রেসের মালা রায়-রা এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন যে চুক্তি পুরসভা থেকেই উধাও, তাতে কী লেখা ছিল দেবব্রতবাবু জানলেন কী করে?

বিপুল রাজস্ব ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরে গত শুক্রবার পুরভবনের বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ ওই চুক্তি বাতিলের দাবি তুলেছিলেন। তার দিন কয়েক আগে মেয়রের কাছে স্মারকলিপি দেন বাম কাউন্সিলররা। মেয়রের কুশপুতুল দাহ করেছিল কংগ্রেসও। এর পর মঙ্গলবার উত্তাল হলো পুরসভার অধিবেশন কক্ষ।

এ দিনের অধিবেশনে চুক্তিটি পাশ করার জন্য তোলার আগে আলোচনার সুযোগ দেন পুরসভার চেয়ারম্যান সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়ে মালাদেবী বলেন, “মূল চুক্তিটি উধাও। তা হলে কোন চুক্তির ভিত্তিতে সাপ্লিমেন্টারি চুক্তি করা হল, তা জানানো হোক।” ওই চুক্তি বাতিলের দাবি তোলেন তিনি। একই দাবি করে রূপাদেবী বলেন, “পুরসভা চরম আর্থিক সংকটের মুখে। ঋণের বোঝায় ব্যতিব্যস্ত সরকারও। সেই সময় তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ভেঙ্কটেশ সংস্থাকে বিশেষ সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার এই ঘটনা জনস্বার্থ বিরোধী। দুর্নীতিও।” বিজেপির বিজয় ওঝা বলেন, “বিশেষ কাউকে সুযোগ দেওয়ার আগে পুর প্রশাসনের ভাবা উচিত ছিল, সরকারের ক্ষতি হচ্ছে।” তাঁর বক্তব্য, জনগণের কাছে তাঁরা দায়বদ্ধ, কোনও চলচ্চিত্র নির্মাতার কাছে নন।

পুরসভা সূত্রের বক্তব্য, পিপিপি মডেলে প্রকল্পের দায়িত্ব মেয়রের। তাই তাঁর বিবৃতি দাবি করেন বিরোধীরা। কিন্তু তিনি কোনও জবাব না দিতেই হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। বলতে দেওয়া হয়নি মেয়র পারিষদ (বাজার) তারক সিংহকেও। পাল্টা গলা চড়ান শাসক দলের কাউন্সলিররাও। বিজেপির এক সদস্য ছাড়া বিরোধীরা সকলেই প্রতিবাদে কক্ষত্যাগ করেন। তার পরে মেয়র পারিষদ দেবব্রতবাবু বলেন, বিরোধীরা চুক্তি পড়েননি বলেই ‘ভুলভাল’ কথা বলেছেন। শাসক দলের সংখ্যাধিক্যের জেরেই বিনা বাধায় চুক্তিটি সভায় পাশ হয়ে যায়। দেবব্রতবাবু ২৪ কোটি টাকা রাজস্ব আয় কমে যাওয়া নিয়ে কিছু বলতে চাননি। ফলে পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট এই মেয়র পারিষদকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE