Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Dengue

ডেঙ্গি-চিকিৎসার দায় এড়ালেন অতীন

পুরসভার কাজ জনস্বাস্থ্য পরিষেবা, চিকিৎসা নয়। ডেঙ্গির প্রকোপ নিয়ে শহরে যখন আতঙ্ক বাড়ছে, তখন এমনটাই জানিয়ে দিল পুর প্রশাসন। সোমবার পুর ভবনে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে এক বৈঠকে বসে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৩০
Share: Save:

পুরসভার কাজ জনস্বাস্থ্য পরিষেবা, চিকিৎসা নয়। ডেঙ্গির প্রকোপ নিয়ে শহরে যখন আতঙ্ক বাড়ছে, তখন এমনটাই জানিয়ে দিল পুর প্রশাসন। সোমবার পুর ভবনে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে এক বৈঠকে বসে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর। তার পরেই মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ জানিয়ে দেন, ডেঙ্গির প্রকোপ কমাতে কলকাতা পুরসভা ডেঙ্গিবাহী মশা নিধনের কাজকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে। রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থাও করেছে। কিন্তু ওই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা করা পুরসভার কাজ নয়। এটা সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালেই হয়।

ডেঙ্গি মোকাবিলায় কলকাতা পুরসভার পরিকাঠামো কেমন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। সেখানে মশা মারার তেল, ধোঁয়া থেকে শুরু করে রোগ নির্ণয়ের সব যন্ত্রপাতি আছে কি? এমনকী, ‘প্যাক্ড সেল ভলিউম’ (পিসিভি) পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।

ওই পরীক্ষার প্রয়োজন হয় কেন?

পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের উপদেষ্টা তপন মুখোপাধ্যায় জানান, যে কোনও অসুখেই রক্তের ঘনত্ব বাড়লে বা কমলে পিসিভি-র পরিবর্তন হয়। তাঁর কথায়, ‘‘ডেঙ্গি জটিল হলে তবেই পিসিভি পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকলে সেই পরীক্ষা করা হয়। পুরসভা ক্লিনিকে তো হয় না, একমাত্র বড় সরকারি হাসপাতালেই ওই চিকিৎসা সম্ভব। পুরসভায় কেবল প্রাথমিক চিকিৎসার সঙ্গে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি দেখা হয়।’’ তিনি জানান, শতকরা তিন থেকে পাঁচ ভাগ ক্ষেত্রে ডেঙ্গি জটিল হতে পারে।

মেয়র পারিষদ অতীনবাবু জানিয়ে দেন, পুরসভার জনস্বাস্থ্য পরিষেবায় পিসিভি পরীক্ষার কোনও প্রয়োজন নেই। তাই তার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। যদি কোনও দিন পুর প্রশাসন হাসপাতালে রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা করে, তবেই সে বিষয়ে ভাবা হবে। একই সঙ্গে তিনি জানান, শহরে এখন ১৫টি আধুনিক ডেঙ্গি নির্ণয় কেন্দ্র করা হয়েছে। এ সব হয়েছে ১৫টি বরোয়। আমেরিকায় তৈরি ওই যন্ত্রের এলাইজা রিডার এবং এলাইজা ওয়াশারের মাধ্যমে ডেঙ্গি নির্ণয় পরীক্ষা বিনামূল্যে করা হচ্ছে। তাঁর দাবি, দেশের অন্য কোনও পুরসভায় এমন পরিকাঠামো নেই।

ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা কমানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী রত্না রায় মজুমদারের। তিনি বলেন, ‘‘যে হারে ডেঙ্গি বাড়ছে, তা আতঙ্কের কারণ। অথচ নবান্ন থেকে পুর প্রশাসন, সকলেই আসল তথ্য চেপে যাচ্ছে। এটা অপরাধ।’’ ডেঙ্গির মতো রোগ দমনে সব দলমত নির্বিশেষে একসঙ্গে কাজ করা দরকার বলে মনে করেন তিনি। এ ব্যাপারে অতীনবাবু বলেন, ‘‘ওঁরা ডেঙ্গি নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছেন। আসল তথ্য থাকলে পুরভবনে জানান। আমরা ব্যবস্থা নেব।’’

টালিগঞ্জ, বেহালা, যোধপুর পার্ক ও যাদবপুর-সহ দক্ষিণ কলকাতা ও শহরতলির একাধিক এলাকায় মশা দমনের অভিযান নিয়েও অভিযোগ
উঠেছে। ১০ নম্বর বরোর এক বাসিন্দার বক্তব্য, পুরসভা দাবি করছে, সব জায়গায় কাজ চলছে। কিন্তু ৯৩, ৯৫, ৯৭, ৯৮-সহ আরও কয়েকটি ওয়ার্ড এলাকায় নিয়মিত মশা মারার কাজ হচ্ছে না। এর ফলে ওই সব এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ছে। যদিও ওই অভিযোগ মানতে চাননি মেয়র পারিষদ। তাঁর কথায়, ‘‘এমন কোনও অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দা সরাসরি পুর ভবনের স্বাস্থ্য দফতরে খবর দিন। আমাকে জানান। পুরসভার মশাদমন বাহিনীকে ওই এলাকায় পাঠানো হবে।’’ তবে, পুর ভবনের নির্দেশ ওয়ার্ডে কতটা মানা হচ্ছে, তা নিয়ে ধন্দ রয়েই গিয়েছে। সেটা কাটাতেই রোজকার মশা দমনের কাজ কোথায় কী ভাবে হচ্ছে, কোথায়ই বা জল জমছে— তার সবিস্তার তথ্য স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানাতে বলা হয়েছে। কাউন্সিলরদের ওই কাজের সঙ্গে যুক্ত করতেই এই উদ্যোগ বলে পুরকর্তারা জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Municipal Corporation KMC Dengue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE