প্রতীকী ছবি।
ভরদুপুরে মত্ত অ্যাপ-ক্যাব চালকের হাত থেকে বাঁচতে চলন্ত গাড়ির দরজা খুলে মাকে নিয়ে ঝাঁপ দিলেন এক মহিলা। মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে ভবানীপুরের পদ্মপুকুর এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলা প্রয়াত এক প্রাক্তন ক্রিকেটকর্তার পুত্রবধূ। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ এ দিন সন্ধ্যাতেই ভবানীপুরের টাউনসেন্ড রোড থেকে ওই চালককে গ্রেফতার করেছে। ধৃতের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ (যৌন হেনস্থা) এবং ৫০৯ (অশালীন মন্তব্য ও আচরণ) ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার করার সময়েও ওই চালক অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় ছিলেন। তাঁর মদ্যপানের বিষয়ে নিশ্চিত হতে মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন দুপুর দুটো নাগাদ বছর চৌত্রিশের ওই মহিলা তাঁর মাকে নিয়ে দেশপ্রিয় পার্ক থেকে পার্ক স্ট্রিটের এক রেস্তরাঁয় যাওয়ার জন্য একটি অ্যাপ-ক্যাব বুক করেন। অভিযোগকারিণী জানিয়েছেন, তাঁর মোবাইলে বুকিং সংক্রান্ত যে তথ্য পাঠানো হয়, তাতে লেখা ছিল, চালকের নাম বীরেন্দ্র।
ওই মহিলার অভিযোগ, গাড়িতে ওঠার পর থেকেই তাঁরা লক্ষ করেন, হঠাৎ হঠাৎ জোরে ব্রেক কষছেন ওই চালক। এক সময়ে সামনের একটি গাড়িকে ধাক্কা দিতে গিয়েও বেঁচে যায় গাড়িটি। বারংবার এ রকম হওয়ার পরে ওই মহিলা খেয়াল করেন, চালকের চোখ ঘোলাটে এবং প্রায় ঝিমিয়ে পড়ছেন তিনি। তখন তিনিই চালককে জোরে গান চালাতে বলেন, যাতে তাঁর ঘুম কেটে যায়।
কিন্তু জবাবে বীরেন্দ্র নামে ওই চালক জানান, তিনি ঠিক আছেন। চিন্তার কিছু নেই। অভিযোগ, এর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ওই চালক পদ্মপুকুরের কাছে পৌঁছে আচমকা ওই মহিলাকে উদ্দেশ্য করে অশালীন কিছু কথা বলতে থাকেন। এক সময়ে তাঁর দিকে ওই চালক অশালীন ভঙ্গিতে হাত বাড়িয়ে দেন বলেও অভিযোগ।
এই ঘটনায় হতচকিত হয়ে মেয়েকে দরজা খুলে নেমে পড়তে বলেন তাঁর মা। রীতিমতো ঝুঁকি নিয়েই তাঁরা দু’জন চলন্ত গাড়ির দরজা খুলে প্রায় লাফিয়ে নেমে পড়েন। অভিযোগকারিণীর দাবি, ঘটনার কথা জানাতে উব্র নামে ওই অ্যাপ-ক্যাব সংস্থার গ্রাহক-পরিষেবায় ফোন করেছিলেন তিনি। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ তাঁর ফোনটি ‘হোল্ড’ করিয়ে রাখা হয়। পরে তিনি আবার ফোন করলে জানতে পারেন, ফোনে অভিযোগ জানানোর কোনও ব্যবস্থাই নেই। ওই সংস্থার অ্যাপে বা ওয়েবসাইটে গিয়ে অভিযোগ জানানো যায়।
এর পরেই ভবানীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই মহিলা। পরে তিনি বলেন, ‘‘আমি প্রায়ই এ ধরনের অ্যাপ-ক্যাব নিই। কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনও
হয়নি। আজকের ঘটনায় আমি রীতিমতো ভীত। ভরদুপুরে এমন হলে রাতে কী হতে পারে, সেটা ভেবেই আতঙ্ক হচ্ছে!’’
তাঁর আরও অভিযোগ, ঘটনার পরে তিনি ওই সংস্থার অ্যাপে গিয়ে সেই গাড়ির নম্বর আর খুঁজে পাননি।
তবে এ রকম অভিযোগ অবশ্য এটাই প্রথম নয়। এর আগেও অ্যাপ-ক্যাবের চালকদের বিরুদ্ধে মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি মা উড়ালপুল থেকে নামার সময়ে অ্যাপ-ক্যাব চালকের ঘুম পেয়ে যাওয়ায় সেই গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে। মাথায় চোট লেগে মৃত্যু হয় শিবপুরের এক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়ার। কিন্তু তার পরেও অ্যাপ-ক্যাব চালকদের মত্ত অবস্থায় কিংবা ঘুম চোখে গাড়ি চালানো বন্ধ হয়নি।
এ দিনের ঘটনা সম্পর্কে উব্র-এর মুখপাত্র জানিয়েছেন, চালকদের মদ বা মাদক সেবন তাঁরা কোনও মতেই সহ্য করেন না। অভিযোগ পেয়েই ওই চালককে তাঁদের পরিষেবা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy