ক্ষিপ্ত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করা যাবে, অথচ কারও গুরুতর চোট লাগার আশঙ্কা থাকবে না, এটা তেমনই হাতিয়ার। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে মারমুখী লোকজনকে ঠেকানো যাবে, তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠার সুযোগ থাকবে কম, এই অস্ত্রের সুবিধা এটাই। অস্ত্রটির নাম জলকামান। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার এই গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার কলকাতা পুলিশের কাছে রয়েছে মাত্র একটি। তবে নতুন বছরের গোড়ায় বাহিনী পাঁচটি নতুন জলকামান পাচ্ছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর।
কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানান, হরিয়ানার গুড়গাঁওতে এখন ওই পাঁচটি জলকামান তৈরি করছে একটি বেসরকারি সংস্থা। বর্তমানে চলছে যন্ত্রাংশ জোড়া দেওয়ার কাজ। জানুয়ারিতে লালবাজারের একটি দল সেখানে পরিদর্শনে যাবে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ফেব্রুয়ারিতে পাঁচটি জলকামান কলকাতায় আসবে। নবান্নের অনুমোদন পাওয়ার পর মোট ২ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা দিয়ে এই জলকামানগুলি কেনা হচ্ছে। এগুলি এসে গেলে একই দিনে একই সময়ে চার-পাঁচটি জায়গায় কোনও আইন অমান্য কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে তা সামাল দিতে সুবিধা হবে বলে মনে করছেন লালবাজারের কর্তারা।
চলতি বছরের মে মাসে বিজেপি-র লালবাজার অভিযান ঘিরে কলকাতার রাজপথে ধুন্ধুমার কাণ্ড হয়। ওই দিন ব্রেবোর্ন রোডে জলকামান থেকে তোড়ে জল ছোড়া হয়েছিল মিছিল করে আসা বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে। তার কয়েক দিন আগে বামেদের নবান্ন অভিযান ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল শহর। বাম সমর্থকদের ঠেকাতে পুলিশ বেধড়ক লাঠি চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। অথচ সে দিন বিদ্যাসাগর সেতুতে ওঠার মুখে কলকাতা পুলিশ জলকামান রাখলেও গণ্ডগোল যেখানে, সেখানে ওই অস্ত্র প্রয়োগ করা যায়নি। তখন জলকামানের অভাব প্রকট হয়ে দেখা দেয়। মূলত তার পরেই কলকাতা পুলিশ পর্যাপ্ত সংখ্যক জলকামান কিনতে তৎপর হয়।
তা ছাড়া, সংযোজিত এলাকাগুলি যুক্ত হওয়ার পর কলকাতা পুলিশের এলাকা যে রকম বহরে বেড়েছে, তাতে বাহিনীর কাছে একটি মাত্র জলকামান থাকা এক রকম হাস্যকর বলে মেনে নিচ্ছেন শীর্ষ পুলিশকর্তাদের একাংশ।
তবে নতুন পাঁচটি জলকামান চলতি বছরের শেষেই কলকাতা পুলিশের হাতে আসার কথা ছিল। সে ক্ষেত্রে লালবাজারের হাতে পেতে মাস দুয়েক দেরি হবে।
লালবাজার সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশের হাতে দু’টি জলকামান ছিল। একটি জলকামানের কার্যকারিতা একেবারেই কমে আসায় সেটি বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এখন এক মাত্র জলকামানটি হেস্টিংস-এর পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে রাখা থাকে। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘পুরনো একটি আর নতুন পাঁচটি— মোট ছ’টি জলকামান আমাদের হাতে এলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে বাহিনী বাড়তি আত্মবিশ্বাস পাবে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বড় ধরনের আইন অমান্য বা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে জনতাকে আটকানোর নিরিখে যে সব জায়গা গুরুত্বপূর্ণ, তার প্রতিটিতে জলকামান রাখা যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy