শুরু হয়েছে চিকিৎসা। শুক্রবার, এসএসকেএমে। —নিজস্ব চিত্র।
হাসপাতালের বিছানাতেই কখনও আঁকার খাতা, কখনও বা রং পেনসিলের বায়না জুড়ছে সে! তাকে সামলাতেই অস্থির গোটা ওয়ার্ড! কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা আগেও ওই খুদের জীবন নিয়ে সংশয়ে ছিলেন মা।
বছর বারোর ছেলেটি স্প্যাস্টিক প্যারালাইসিসে আক্রান্ত! চিকিৎসা যথেষ্ট ব্যয়সাপেক্ষ। কোথায় যাবেন, কী করবেন— ভেবে পাচ্ছিলেন না মা-বাবা। তাই বুধবার আমোদপুর থেকে বোলপুর যাওয়ার পথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়ের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। তার পরেই বদলে যায় সব কিছু।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বীরভূম জেলা প্রশাসন বোলপুরের বাসিন্দা মৃণাল মাডিকে পাঠায় এসএসকেএমে়। বৃহস্পতিবার দুপুর একটা নাগাদ তাকে ভর্তি করা হয় নিউরোলজি বিভাগে। চিকিৎসক গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা শুরু হয়েছে।
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, স্প্যাস্টিক প্যারালাইসিস পেশির সমস্যা। স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতির জেরেই এই সমস্যা তৈরি হয়। মেরুদণ্ডে আঘাতবা মস্তিষ্কের ট্রমা থেকে স্নায়ুতন্ত্রে ওই ধরনের ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু মৃণালের কেন এই সমস্যা হয়েছে, তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। তার জন্য বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা জরুরি। সেগুলি দ্রুত করা হচ্ছে। রিপোর্ট হাতে পেলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে বলে আশা করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তবে, প্রাথমিক পর্বের চিকিৎসা শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রয়োজনীয় ওষুধও দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিখরচায় হলেও কেবিনে রেখে চিকিৎসা চালাতে গেলে রোগীর পরিজনদের ভাড়া দিতে হয়। কিন্তু মৃণাল এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। ১২ বছরের মৃণালের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি হবে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা। তাই তার মাকেও হাসপাতালে থাকতে হবে। কেবিনের ব্যবস্থা হলেও ভাড়া দেওয়ার সামর্থ্য নেই ওই পরিবারের। এসএসকেএমের অধিকর্তা অজয়কুমার রায় তাই স্বাস্থ্য ভবনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ভাড়া মকুবের ব্যবস্থা হয়।
হাসপাতালের এক কর্তা জানান, নিয়মিত মৃণালের রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হচ্ছে। বীরভূমের ডিএম-ও ফোনে যোগাযোগ রাখছেন।
প্রশ্ন উঠেছে, মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কোনও মতে না হয় নিজের ছেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন মৃণালের মা। কিন্তু যাঁরা নিত্য বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে প্রত্যাখাত হচ্ছেন, তাঁদের কী হবে? স্বাস্থ্যকর্তারা স্বীকার করে নিয়েছেন, রাজ্যে নিউরোলজিস্টের সংখ্যা কম। তাই অধিকাংশ জেলা হাসপাতালেই স্নায়ুরোগের চিকিৎসা সে ভাবে হয় না। কলকাতার হাসপাতাল থেকেও জায়গার অভাবে রোগী ফেরত পাঠাতে হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy