জলপথ পরিবহণে নিরাপত্তার স্বার্থে জেটি সংস্কারে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। কিন্তু লঞ্চগুলির নিরাপত্তা খতিয়ে দেখাই যে বিভাগের প্রধান কাজ, সেখানেই রয়েছেন হাতে গোনা কয়েক জন কর্মী। ১৬১ জনের জায়গায় রয়েছেন মাত্র ১৭ জন। তিন জন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারের জায়গায় আছেন মাত্র এক জন।
কর্মীর সংখ্যা অপ্রতুল বলে বহু লঞ্চকে জলে নামাতে পারছেন না কর্তারা। যাত্রী-পরিষেবাও বিঘ্নিত হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন তাঁরা। তবে দফতরের কর্তারা আশ্বাস দিয়েছেন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে দ্রুত কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, গোটা রাজ্যে নদী পারাপারের জন্য প্রায় ৬৯৬টি ঘাট রয়েছে। তার মধ্যে ৩৭৭টি লোহার জেটিতে লঞ্চের মাধ্যমে নদী পারাপার করেন সাধারণ যাত্রীরা। ওই সমস্ত জেটির মধ্যে ৬৮টিতে নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে। সিসি ক্যামেরা থেকে পৃথক দরজা, রেলিং থেকে শুরু করে হাইমাস্ট আলো— অনেক কিছুই নতুন বসছে ওই জেটিগুলিতে। প্রতিদিন কয়েক লক্ষ মানুষ যাতায়াত করেন এই সমস্ত জেটি দিয়ে। তাঁদের অন্যতম ভরসা লঞ্চ। কিন্তু অধিকাংশ লঞ্চই জলে নামাতে পারছে না পরিবহণ দফতর।
কারণ হিসেবে এক কর্তা জানান, নিয়ম অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে সমস্ত লঞ্চ ও স্পিড বোটের ফিটনেস পরীক্ষা করেন পরিবহণ দফতরের অধীনে থাকা ‘ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট ওয়েজ ডিরেক্টরেট’-এর কর্মীরা। সেখানে মূলত তিন জন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারের থাকার কথা। তাঁদের তত্ত্বাবধানে ওই বিভাগের কর্মীরা সমস্ত লঞ্চের খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখেন। লঞ্চের লোহার কোনও অংশে মরচে পড়লে দ্রুত মেরামতিও করে দেওয়ার দায়িত্ব তাঁদেরই। মোটরের কর্মক্ষমতার পাশাপাশি খতিয়ে দেখা হয় গোটা লঞ্চের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এর পরে ওই বিভাগ শংসাপত্র দেয়। সেই
শংসাপত্র না পাওয়া পর্যন্ত কোনও লঞ্চকে জলে নামতে দেওয়ার অনুমতি দেয় না পরিবহণ দফতর। ফলে লোকাভাবে শংসাপত্র দিতে দেরি হওয়ায় যাত্রী-পরিষেবা বিঘ্নিত হয়।
নিরাপত্তার দিকটিও যে কোনও সময়ে অবহেলিত হতে পারে বলে আশঙ্কা দফতরের কর্তাদের। যেমন, বেলতলা পিভিডি-র টেকনিক্যাল বিভাগের কর্মীরা সমস্ত গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করে শংসাপত্র দেন। সেখানে ২১টি পদ থাকলেও রয়েছেন মাত্র ন’জন। ফলে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে নিরাপত্তায় গাফিলতি থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ঠিক সে ভাবেই জলযানের ক্ষেত্রেও একই রকম ঝুঁকি থেকে যায়। ফলে নদীর পাড়ে জেটির নিরাপত্তা বাড়ানোটা যেমন জরুরি, নদীবক্ষে যে জলযান চলবে, তার নিরাপত্তার বিষয়টিও একই রকম গুরুত্বপূর্ণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy