আহত প্রদীপ দাস। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
মধ্যমগ্রামে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা প্রশাসনিক বৈঠকে বিশেষত ব্যারাকপুরের আইনশৃঙ্খলা ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবারের সেই বৈঠকে পুলিশকে নজরদারি বাড়াতেও বলেন। তিন দিনের মাথায়, রবিবার সেই ব্যারাকপুর কমিশনারেটেই পানিহাটিতে দিনেদুপুরে মদ্যপানের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আক্রান্ত হলেন রাজ্যস্তরের ভলিবল খেলোয়াড় অসিত দাস ও তাঁর কাকা প্রদীপ দাস। প্রদীপবাবুর গলায় এবং কোমরে ছুরি চালিয়ে দিল দুষ্কৃতীরা। এবং এই ঘটনাই ফের প্রশ্ন তুলল, ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে ওই এলাকার আইনশৃঙ্খলা?
এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে নারাজ পুলিশ। প্রশাসনের কাজে অব্যবস্থা দেখছে না শাসক দল তৃণমূলও। তবে বিষয়টি ছাড়তে নারাজ বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, শাসকদলের মদতেই ব্যারাকপুরে দুষ্কৃতীদের এই রমরমা। একই অভিযোগ স্থানীয়দেরও।
কী হয়েছিল এ দিন?
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পানিহাটির এম এন চ্যাটার্জি লেনের বাসিন্দা অসিতবাবুর বাড়ির কাছেই রামকৃষ্ণ স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠ। এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা থেকে সেখানে মদের আসর বসায় দুষ্কৃতীরা। রবিবার ছুটির দিন এবং জামাইষষ্ঠী হওয়ায় মাঠের পাশের রাস্তা ধরে লোকচলাচল বেশিই ছিল। সেখানে প্রকাশ্যে মদ্যপান করতে দেখে প্রতিবাদ করেন অসিতবাবু। দুষ্কৃতীরা তখনই তাঁকে মারধর করে বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে প্রদীপবাবু এসেও প্রতিবাদ করেন। আচমকা এক জন ছুরি বার করে তাঁর গলায় ও কোমরে আঘাত করে। তা দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে এলে পালায় দুষ্কৃতীরা। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে বাড়ি ফিরে যান প্রদীপবাবু। গলায় আঘাত থাকায় এ দিন তিনি কথা বলতে পারেননি। তবে অসিতবাবু বলেন, ‘‘কাকা আগেও ওই যুবকদের কাজকর্মের প্রতিবাদ করেছেন। তখন কাকার উপরে চড়াও হলেও ছুরি মারার সাহস পায়নি ওরা। এখন বুঝতে পারছি, কোনও নিরাপত্তাই নেই।’’
এই ঘটনার পরে কমিশনারেটে স্মারকলিপি দিয়ে আসেন উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী। তাঁদের অভিযোগ, এলাকার উঠতি মস্তানদের দল সকাল-সন্ধ্যায় মাঠে বসে নিয়মিত নেশা করে। সঙ্গে চলে মহিলাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ। আরও অভিযোগ, শাসক দলের কিছু নেতার মদতেই এলাকায় দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব বাড়ছে। প্রশাসন তবু নির্বিকার। স্থানীয় বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা দাস বলেন, ‘‘প্রশাসনের চোখের সামনেই তো দিনের পর দিন এই কাণ্ড চলছে। এই মাঠে ছেলে-মেয়েরা খেলে। মহিলারাও যান। সেখানে বসেই অবাধে নেশা করে একদল যুবক। প্রতিবাদ করলে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। আমরা কি আতঙ্ক নিয়েই দিন কাটাব?’’
এ দিনের ঘটনার পরে পুলিশে এফআইআর করা হলেও এখন কেউ গ্রেফতার হয়নি। এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি ব্যারাকপুরের পুলিশকর্তারা। তবে শাসক দলের মদতে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের অভিযোগের প্রসঙ্গে পানিহাটির বিধায়ক ও তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক নির্মল ঘোষ বলেন, ‘‘ এটা ওই এলাকার দু’দল যুবকের মধ্যে গোলমালের ঘটনা। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।’’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য অবশ্য শাসকের দিকে আঙুল তুলেছেন বিরোধী দলের নেতারাও। সিপিএম নেতা তথা পানিহাটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান চারণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তৃণমূল এখানে নৈরাজ্য চালাচ্ছে। ক্ষমতায় বসে দুষ্কৃতী ও এলাকায় অসামাজিক কাজে মদত দিচ্ছে শাসক দল। আর তাদের হাতের পুতুল হয়ে পুলিশ।’’ একই সুরে কংগ্রেস নেতা সম্রাট তপাদারও বলেন, ‘‘একের পর এক খুন ও বিভিন্ন অসামাজিক কাজ হয়ে চললেও প্রশাসন নির্বিকার। দুষ্কৃতীরাও শাসক দলের মদতপুষ্ট। প্রশাসনও চলছে শাসক দলের কথাতেই।’’
যদিও সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে নির্মলবাবু বলেন, ‘‘কোথাও অব্যবস্থা নেই, প্রশাসন ভালই কাজ করছে।’’ আর এ নিয়ে কিছুই বলতে রাজি হয়নি ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy