বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের জেরে এই প্রথম বার সম্পূর্ণ অন্ধকারে ডুব দিল মেট্রোর সুড়ঙ্গ। ২০১২ সালে ‘ইস্টার্ন গ্রিড’ ট্রিপ করায় রাজ্য জুড়ে যখন অন্ধকার নেমেছিল, তখনও সুড়ঙ্গে ট্রেন চলেছিল। কিন্তু এ বার বিদ্যুৎ চলে যেতেই অন্ধকারে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল ট্রেন। প্রায় মিনিট ১৫ ধরে আটকে থাকলেন যাত্রীরা।
কেন এমন হল?
মেট্রোর কর্তারা জানিয়েছেন, পাতালরেলের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করে সিইএসসি। নোয়াপাড়া, শ্যামবাজার, যতীন দাস পার্ক ও সেন্ট্রাল স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় চারটি সাব-স্টেশনের সাহায্যে মেট্রোয় পাঠানো হয়। ২০১২ সালে রাজ্য জুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হলেও ওই চারটি সাব-স্টেশনের দু’টি সচল ছিল। ফলে মেট্রো মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে যায়নি। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৫৩ মিনিট থেকে ওই চারটি সাব-স্টেশনই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। তাতেই গোটা মেট্রোর যাত্রাপথ অন্ধকারে ডুব দেয়।
বিদ্যুতের এই বিপর্যয় ঘটে সকালের ব্যস্ত সময়ে। ফলে মেট্রোগুলিতে ভিড় ছিল ঠাসা। আচমকা মাঝপথে ট্রেন আটকে যাওয়ায় আতঙ্কের পাশাপাশি দুর্ভোগেও পড়েন যাত্রীরা। ১৫ মিনিট পরে বিদ্যুৎ ফিরে এলেও পরের কয়েকটি ট্রেনে ভিড়ের চাপে ওঠানামা করতে কালঘাম ছুটে যায় যাত্রীদের। ওই সময়ে অনেক যাত্রী আবার স্টেশনে অন্ধকার দেখে বাইরে বেরিয়ে আসেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এমনিতেই ট্রেনের আওয়াজে গমগম করে মেট্রোর সুড়ঙ্গ। কিন্তু আচমকা তৃতীয় লাইনের হাইটেনশন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দাঁড়িয়ে পড়ে সমস্ত ট্রেন। ফলে সুড়ঙ্গ একেবারে নিঃস্তব্ধ হয়ে যায়। তার সঙ্গে অন্ধকার। দুইয়ে মিলে ট্রেনে আটকে পড়া যাত্রীরা প্রবল আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কী করবেন, ভেবে উঠতে পারছিলেন না তাঁরা। কেউ কেউ ভয়ে কেঁদে ফেলেন।
কিন্তু মন্দের ভাল একটাই। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পরেও চালকেরা ট্রেনের ব্রেক কষেননি। আস্তে আস্তে গড়িয়ে প্রায় স্টেশন পর্যন্ত ট্রেনগুলিকে নিয়ে আসেন তাঁরা। তার পরে নিউমেটিক ব্রেক (এই ব্রেক বিদ্যুৎ নয়, বাতাসে চলে) কষে ট্রেন দাঁড় করিয়ে আপৎকালীন দরজা খুলে দেন যাত্রীদের নামার জন্য। মিনিট ১৫ পরে বিদ্যুৎ ফিরে আসে। সচল হয় মেট্রো।
আরও পড়ুন: বজবজে বিভ্রাট, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে ভুগল শহর
মেট্রো সূত্রের খবর, বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় এ দিন কয়েকটি ট্রেন দাঁড়িয়ে যায় স্টেশনে। বাকি কয়েকটি আটকে পড়ে সুড়ঙ্গে। মেট্রোর যাত্রাপথের কিছুটা অংশ ঢালু। ঢালের উপরে থাকা ট্রেনগুলিকে সহজেই সামনের স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। সমস্যা হয় উঁচুতে ওঠার অংশে। বেলগাছিয়া থেকে শ্যামবাজারের কিছুটা অংশ উঁচুতে উঠে গিয়েছে। সেখানেই তৈরি হয় আতঙ্ক। তবু চালকের তৎপরতায় আটকে পড়া ট্রেনটিও গড়াতে গড়াতে স্টেশনের কাছে চলে আসে। দু’টি কামরা স্টেশনে ঢুকে পড়ে। বাকিগুলি ছিল সুড়ঙ্গে। পরে চালকের কেবিনে থাকা আপৎকালীন দরজা দিয়ে যাত্রীদের বার করে দেন তিনি। মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মেট্রোয় এই ভাবে কোনও দিন বিদ্যুৎ যায়নি। এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটল। তবে যাত্রীদের চটজলদি বার করা গিয়েছে।’’
বিদ্যুৎ চলে গেলে যাতে প্ল্যাটফর্ম বা ট্রেনের কামরা একেবারে অন্ধকার না হয়, তার জন্য ব্যাটারির আলোর ব্যবস্থা রয়েছে মেট্রোয়। মেট্রো সূত্রের খবর, বাতানুকূল রেকের প্রতিটি কামরায় রয়েছে ৩৬ ওয়াটের একটি, ১৮ ওয়াটের একটি ও ১০ ওয়াটের ১৬টি আপৎকালীন আলো। সাধারণ ট্রেনের কামরায় রয়েছে আট ওয়াটের আটটি করে আলো। অভিযোগ, এ দিন কিছু কিছু ট্রেনের কামরায় সেগুলি জ্বলেনি। বিশেষ করে সাধারন ট্রেনগুলিতে। জ্বলেনি অনেক প্ল্যাটফর্মের আপৎকালীন আলোও। যাত্রীদের ওই অভিযোগের উত্তরে ইন্দ্রাণীদেবী জানান, দু’একটি কামরায় আলো জ্বলতে না পারে। তবে বেশির ভাগ জায়গাতেই আপৎকালীন আলো জ্বলেছে। আর আলো জ্বলেছে বলেই অত ভিড়েও কোনও বিশৃঙ্খলা হয়নি।
বছর দুয়েক আগে মেট্রোর নিজস্ব যান্ত্রিক ত্রুটির জেরে দমদমমুখী একটি আপ ট্রেন ময়দান থেকে পার্ক স্ট্রিটের মাঝে ৩০ মিনিটেরও বেশি আটকে গিয়েছিল। সেই সময়ে দমবন্ধ পরিবেশ থেকে বাঁচতে যাত্রীরা বাতানুকূল ট্রেনটির অনেকগুলি কামরার জানলার কাচও ভেঙে ফেলেছিলেন। সব মিলিয়ে চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়েছিলেন তাঁরা। সে দিনের ঘটনায় ভিলেন ছিল মেট্রোর যান্ত্রিক ত্রুটি। এ দিন ভিলেন বিদ্যুৎ। কিন্তু যে যা-ই বলুন, দুই ঘটনাতেই আতঙ্ক সেই একই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy