ভাঙচুর হওয়া সেই গাড়ি। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
রাত তিনটে। গড়িয়াহাট সংলগ্ন ডোভার লেনের কেন্দ্রীয় সরকারি আবাসন চত্বর। পিছনের গেটের সামনে এসে থামল একটি মোটরবাইক। নেমে এল দশাসই চেহারার এক যুবক। নিরাপত্তারক্ষীকে ধমকে ঘুম থেকে ডেকে তুলল সে। হুমকির সুরে বলল গেট খুলে দিতে। চেনা মুখ হওয়ায় রক্ষী বিশেষ আপত্তি করেননি। গেট খুলে দিতেই ওই যুবক ভিতরে ঢুকে পড়ে। এর প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরে, ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ সে হাজির হয় আবাসনের সামনের গেটে। সেখানকার প্রৌঢ় রক্ষীকে এক জনের নাম করে তাঁর ফ্ল্যাটটি দেখিয়ে দিতে বলে। রক্ষী রাজি না হওয়ায় তাঁকে গুলি করে খুনের হুমকি দেয় ওই যুবক। তার পরে ইট তুলে নিয়ে ছুটে যায় একটি গাড়ির দিকে। চুরমার করে দেয় উইন্ডস্ক্রিন। এই ঘটনা যখন ঘটছে, তখন আবাসনের গেটের বাইরে মোটরবাইক নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে ওই যুবকের পাঁচ-ছ’জন শাগরেদ।
মঙ্গলবার ভোরের এই ঘটনায় প্রবল আতঙ্ক ছড়িয়েছে ওই আবাসনে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, অয়ন চৌধুরী ওরফে তাতান নামে ওই যুবক এর আগেও একাধিক বার ওই আবাসন চত্বরে ঢুকে নানা দুষ্কর্ম করে গিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে লোকজনকে হুমকিও দিয়েছে সে। কিন্তু পুলিশে অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি। পুলিশ অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে, এ দিনের ঘটনার পরে অভিযুক্ত যুবক বেপাত্তা। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে। পুলিশের এক কর্তার দাবি, এ দিন ভোরে ওই হামলার খবর পেয়েই কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান।
কী বলছেন অভিযোগকারীরা?
গড়িয়াহাট এলাকার ১৬/৭ নম্বর ডোভার লেনের ওই আবাসনে থাকেন কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীরা। অভিযোগকারী রত্না ধর ও সুবীর ধরের ফ্ল্যাটটি আবাসনের সি ২-তে।
অভিযোগ, মঙ্গলবার ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ অয়ন এসে সামনের গেটের রক্ষী কমল পাসোয়ানকে হুমকি দিয়ে সুবীরবাবুর ফ্ল্যাট কোনটি জানতে চায়। কিন্তু কমলবাবু বলেননি। তখন তাঁকে গুলি করে মারার হুমকি দেয় অয়ন। তার পরে ইট দিয়ে সুবীরবাবুর গাড়ির কাচ ভেঙে দেয়। দিনের আলো তখনও ভাল করে ফোটেনি। ফলে আবাসনের কারও ঘুমও ভাঙেনি। এর পরে অভিযুক্ত যুবক মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে যায়। অভিযোগ, এলাকা ছাড়ার আগে সে কমলবাবুর ছবি তুলে নিয়েছে। বলে গিয়েছে, ‘‘তোকে গুলি করে মেরে দিয়ে যাব।’’
নিরাপত্তারক্ষীর মুখে সব শোনার পরেই সুবীরবাবু গড়িয়াহাট থানায় খবর দেন। ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত ডিউটি অফিসার পৌঁছলে লিখিত অভিযোগ করেন ওই দম্পতি।
পরে সুবীরবাবু জানান, অভিযুক্ত অয়ন ওই আবাসনেই থাকত। তার বাবা আশিস চৌধুরী আয়কর দফতরের অফিসার ছিলেন। বছর দশেক আগে তিনি মারা গেলেও বহু দিন পর্যন্ত ছেলেকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটেই ছিলেন তাঁর স্ত্রী। অভিযোগ, ওই সময়ে অয়ন প্রায়ই স্থানীয় যুবকদের নিয়ে আবাসনে ঢুকে মদ খেয়ে গোলমাল করত। আবাসনের লিফ্টম্যান থেকে শুরু করে অনেককে মারধরও করেছে সে। তার প্রতিবাদ করেছিলেন সুবীরবাবু-সহ আবাসনের আরও কিছু বাসিন্দা। তাতেই সুবীরবাবুর উপরে ক্ষোভ জন্মায় ওই যুবকের।
কয়েক মাস আগে সরকারি নির্দেশে পুলিশ গিয়ে অয়ন ও তার মাকে ফ্ল্যাট থেকে উচ্ছেদ করে। তাতেই গোলমাল আরও বাড়ে। আবাসিকদের ধারণা, পুলিশ দিয়ে উচ্ছেদ হওয়ার রাগেই এ দিনের হামলা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy