Advertisement
০৫ মে ২০২৪
পুরসভাকে চিঠি

ক্যাগের প্রশ্ন উস্কে দিল কম্প্যাক্টরের ‘অনিয়ম’

জঞ্জাল প্রক্রিয়াকরণের কম্প্যাক্টর যন্ত্র নিয়ে অডিটে প্রশ্ন আসতেই ফাঁপরে পড়ে গেল কলকাতা পুরসভা। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে করে কম্প্যাক্টর স্টেশন গড়ার পরে জঞ্জাল সাফাই পদ্ধতির চেহারাটা কতটা বদলেছে, তা জানতে চেয়ে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে পুর-প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছিল ‘কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল’ (সিএজি বা ক্যাগ)।

কম্প্যাক্টর। — ফাইল চিত্র

কম্প্যাক্টর। — ফাইল চিত্র

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৬ ০১:১৫
Share: Save:

জঞ্জাল প্রক্রিয়াকরণের কম্প্যাক্টর যন্ত্র নিয়ে অডিটে প্রশ্ন আসতেই ফাঁপরে পড়ে গেল কলকাতা পুরসভা। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে করে কম্প্যাক্টর স্টেশন গড়ার পরে জঞ্জাল সাফাই পদ্ধতির চেহারাটা কতটা বদলেছে, তা জানতে চেয়ে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে পুর-প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছিল ‘কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল’ (সিএজি বা ক্যাগ)। জবাব না পেয়ে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে ফের চিঠি দিয়ে ওই তথ্য চেয়েছে তারা। তার পরেও পেরিয়ে গিয়েছে পনেরো দিন। উত্তর যায়নি এখনও।

চিঠির উত্তর দিতে পুরসভার এত গড়িমসি কেন? পুর-জঞ্জাল দফতরের ব্যাখ্যা, অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় জবাব দেওয়া হয়নি। শীঘ্রই দেওয়া হবে।

পুরসভার অন্দরে অবশ্য উঠে আসছে অন্য কথা। একাধিক অফিসারের কথায়, ক্যাগের রেসিডেন্ট অডিট শাখা তাদের পাঠানো চিঠিতে যে আকারে তথ্য চেয়েছে, তা দিতে হলে পুরসভা অস্বস্তিতে পড়বে।

পুর-অফিসারেরা বলছেন, চিঠিতে ক্যাগ জানতে চেয়েছে— কোন বরোর কোন ওয়ার্ডের কোথায়, কতগুলো যন্ত্র বসেছে? প্রতিটি কম্প্যাক্টর স্টেশনের রক্ষণাবেক্ষণের মাসিক খরচ কত? কবে তা বসানো হয়েছে? সেখানে কত পরিমাণ জঞ্জাল হতো? যন্ত্র বসার পরে কত জঞ্জাল সেখানে জমা পড়ছে? স্টেশন হওয়ার পরে যতগুলি ভ্যাট তুলে দেওয়ার কথা, ততগুলি তোলা হয়েছে কি না? জঞ্জাল বহনের গাড়ির সংখ্যাই বা কত কমেছে?

ওই অফিসারদের কথায়— যে সব বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে, তা দিতে গেলে স্পষ্ট হয়ে যাবে কয়েকটি ক্ষেত্রে কম্প্যাক্টর যন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় জঞ্জালের জোগান কম। তা সত্ত্বেও যন্ত্র বসেছে। এর পাশাপাশি যতগুলি ভ্যাট তুলে দেওয়া দরকার, তা এখনও তোলা হয়নি। যেমন, খাদ্য ভবন যাওয়ার পথে মির্জা গালিব স্ট্রিটে একটি কম্পাক্টর স্টেশন হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু জুন মাসে ক্যাগের চিঠি পাঠানোর পরেও তা অব্যবহৃতই থেকে গিয়েছিল। আগের মতোই আবর্জনা ফেলা হচ্ছিল খোলা ভ্যাটে। ওই অফিসারদের দাবি, অতি সম্প্রতি ক্যাগের চাপেই যন্ত্রটি চালু হয়েছে। অথচ মজার কথা, ওই কম্প্যাক্টর স্টেশনের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মাসিক খরচ বহাল ছিল আগে থেকেই।

এক-একটি কম্প্যাক্টর স্টেশনের জন্য খরচ কত? পুরসভার জঞ্জাল দফতর সূত্রেরই খবর, একটি স্টেশনে ৩-৪টি যন্ত্র থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তিনটি থাকে। যার মোট দাম প্রায় ৭০-৮০ লক্ষ টাকা। স্টেশনের রক্ষণাবেক্ষণে মাসে পুরসভা দেয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। রক্ষণাবেক্ষণ করে কারা? দফতরের এক আধিকারিক জানান, দরপত্র ডেকে কাজের বরাত দেওয়া হয়। তিনি জানান, স্টেশনের কংক্রিট কাঠামো গড়া, যন্ত্র বসানোর খরচ ও তা চালানোর বিদ্যুৎ-বিল দেওয়া এবং কম্প্যাক্টরে জঞ্জাল পেষার পরে অবশিষ্ট বহনকারী গাড়ি (হুকলোডার) ও তার চালক সরবরাহ এবং তেলের খরচ বহন— অর্থাৎ বাকি সব দায়িত্বই পুরসভার। তা হলে রক্ষণাবেক্ষণ সংস্থা কী করে? স্টেশনের নিরাপত্তারক্ষী, হুক-লোডার চালকের বেতন এবং কম্প্যাক্টর যন্ত্র সারানোর এক জন মেকানিক রাখার খরচ দেওয়া তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আর কিছু নয়। এমন অভিযোগও রয়েছে, একই ব্যক্তি বা সংস্থা একসঙ্গে অনেকগুলি স্টেশনের বরাত পেয়েছেন। এবং সেই সংস্থা এক জন মেকানিককে দিয়েই কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। তাতে তাদের মুনাফা যেমন বাড়ছে, তেমন পুরসভার ভাঁড়ারেও টান পড়ছে। জঞ্জাল দফতরের মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার অবশ্য সব অভিযোগই অস্বীকার করেন।

তবে আধুনিক ওই পদ্ধতি আসার পরে কতগুলো ভ্যাট বন্ধ করা হয়েছে, তার প্রকৃত সংখ্যা এখনও তৈরি হয়নি বলেই পাঠানো যায়নি বলে দাবি পুর-অফিসারদের। পুরসভা সূত্রে আরও গিয়েছে, ক্যাগের আরও জানতে চেয়েছে, কম্প্যাক্টর যন্ত্র বসানোর আগে শহরের জঞ্জাল ধাপায় ফেলতে লরি-বাবদ কত খরচ হতো এবং এখন তার পরিমাণই বা কত? এ সব তথ্য দিতে গিয়ে পুরসভার অস্বস্তি বাড়তে পারে বলেই মনে করছেন কেউ কেউ।

যদিও মেয়র পারিষদ জানান, এ নিয়ে তিনি মোটেই বিচলিত নন। দেবব্রতবাবুর কথায়, ‘‘আগে শহরে সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিকটন জঞ্জাল হতো। এখন তা প্রায় এক হাজার টন কমেছে। শহরে এখন ৫৬টি কম্প্যাক্টর স্টেশন রয়েছে। খুব শীঘ্রই আরও গোটা তিরিশেক বসবে। তাতে যন্ত্রে পিষে জঞ্জালের পরিমাণও কমবে।’’ তিনি জানান, অনেক জায়গায় এখনও পুরনো পদ্ধতিতে লরিতে জঞ্জাল বহন চলছে। তাই লরির খরচ এখনও হচ্ছে। তবে তার পরিমাণ কমছে বলেই দাবি মেয়র পারিষদের। তা হলে ক্যাগের জবাব দিতে এত দেরি কেন? দেবব্রতবাবুর উত্তর, ‘‘না দেওয়ার কোনও কারণ নেই। খুব শীঘ্রই পাঠানো হবে।’’

তবে কম্প্যাক্টর স্টেশনের জন্য প্রয়োজনীয় জঞ্জাল না মেলায় আগে দু’টি স্টেশন বন্ধ করেছিল পুর-প্রশাসন। পরে অবশ্য রাজনৈতিক চাপেই তা আবার খুলতে হয়েছে। পুরসভার একাধিক আমলার কথায়, এখনও কয়েকটি স্টেশন সেই অবস্থায় রয়েছে। ক্যাগের চাওয়া প্রশ্নের জবাব দিতে গেলে তা ফাঁস হয়ে যাবে। সে কারণেই গড়িমসি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE