Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

জওয়ান খুনে হয়নি কিনারা, প্রশ্নে বন্দরের নিরাপত্তা

কলকাতা বন্দর এবং সংলগ্ন এলাকায় পাক গুপ্তচরদের কার্যকলাপ ফাঁস হওয়ার পরে প্রশ্ন উঠেছিল সেখানকার নিরাপত্তা নিয়ে। এ বার সেই প্রশ্ন আরও জোরদার হল বন্দরের ভিতরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিওরিটি ফোর্সের (সিআইএসএফ) এক জওয়ানের খুন এবং চার মাস

নিহত জওয়ান বিষ্ণু দাস। — নিজস্ব চিত্র

নিহত জওয়ান বিষ্ণু দাস। — নিজস্ব চিত্র

শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৬ ০১:৫৪
Share: Save:

কলকাতা বন্দর এবং সংলগ্ন এলাকায় পাক গুপ্তচরদের কার্যকলাপ ফাঁস হওয়ার পরে প্রশ্ন উঠেছিল সেখানকার নিরাপত্তা নিয়ে। এ বার সেই প্রশ্ন আরও জোরদার হল বন্দরের ভিতরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিওরিটি ফোর্সের (সিআইএসএফ) এক জওয়ানের খুন এবং চার মাস

পরেও এই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার না হওয়ায়।

পুলিশের অভিযোগ, বন্দরের ভিতরেই খুন করা হয় ওই জওয়ানকে। কিন্তু সেখানে সিসিটিভির নজরদারি না থাকায় কারা ওই খুনের সঙ্গে জড়িত তা নিয়ে ঘটনার চার মাস পরেও অন্ধকারে পুলিশ। প্রশ্ন, নিরাপত্তার গাফিলতির জেরেই কী খুন হতে করা হয়েছে ওই জওয়ানকে? যদিও বন্দর সূত্রে খবর, কর্তৃপক্ষের সচিত্র অনুমতি ছাড়া ওই এলাকায় বহিরাগত কেউ ঢুকতে পারে না। নিরাপত্তা কঠোর করতে ওই এলাকায় সিসিটিভি বসানোর কাজ চলছে।

কী হয়েছিল বন্দরে?

পুলিশ সূত্রে খবর, নিহত জওয়ানের নাম বিষ্ণু দাস। সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্সের গোয়েন্দা বিভাগের কনস্টেবল ছিলেন তিনি। ৯ জানুয়ারি রাতে খিদিরপুর ডকের তিন নম্বর গেট এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন বিষ্ণুবাবু। পর দিন ওই গেটের কাছ একটি শেডের মধ্য থেকে তাঁর জুতো, ব্যাগ ও সাইকেল উদ্ধার হয়। তিনি অফিসে না আসায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয় দক্ষিণ বন্দর থানায়। বিষ্ণুবাবুর নিখোঁজ হওয়ার খবরে আলিপুরদুয়ারের শামুকতলার কার্জিপাড়া থেকে কলকাতায় পৌঁছন তাঁর পরিবারের সদস্যেরা। পাঁচ দিন পরে বন্দর এলাকার চার নম্বর গেটের কাছে গঙ্গায় বিষ্ণুবাবুর দেহ ভেসে ওঠে। ময়না তদন্তে পুলিশ জানতে পারে ঘুমের মধ্যে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে তাঁকে। এর পরেই ওই জওয়ানের পরিবার থেকে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। জওয়ানের নিখোঁজ হওয়ার পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ কুকুর নিয়ে গেলে সেগুলিও ওই শেড থেকে জলের দিকে যায়। তবে তার পরেই খেই হারিয়ে ফেলে। ১৯৯৭ সাল থেকে সিআইএসএফ-এ চাকরি করতেন বিষ্ণুবাবু। তিন বছর আগে খিদিরপুরে বদলি করা হয়েছিল তাঁকে।
বন্দর এলাকায় সুভাষনগরের ব্রুক লেনে থাকতেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, ওই এলাকা মূলত সিআইএসএফ-এর অধীন।

লালবাজার সূত্রে খবর, ওই ঘটনার পরে যৌথ ভাবে তদন্ত শুরু করে দক্ষিণ বন্দর থানা এবং বন্দর বিভাগের বিশেষ তদন্তকারী শাখা। কিন্তু তদন্তে কোন অগ্রগতি না হওয়ায় তদন্তভার নতুন করে তুলে দেওয়া হয় লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের হাতে। কিন্তু তদন্তের কোনও অগ্রগতি হল না কেন?

পুলিশ সূত্রের খবর, ৯ জানুয়ারি রাতে কর্মরত ওই বাহিনীর সকলকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। খিদিরপুর ডকের ওই এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন আট জন সিআইএসএফ জওয়ান। এ ছাড়াও ছিলেন সিআইএসএফের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মী বিষ্ণুবাবু। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, জওয়ানেরা ছাড়াও ওই রাতে বেশ কয়েকটি ট্রেলার বন্দরে এসেছিল মাল খালাস করতে। শ্রমিকেরা ছাড়াও ট্রেলারগুলিতে ছিল চালক এবং খালাসি। তবে চালক ও খালাসি ছাড়া খিদিরপুর ডকের তিন নম্বরে কে কে ভিতরে প্রবেশ করেছিল তার কোনও তালিকা বন্দরের নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে নেই বলে দাবি পুলিশের। তাতেই তদন্ত ব্যাহত হচ্ছে বলে দাবি লালবাজারের।

তদন্তকারীদের দাবি, ওই জওয়ান থেকে শুরু করে ডকের গেটে নথিভুক্ত থাকা ট্রেলারের চালক ও খালাসিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জেরা করা হয়েছে ওই দিন সকালে বন্দরে প্রবেশ করা বহিরাগতদেরও। কিন্তু তাঁরা তদন্তে কোনও দিশা দেখাতে পারেননি। তবে পুলিশের দাবি, বন্দরে যাতায়াত আছে এমন কেউ ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। যাঁরা বিনা বাধায় ওই এলাকায় ঢুকতে পারেন।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ঘটনার রাতে নিরাপত্তারক্ষীরা ঠিক মতো কাজ করছেন কি না, তা দেখভাল করার কথা ছিল এক জন সুপারভাইজারের। কিন্তু পুলিশের দাবি, ওই রাতে তিনি তিন নম্বর ডকের কাছে বিষ্ণুর খোঁজ নিতে যাননি। দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও সুপারভাইজার কেন সেখানে গেলেন না জানতে চাইলে তিনি জানান, কিছুটা এলাকা ঘুরে দেখার পরে অস্বাভাবিক কিছু নজরে না পড়ায় ৩ নম্বর ডকের দিকে যাননি তিনি।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, রাত বারোটার কিছু আগে বিষ্ণুবাবু সিআইএসএফের অফিসে শেষ বার ফোনে কথা বলেছিলেন। এর পরে তাঁর ফোন বেজে গেলেও কেউ তা ধরেননি। তদন্তকারীদের অনুমান, এর পরেই ঘুমন্ত অবস্থায় খুন করা হয় ওই জওয়ানকে। পরে দেহটি কিছু দূরে জলে ফেলে দেওয়া হয়। আর তার থেকেই পুলিশের একাংশের প্রশ্ন, বন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক জওয়ান খুন হল কেউ তা দেখল না, তা খুব অস্বাভাবিক। বিষ্ণুবাবুর স্ত্রী তাপসীদেবীর অভিযোগ, সকলেই খুনিদের ধরার ব্যপারে আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু চার মাস পরেও খুনের কিনারা করতে পারেনি কেউ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE