অদূরদর্শিতা: একাধিক বিভাগে এ ভাবেই পড়ে আছে শয্যা। নিজস্ব চিত্র
উদ্বোধনের বাকি তিন দিন। অথচ ওই বিভাগের জন্য এখনও কোনও চিকিৎসকেরই ব্যবস্থা করা হয়নি। নেই বিশেষ প্রশিক্ষিত নার্স বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মীও। তা হলে কী ভাবে পরিষেবা মিলবে? জানা নেই কর্তৃপক্ষের। এই অবস্থাতেই সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উদ্বোধন হতে চলেছে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ।
ইতিমধ্যেই ওই হাসপাতালে বছর কয়েক তালাবন্ধ পাঁচ শয্যার পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিকু)-টি! সেখানেও কর্মীর অভাবই অন্যতম কারণ। তা হলে কী ভাবে একই ‘ভুল’ করে ফের আর একটি বিভাগের উদ্বোধন হচ্ছে? সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি হাসপাতালের কর্তারা। এক কর্তার কথায়, ‘‘বিভাগ বাড়ানোর এই সিদ্ধান্তগুলি স্বাস্থ্য ভবন থেকেই হয়। কাগজে-কলমে পরিষেবা বাড়াতে গিয়ে রোগীদেরই বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। দূরদর্শিতার অভাবে কী ভাবে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে একাধিক ওয়ার্ড অকেজো হয়ে পড়ে থাকছে, এই হাসপাতাল এখন তারই এক অন্যতম নজির।’’।
১২টি আধুনিক শয্যা। একাধিক ভেন্টিলেটর, ডিফিব্রিলেটর, সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন-সহ ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) সব যন্ত্র চলে এসেছে বছরখানেক আগেই। সে সব নিয়ে নতুন সিসিইউ খুলতে সেজেগুজে তৈরি সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, ওই হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নত করতে যে দু’শো কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, তারই একটি অংশ এই ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে সাগর দত্ত স্টেট জেনারেলকে মেডিক্যাল কলেজে উন্নীত করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। যদিও তার পরে বারবার পঠনপাঠন এবং পরিষেবার পরিকাঠামোর অভাব নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য ভবনকে। ৫০০টি শয্যার অনুমোদন রয়েছে। তার মধ্যে ২২৫টি শয্যা এখনও শুরুই করা যায়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, কেনার পরেও পড়ে রয়েছে শয্যাগুলি। কর্মীর অভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বাকি ২২৫টি শয্যা শুরু করতে প্রতি শিফ্টে ২২ জন করে তিনটি শিফ্টে মোট ৬৬ জন নার্স, কমপক্ষে ৩০ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী প্রয়োজন। চিকিৎসকের অভাব তো আছেই।
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, স্বাস্থ্য দফতরের কাছে সাগর দত্ত বরাবরই দুয়োরানি। হাসপাতালে প্রয়োজন ৩৫ জন সিনিয়র রেসিডেন্ট মেডিক্যাল অফিসারের। এক জনও নেই। ফলে এই অবস্থায় নতুন বিভাগের উদ্বোধন করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, ১২ শয্যার সিসিইউ শুরু করতে প্রয়োজন দু’মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আট জন চিকিৎসক, ১২ জন নার্স এবং ১২ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। এই ঘাটতি পূরণ হবে কী ভাবে, সেই চিন্তায় মাথায় হাত কর্তৃপক্ষের। ডেপুটি সুপার পার্থ দে বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে সিসিইউ শুরু করতে হবে। কিন্তু এর পরে কী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন করবেন না। আমরা নিয়মমাফিক ডাক্তার, নার্স ও কর্মী চেয়ে আবেদন পাঠাই। এখনও কোনও সাড়া মেলেনি।’’
স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য জানিয়ে দেন, এ ব্যাপারে যা বলার স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলবেন। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস-এর জবাব দেননি। এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। তাঁদের আশঙ্কা, পরিষেবায় সমস্যা হলে কোপ পড়বে ডাক্তারদের উপরে। অথচ কী ভাবে পরিষেবা দেওয়া হবে সে নিয়ে দায় এড়ানো শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy