Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

দমকলের ছাড়পত্র আবার কী, প্রশ্ন বজরংবলী বাজারে

সোমবার বজরংবলীর যে গুদামে গ্যাস সিলিন্ডার লিক করেছিল, সেখানকার অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে গিয়ে এমন তথ্যই উঠে এসেছে দমকল দফতরের হাতে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৯
Share: Save:

বিভিন্ন কারখানাই ঠাসা থাকে দাহ্য বস্তুতে। কিন্তু প্রায় সত্তর বছরের পুরনো বজরংবলী লোহা বাজারে বেশির ভাগ গুদাম ও কারখানারই দমকলের কোনও ছাড়পত্র নেই।

সোমবার বজরংবলীর যে গুদামে গ্যাস সিলিন্ডার লিক করেছিল, সেখানকার অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে গিয়ে এমন তথ্যই উঠে এসেছে দমকল দফতরের হাতে। এ বার তাই দমকল কর্তৃপক্ষ এক দিকে যেমন অগ্নি-সুরক্ষার ছাড়পত্র ছাড়া ব্যবসা চালানোর জন্য ওই গুদামের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন, তেমনই বাকি গুদাম ও কারখানাগুলিতেও তল্লাশি চালানো হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

কিন্তু প্রশ্ন হল, দমকলের ছাড়পত্র ছাড়া এত দিন ধরে কী ভাবে চলল ওই লোহা বাজার? ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, স্রেফ পুরসভার ট্রেড লাইসেন্স দিয়েই তাঁরা কারখানা ও গুদাম চালান। এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘দমকলের ছাড়পত্রও যে লাগে, সেটা এই প্রথম শুনছি।’’ এত দিন ধরে দমকলের নজরে বিষয়টি আসেনি কেন? দমকলের এক কর্তা বলেন, ‘‘হাওড়া জুড়ে সব কারখানা খতিয়ে দেখার মতো পরিকাঠামো আগে ছিল না। তবে এখন সেই পরিস্থিতি বদলেছে। আর বিষয়টি যখন জানা গিয়েছে, তখন এ বার কড়া ব্যবস্থাই নেওয়া হবে।’’

এ দিন বজরংবলীর ওই গুদামে গিয়ে দেখা গেল, ভিতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে লোহার পাত, রড। তার পাশেই প়ড়ে রয়েছে চারটি বিশাল আকৃতির সিলিন্ডার। মরচে ধরা ওই সিলিন্ডারের দু’টিতে বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। ভিতরে জমেছে মাটি। বাকি দু’টির নলের মুখ অবশ্য এখনও বন্ধ। তবে একটি সিলিন্ডারের গায়ে লেখা রয়েছে ‘এইচ এফ সি’। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, সেটির মানে ‘হিন্দুস্থান ফার্টিলাইজার কর্পোরেশন’। হলদিয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের ওই সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। সেখান থেকেই স্থানীয় এক ব্যবসায়ী সিলিন্ডারগুলি কিনে এনে বজরংবলীর ওই গুদামে রেখেছিলেন।

পুলিশ জানায়, ওই গুদামের দুই মালিক এবং যিনি সিলিন্ডারগুলি রেখেছিলেন, এই তিন জনের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর মামলা দায়ের হয়েছে। তিন জনের খোঁজেই তল্লাশি চলছে। তদন্তকারীরা জানান, ওই তিন জনকে পাওয়া গেলে তবেই জানা যাবে, কোথা থেকে কী ভাবে সিলিন্ডার কেনা হয়েছিল এব‌ং তাতে কী গ্যাস ছিল। তবে যাঁর গুদামে সিলিন্ডারগুলি রাখা হয়েছিল, তিনি নির্দোষ বলেই দাবি করছেন বজরংবলী মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরা। সংগঠনের সভাপতি রামবাহাদুর দুবে বলেন, ‘‘কত লোকই তো ছাঁট লোহা কিনে তা ভাড়ার গুদামে রেখে দেন। সে ভাবেই সিলিন্ডারগুলি রাখা হয়েছিল। ভিতরে গ্যাস আছে জেনে নিশ্চয়ই মালিক সেগুলি রাখেননি।’’

অন্য দিকে, গ্যাস-আতঙ্ক এখনও পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি বেলুড়ের লালাবাবু সায়র রোডের বাসিন্দারা। বুধবার সকালে হাওড়া স্বাস্থ্য দফতরের উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা এলাকায় যান। সেখানে তাঁরা এলাকাবাসীর শারীরিক সমস্যা-সহ বিভিন্ন অভিযোগের কথা শোনেন। তার পরে এলাকারই একটি মন্দিরের চাতালে কিছু ক্ষণের জন্য ক্যাম্প তৈরি করেন চিকি‌ৎসকেরা।

এ দিন সকালেও এলাকার বেশ কয়েক জন শারীরিক কষ্ট হওয়ায় জায়সবাল হাসপাতালে গেলে তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের দাবি, চিকিৎসক ও নার্সরা তাঁদের অসুস্থতাকে ‘নাটক’ বলেছেন। স্বাস্থ্য-আধিকারিকদের কাছেও তাঁরা অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে হাসপাতালের বক্তব্য, গ্যাসের প্রভাবে দু’দিন পরেও অসুস্থ বোধ করার কথা নয়। সেটাই বলা হয়েছিল। দুর্ব্যবহার করা হয়নি। সব শুনে ওই আধিকারিকেরাও হাসপাতালকে খারাপ ব্যবহার করতে বারণ করেছেন। তাঁরা জানান, এলাকায় আগামী কয়েক দিন ধরে স্বাস্থ্যকর্মীরা ক্যাম্প করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE