Advertisement
০৫ মে ২০২৪

কেউ কিছুই টের পেল না! স্তম্ভিত মা

শনিবার সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল ছেলে। ফিরল ৩৬ ঘণ্টা পরে। তবে পায়ে হেঁটে নয়, শববাহী গাড়িতে। রবিবার রাত সাড়ে ন’টায় মুদিয়ালির বাড়িতে আবেশের দেহ এসে পৌঁছনোর পরেই ভিড় ভেঙে পড়ে আত্মীয়-প্রতিবেশীদের।

শূন্য দৃষ্টি পুত্রহারা মায়ের। সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

শূন্য দৃষ্টি পুত্রহারা মায়ের। সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৬ ০৩:১৬
Share: Save:

শনিবার সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল ছেলে। ফিরল ৩৬ ঘণ্টা পরে। তবে পায়ে হেঁটে নয়, শববাহী গাড়িতে।

রবিবার রাত সাড়ে ন’টায় মুদিয়ালির বাড়িতে আবেশের দেহ এসে পৌঁছনোর পরেই ভিড় ভেঙে পড়ে আত্মীয়-প্রতিবেশীদের। স্ট্রেচারে করে দেহ নামাতেই স্তব্ধ হয়ে সামনে বসে পড়েন বালিগঞ্জের সানি পার্কে মৃত কিশোর আবেশ দাশগুপ্তর দিদা, কৃষ্ণা পাল। সেখান থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় কাছেই কৃষ্ণা পালের বাড়িতে। সেখানে ছিলেন আবেশের মা রিমঝিম দাশগুপ্ত। ছেলের দেহ জড়িয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি।

সকাল থেকেই খুলে ফেলা হয়েছিল বাড়ির টেলিভিশনের কেব্‌ল সংযোগ। লুকিয়ে রাখা হয় খবরের কাগজ। আবেশের ৮৩ বছরের ঠাকুরমার কাছ থেকে নাতির মৃত্যুসংবাদ এ ভাবেই আড়াল করে রাখা হয় সারা দিন। মাস পাঁচেক আগেই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে আবেশের বাবার। সেই শোকে শয্যাশায়ী ছিলেন তাঁর মা, অর্থাৎ আবেশের ঠাকুমা। সন্ধের পরে অবশ্য শেষরক্ষা হয়নি। দুঃসংবাদ শোনার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।

আবেশের মা সকাল থেকেই কৃষ্ণা পালের ফ্ল্যাটে ছিলেন। সকালে ঘুমের ওষুধ খেয়ে কিছু ক্ষণ বিশ্রাম নেন। কৃষ্ণাদেবী জানান, শনিবার সন্ধেয় খবর পাওয়ার পরেই দক্ষিণ কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে ছুটে যান তাঁরা। তত ক্ষণে আবেশকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

এ দিন দুপুরে সাংবাদিক বৈঠকে রিমঝিমদেবী দাবি করেন, প্রকাশ্যে একটি ছেলে নৃশংস ভাবে খুন হওয়ার পরে গোটা দিন কেটে গিয়েছে, তবু কেউ ধরা পড়েনি। এটা দুর্ভাগ্যজনক। তিনি জানান, শনিবার বাড়ি থেকে দুধ খেয়ে বেরিয়েছিল আবেশ। জানিয়েছিল, সানি পার্কে এক বান্ধবীর জন্মদিন, বন্ধুরা পার্টিতে যাচ্ছে। সেই বান্ধবীর সঙ্গে মাসখানেক আগেই আবেশের পরিচয় হয় তার ছোটবেলার বন্ধু, এক ব্যবসায়ীর ছেলের মাধ্যমে। কৃষ্ণাদেবী বলেন, ‘‘পরে জানলাম, যে বান্ধবীর জন্মদিনে আবেশ গিয়েছিল, তার ঠাকুরমা দিন কয়েক আগেই মারা গিয়েছেন। সে বাড়িতে এমন হুল্লোড় হয় কী করে!’’

রিমঝিমদেবী জানান, যে ক’জন পার্টিতে ছিল, তাদের সকলের নাম পুলিশের কাছে আছে। তাদের কেউই এখনও জানাতে পারেনি, ঠিক কী ভাবে মারা গিয়েছে আবেশ। অন্তত এমনটাই জানিয়েছে পুলিশ। তবে রিমঝিমদেবীর প্রশ্ন, ‘‘দিনভর একসঙ্গে ঘুরেছে, একসঙ্গে হুল্লোড় করেছে লেখক অমিত চৌধুরীর বাড়িতে। এর মধ্যে একটা এত বড় ঘটনা সকলের চোখ এড়িয়ে যায় কী করে?’’

পরিবারের দাবি, ভাল ছেলে হিসেবে সুনাম ছিল আবেশের। পার্কস্ট্রিটের একটি কনভেন্ট স্কুলের ছাত্র আবেশ পড়াশোনায় ভাল ফল করত ছোটবেলা থেকেই। ছবি আঁকতে ভালবাসত, গান শুনত। খেলা দেখার নেশা ছিল তার। আত্মীয়রা জানালেন, নম্র-ভদ্র স্বভাবের আবেশকে সবাই ভালবাসতেন মিষ্টি স্বভাবের জন্য। একই কথা প্রতিবেশীদেরও। কোনও দিনই মাত্রাছাড়া আচরণ করতে দেখা যায়নি। কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিল বলেও জানেন না কেউ। তাই এমন মৃত্যুকে ‘নিছক দুর্ঘটনা’ মানতে একেবারেই নারাজ পরিবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abesh mother
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE