হেথা নয়, হেথা নয় অন্য কোথা, অন্য কোনও খানে...!
চেনা জায়গা থেকে বেরিয়ে, বেশ কিছুটা দূরে গিয়ে তবে হাতে হাত রাখা। সানাই বাজবে কোনও সমুদ্রের ধারে অথবা পাহাড়ের কোলে। এ ভাবেই নতুন জীবন শুরুর প্রথম পদক্ষেপ করছেন ‘সেলিব্রিটি’ নন, এমন অনেকেও।
সম্প্রতি বিরুষ্কার রূপকথা তুল্য বিবাহ আসর নিয়ে হইচই হয়েছে অনেক। তবে সাত পাকে বাঁধা পড়তে ইতালি পাড়ি না দিতে পারলেও সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালিও এখন নতুন জীবনের প্রথম পদক্ষেপ করতে বন্ধু-আত্মীয়দের সঙ্গে নিয়ে রওনা হচ্ছেন কখনও দিঘা-মন্দারমণি, কখনও রায়চক-ডায়মন্ড হারবার, কখনও আবার আকাশ পথে সমুদ্র পেরিয়ে সোজা ব্যাঙ্কক অথবা পাহাড়ি মেজাজে দার্জিলিং-গ্যাংটক। নবদম্পতির জীবনের অন্যতম বিশেষ তিন-চারটে দিন নানা রঙে সাজিয়ে দিয়ে তৈরি হয়েছে নানা রিসর্টে রকমারি প্যাকেজও।
স্বপ্নের মতো আবহে সাত পাকে বাঁধা পড়ার এই অভিনব আয়োজনের পোশাকি নামই ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’। শুধু বাছাই করা আত্মীয়-বন্ধু নয়, নিজের শহর থেকে নিয়ে যাওয়া হয় পছন্দের ফোটোগ্রাফার থেকে মেক-আপ আর্টিস্টকেও।
সব শুনে মনে হতেই পারে, বাড়ির লোকের অনেক ঝক্কি। বিয়ের আয়োজন করতে বুঝি ছুটতে হবে এ বার হিল্লি-দিল্লি। কিন্তু ‘ওয়েডিং প্ল্যানার’ নামে এক ধরনের মুশকিল আসানেরা এখন রীতিমতো জনপ্রিয় এই শহরেও। শুধু ফোন ঘুরিয়ে যোগাযোগ করলেই হল। গন্তব্য গ্যাংটক হোক বা গোয়া, নানা দামে রকমারি পরিষেবা-সহ প্যাকেজের সন্ধান নিয়ে দোরগোড়ায় হাজির হবেন তাঁরা।
বালিগঞ্জের রাজীব মহাপাত্র কিছু দিন আগেই শ’খানেক অতিথিকে নিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়ে এনেছেন ব্যাঙ্কক থেকে। তিনি জানালেন, দিন কয়েক আগেও এমন আয়োজনের কথা ভাবলেই হাজারো ঝক্কির কথা মনে আসত। ‘‘নিজেদের বাগানবাড়িতে গিয়েও মেয়ের বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবিনি তাই। মেয়ের বায়নায় খোঁজ-খবর নিতে শুরু করি। দেখলাম বেশ সহজ ব্যাপার।’’
শহরের এক ওয়েডিং প্ল্যানিং সংস্থার তরফে অমিত গঙ্গোপাধ্যায় এবং শুভাশিস চক্রবর্তী জানালেন, বিয়ের কার্ড, হোটেল বুকিং থেকে শুরু করে যাতায়াত-খাওয়াদাওয়া— বিয়েবাড়ির সব আয়োজনই করে দেন তাঁরা। সে বিয়ে মালয়েশিয়াতেই হোক বা মন্দারমণি, যে কোনও জায়গায় ক্লায়েন্টের নানা আবদার রাখতে বিয়েবাড়ির লোকজনের সঙ্গে যান তাঁদের সংস্থার কয়েক জন করে কর্মী।
তবে খরচ কি অনেক? অমিতবাবু জানান, যার যেমন সাধ্য এবং খরচের ইচ্ছা, সে কথা মাথায় রেখেই সাজিয়ে তোলা হয় এক-একটি বিয়ের প্যাকেজ। মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুরের মতো বিদেশি ডেস্টিনেশনে গিয়ে বেশি টাকা খরচ না করার হলে একই ঢঙে স্বপ্ন-বিয়ের আয়োজন করে দেওয়া হয় ঘরের কাছে দিঘা-ডায়মন্ড হারবারে।
শহরের আর এক ওয়েডিং প্ল্যানার রিচিক দেবনাথ জানালেন, বিদেশে গিয়ে একশো জনের জন্য চার দিনের পার্টিতে ৪০-৫০ লক্ষ টাকা খরচ না করে এ শহরের অনেকেই পছন্দ করছেন আরও বেশি লোককে নিয়ে মন্দারমণির ‘বিচ ওয়েডিং’ বা গ্যাংটকে ‘মাউন্টেন ওয়েডিং’ করতে।
শহরের কাছের অধিকাংশ রিসর্ট এবং বড় হোটেলই এখন এমন সাজানো-গোজানো বিয়ের ব্যবস্থা করছে। ২০-২৫ লক্ষের প্যাকেজ যেমন হয়, তেমনই পাঁচ-সাত লক্ষ টাকার প্যাকেজেরও হদিস পাওয়া যায় শহর কলকাতা থেকে একটু দূরের কিছু হোটেলে। বিভিন্ন হোটেল-রিসর্টে হয় মাথাপিছু প্যাকেজও। অর্থাৎ, যে ক’জন যাবেন এবং যত দিন থাকবেন তার উপরে নির্ভর করে বিয়ের প্যাকেজ হয় দিন প্রতি মাথা পিছু ১৬০০ থেকে ৮০০০ টাকার মধ্যে। শহরের একেবারেই কাছে রাজারহাটের এক বিলাসবহুল রিসর্টেও গোটা শীত জুড়ে চলে ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের হইচই। নিজের পছন্দ মতো ‘চিক কান্ট্রি ওয়েডিং’, ‘দ্য বিগ ফ্যাট অর্গ্যানিক ওয়েডিং’-এর মতো কোনও একটা প্যাকেজ বেছে নেওয়া যায় নিজেদের পছন্দ মতো।
বর-কনের যেমনটা চাই, সে ভাবেই সেই রিসর্টের স্বপ্ন রাজ্যে সাজিয়ে তোলা হয় তাঁদের জন্য। রিচিক বলেন, ‘‘আমরা নির্দিষ্ট রিসর্টের সঙ্গে কথা বলে আগে থেকে ক্লায়েন্টের পছন্দমতো থিমে সাজিয়ে রাখি বিয়ের জায়গাটা। যাতে প্রতিটি পদক্ষেপেই সুন্দর ছবি ওঠে নব দম্পতির।’’
এমন ধরনের বিয়ের অনুষ্ঠানে যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আচার এখন ছবি তোলা। মেহেন্দি থেকে গায়ে হলুদ, আংটি বদল থেকে খুনসুটি— সবই ক্যামেরাবন্দি করে রাখা হয় এই স্বপ্নের মতো সাজানো বিয়েতে। এখন ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ায় বেড়েছে ‘ক্যান্ডিড’ ছবির কদরও। ক্লায়েন্টের সঙ্গে ওই চার দিন সর্বক্ষণ ঘুরে বেড়ান চিত্রগ্রাহকের দল। ওয়েডিং ফোটোগ্রাফিতে যুক্ত এক সংস্থার তরফে অর্ঘ্যনীল ঘোষ জানান, এ মরসুমে শহরের অনেকেই বিয়ের ছবি তুলতে তাঁদের ডেকেছেন বেঙ্গালুরু, ব্যাঙ্ককের বিভিন্ন রিসর্টে। আর এক ওয়েডিং ফোটোগ্রাফার অনির্বাণ ব্রহ্ম জানান, এ বছরের বিয়ের মরসুম শুরু হওয়ার পরে ইতিমধ্যেই এ শহরের নবদম্পতিদের নিয়ে বিকানের, জয়পুরে কাজ করে এসেছেন তিনি। ঘরের কাছে পুরুলিয়া এবং ওড়িশার বিভিন্ন রিসর্টেও কাজ করছে তাঁর টিম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy